অশ্লীলতা পরিহার ও শ্লীলতার চর্চা ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ

  • মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অশ্লীলতা পরিহার ও শ্লীলতার চর্চা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, ছবি: সংগৃহীত

অশ্লীলতা পরিহার ও শ্লীলতার চর্চা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, ছবি: সংগৃহীত

রমজানের ১৫তম তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ১৮ নম্বর পারা অর্থাৎ সূরা মুমিনূনের শুরু থেকে সূরা ফুরকানের ২০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। আজকের তারাবির অন্যতম একটি প্রসঙ্গ হলো- নির্লজ্জতা পরিহার। এ প্রসঙ্গে আজকে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি নির্দেশ শোনানো হবে।

১. অনুমতি ব্যতীত কেউ অন্যের ঘরে প্রবেশ করবে না, ২. পুরুষরা পরনারীর দিকে তাকাবে না, ৩. পুরুষরা সতীত্ব রক্ষা করবে, ৪. নারীরা পরপুরুষের দিকে তাকাবে না, ৫. নারীরাও সতীত্ব রক্ষা করবে ও ৬. নারীরা পরপুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।

বিজ্ঞাপন

এ বিধানগুলো থাকবে সূরা নূরের ২৭ থেকে ৩১ নম্বর পর্যন্ত আয়াতগুলোতে।

নির্লজ্জতা পরিহার আর লজ্জাশীলতার প্রচলন ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। হাদিসে আছে, লজ্জা ঈমানের একটি শাখা আরও আছে, যখন তোমার লজ্জা চলে যাবে তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। আর তাই তো শয়তান এবং শয়তানপন্থীদেরও প্রথম লক্ষ্য থাকে মানুষকে নির্লজ্জ বানানো। উন্নয়নের নামে, সভ্যতার নামে, উদারতার নামে, সাহসিকতার নামে, আধুনিকতার নামে শিক্ষার মাধ্যমে, চাকরির মাধ্যমে, স্বনির্ভরতার নামে, ব্যবসার মাধ্যমে, ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নির্লজ্জতাকে, বেহায়পনাকে, অশ্লীলতাকে সমাজে বিস্তৃত করার নিত্যনতুন ফাঁদ পাতে শয়তানগোষ্ঠী। আর নির্লজ্জতা দমনের জন্য কোরআনের সামাজিক নির্দেশনা ও পরামর্শপত্র হলো- উপরোক্ত ৬ দফা।

অনুমতি ব্যতীত অন্যের ঘরে প্রবেশের দ্বারা নির্লজ্জতা ছড়ায় এ ছাড়া আরও কয়েকটি সমস্যা আছে। যেমন- মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, মানুষের আরাম ও বিশ্রাম ব্যহত হয়। ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার সঙ্গে আরও ২টি কাজ আছে। সালাম দেওয়া এবং নিজের পরিচয় দেওয়া। এগুলো ইসলামের শেখানো সামাজিক শিষ্টাচার ও আদব। অন্যের ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব। আর বিনা অনুমতিতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করা অপরাধ ও গোনাহের কাজ। এখানে ‘অন্য’ মানে স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত যে কেউই। প্রতিবেশির ঘরে তো বিনা অনুমতিতে প্রবেশ জায়েজই নেই। এমনকি নিজের মায়ের ঘরে, সন্তানের ঘরে, ভাই-বোনের ঘরেও প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব।

নির্লজ্জতা পরিহার করে শ্লীলতার চর্চা ব্যাপক করতে কোরআনে কারিমের নির্দেশ হলো- পুরুষরা পরনারীর দিকে তাকাবে না আবার নারীরাও পরপুরুষের দিকে তাকাবে না। এটা স্বাভাবিক অবস্থার বিধান, প্রয়োজন ভিন্ন কথা। প্রয়োজনের জন্য তো অনুমতি আছেই। যেমন- বিচার, সামাজিক নিরাপত্তা, লেনদেন ইত্যাদি কাজে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করণের জন্য যদি তাকানোর প্রয়োজন হয় তখন তাকানোর অনুমতি আছে। চিকিৎসার জন্য তাকানোর প্রয়োজন হয় তখনও তাকানোর অনুমতি আছে। শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত প্রয়োজন ব্যতীত পুরুষদের জন্য পরনারীর দিকে তাকানো, নারীদের জন্য পরপুরুষের দিকে তাকানো গোনাহ। আর এ তাকানোকে বলা হয় কুদৃষ্টি।

