গরিবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া রমজানের শিক্ষা

  • মাহমুদা নওরিন, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গরিবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া রমজানের শিক্ষা, ছবি: সংগৃহীত

গরিবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া রমজানের শিক্ষা, ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম আর্তমানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি পূর্ণাঙ্গ ইনসাফপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইসলাম কঠোর তাগিদ দিয়েছে। রমজান মাসকে হাদিস শরীফে ‘শাহরুল মুওয়াসাতি’ বা সহানুভূতির মাস বলা হয়েছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সমগ্র মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) যখন নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেত। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতদের বাস্তব শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রমজান মাসে সদকা-খায়রাত ও বদান্যতার হাত বেশি করে প্রসারিত করতেন এবং এ মাসটিকে মহানবী (সা.) দানশীলতার ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ধনীদের বিশাল ও বিলাসবহুল সম্পত্তিতে গরিবের অধিকার রয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের অর্থ সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ -সূরা আজ জারিয়াত: ১৯

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে সে প্রকৃত ঈমানদার নয়।’ -বায়হাকি

যে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হলো না, সামাহত তথা দানশীলতা ও সহানুভূতির গুণ তৈরি হলো না, তার রোজা নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই যে ব্যক্তি মাহে রমজানে শুধু রোজা পালন করল, কিন্ত আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত আত্মত্যাগের মাধ্যমে এগিয়ে এলো না সমাজের গরিব-দুঃখীদের পাশে যে ব্যক্তি রমজান মাসের দাবি পূরণে ব্যর্থ হলো। আল্লাহ চান, প্রতিটি রোজাদার মুমিন বান্দা রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে খাদ্য-পানীয়ের অভাবে গরিব-দুঃখী লোকরা যে কত অনুভব করে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করুক। এ জন্য তাদের মধ্যে দানের অনুভূতি সৃষ্টি হোক।

সমাজের ধনী সামর্থ্যবান রোজাদার ব্যক্তি সিয়াম পালনের সঙ্গে গরিব-দুঃখী, দুস্থ, অভাবী, অনাথ, এতিম, মিসকিন এবং কপর্দকহীন পথচারীকে প্রয়োজনে অর্থ বন্টন করে দেবে। তারা ক্ষুধার্ত হলে প্রয়োজনে সেহেরি ইফতারের ব্যবস্থা করবে, এটা মাহে রমজানের সহানুভূতি প্রদর্শনের সুবর্ণ সুযোগ।

হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে এবং ওই রোজাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না, আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার হাউস (হাউসে কাওসার) থেকে এমনভাবে পান করাবেন যাতে সে জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত আর কষ্ট পাবে না। -সহিহ ইবনে খুজাইমা

সুতরাং প্রত্যেক রোজাদার মুমিনের একান্ত কর্তব্য মাহে রমজানে রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্বীয় অর্থসম্পদ দু:স্থ মানবতার সেবায় ব্যয় করা, গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহানুভূতি প্রদর্শন করা, তা হলেই রমজানের সিয়াম সাধনা সার্থক হবে।