এক হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, কুদৃষ্টি হলো শয়তানের বিষমাখা তীর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে আমি তার ঈমান সুদৃঢ় করে দেবো। সে অন্তরে ঈমানের মিষ্টি স্বাদ অনুভব করবে। আরেক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম দৃষ্টি মাফ। দ্বিতীয় দৃষ্টি গোনাহ। এর ব্যাখ্যা স্পষ্ট হয়ে যায় আরেক হাদিসে। যেখানে রাসূল (সা.) আদেশ করছেন, দৃষ্টি পড়ে গেলে তা সরিয়ে নাও। তার মানে ইচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টিও পাপ। আবার অনিচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টি ইচ্ছা করে দীর্ঘ করাও পাপ।

দেখুন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমরা নারীদের কাছে কোনো কিছু চাইবে তখন পর্দার ওপাশ থেকে চাইবে।’ –সূরা আহযাব: ৫৩

এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, হজরত উম্মে সালামা এবং মাইমুনা একদা নবীর কাছে বসা ছিলেন। তখন অন্ধ ইবনে উম্মে মাকতুম আসলেন। নবী করিম (সা.) বললেন, তোমরা দু'জন পর্দার ভেতরে যাও। উম্মে সালামা বললেন, হে রাসূল! সে তো অন্ধ! আমাদের তো দেখতে পাবে না, রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা তো অন্ধ না, তোমরা তো তাকে ঠিকই দেখতে পাবে।’ –তিরমিজি: ২৭৭৮
ইমাম তিরমিজি এ হাদিসকে ‘হাসান সহিহ’ বলেছেন।

সতীত্ব রক্ষা করা ফরজ। পুরুষের জন্য স্ত্রী এবং দাসী ব্যতীত আর নারীর জন্য স্বামী ব্যতীত অন্য কাউকে দ্বারা বা অন্য কারও মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি লাভ করা হারাম। অতএব, সমকাম, হস্তমৈথুন, যান্ত্রিক মৈথুনও হারাম। এমনকি বিবাহ ব্যতীত পারস্পরিক স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিতেও হারাম। নিজের দেহ নিজের খুশিমতো যাকে তাকে দেওয়া ইসলাম বৈধ রাখেনি, বৈধতা লাভের পদ্ধতি বিবাহ। শুধু মিলনের সম্মতি কখনও মিলনের বৈধতা দেয় না ইসলাম।

নির্লজ্জতা পরিহারের নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য পরপুরুষ থেকে আড়াল করে রাখবে। ঢেকে রাখার পরেও যা প্রকাশ পেয়ে যায় তা মাফ। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.)-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওপরের বাড়তি আবরণ। তার নাম হতে পারে বোরকা, বড় চাদর, খিমার ইত্যাদি। মূল উদ্দেশ্য- সৌন্দর্য আড়াল করা। কিন্তু ওপরের বোরকাই যদি হয় আঁটসাঁট, পাতলা স্বচ্ছ, বিচিত্র বাহারি ডিজাইনের হয় তাহলে তো উদ্দেশ্যই পণ্ড। যার কাজ ছিলো- সৌন্দর্য আড়াল করা সে নিজেই তো হয়ে গেলো সৌন্দর্যের আকর ও প্রকাশক। যার ভূমিকা ছিল বিপরীতকে বিকর্ষণ করা সে নিজেই তো বিপরীতকে আরও তীব্র গতিতে আকর্ষণ করছে। তাই বোরকা, বড় চাদর, খিমার যাই ব্যবহার করা হোক উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন নারী সৌন্দর্য ঢেকে রাখতে শতভাগ সফল হয়।