প্রয়াত লেখক, বিশিষ্ট শিক্ষা-উদ্যোক্তা, সমাজসেবক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের লেখা ৩০টি গ্রন্থ এবার একুশের বইমেলায় একত্রে পাওয়া যাবে। এবারই সৈয়দ আবুল হোসেনের লেখা ৩০টি বই প্রথম একুশে বইমেলায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৈয়দ আবুল হোসেন ফাউন্ডেশন- এই মহতী আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে। এবং এই বইগুলোর পরিবেশক মাতৃভাষা প্রকাশক। একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের পাড়ে অবস্থিত ১২৩, ১২৪, ১২৫ নং স্টলে বইগুলো পাওয়া যাবে।
সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন একজন মননশীল ও প্রগতিশীল লেখক। সমসাময়িক ও অনুপ্রেরণাদায়ক চিন্তাভাবনা তাঁর লেখনিতে প্রতিভাত হয়েছে। তিনি দেশের রাজনীতি তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি দেশের অর্থনীতির চিত্র তাঁর লেখায় অগ্রাধিকার পেয়েছে। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনায় উদ্বুদ্ধকরণের বিষয় যেমন তাঁর লেখনিতে স্থান পেয়েছে, তেমনি অনুবাদগ্রন্থের মাধ্যমে মনীষীদের লেখার সাথে দেশের মানুষকে তিনি সম্পৃক্ত করার চেষ্টাও করেছেন। তাঁর লেখায় একদিকে যেমন সমাজ পরিবর্তনে বার্তা রয়েছে, অপরদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাও লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাঁর লেখনী সমাজ বিনির্মাণে আলোকবর্তিকা এবং চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে।
বিজ্ঞাপন
সৈয়দ আবুল হোসেন সাহেব লিখিত ও প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো: ১. স্বাধীনতার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ২. শেখ হাসিনা- সংগ্রামী জননেত্রীর প্রতিকৃতি, ৩. গণতন্ত্র, নেতৃত্ব ও উন্নয়ন, ৪. শেখ হাসিনার অসামান্য সাফল্য, ৫. বঙ্গজননী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ৬. ব্যর্থ জোট শাসন ব্যর্থ পররাষ্ট্র নীতি, ৭. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৪৯-৯৯, ৮. গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সংকট, ৯. আওয়ামী লীগের নীতি ও কৌশল-শিল্পায়ন ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ সমাবেশ, ১০. শেখ হাসিনার অক্ষয় কীর্তি পার্বত্য শান্তিচুক্তি, ১১. একুশে ফেব্রুয়ারী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১২. Memior: a Photo Album (Boao Forum for Asia), ১৩. আমি ও জবাবদিহিতা, ১৪. পবিত্র স্মৃতি অ্যালবাম, ১৫. আমার কথা, ১৬. বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু, ১৭. শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ভূমিকন্যা, ১৮. ইতিবাচকতাই আমার পাথেয়, ১৯. বিদ্যাসাগর, ২০. আমার চিঠিপত্র, ২১. প্রবচনগুচ্ছ, ২২. বঙ্গবন্ধুর ধর্মচিন্তা ও ধর্মচেতনা, ২৩. রাজপুত্র শেখ রাসেল, ২৪. আমার বাণী চিরন্তনী, ২৫. ইতিবাচক কথা, ২৬. পদ্মাসেতু সততার বিজয়গাঁথা, ২৭. আমাদের বিজয় আমাদের স্বাধীনতা, ২৮. ডাসার: পল্লিগ্রাম থেকে উপজেলা, ২৯. মহাত্মাগান্ধীর বাণী ও আমার কথা, ৩০. গৌতমবুদ্ধের বাণী ও আমার কথা।
এছাড়া, তিনি জীবনদ্দশায় আরো ৫টি বই লিখে গেছেন যা এখনো প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। বইগুলো হলো: আমার স্মৃতিকথা, আমার বক্তৃতামালা, বিশ্বের মনিষীদের চিরন্তন বাণী, আমার গ্রন্থাবলী, My point: Views I hold and positivity my pathway.
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, সৈয়দ আবুল হোসেন ২০১৪ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে পড়াশুনা ও লেখা-লেখি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি মনে করতেন, ‘লেখার ফল বই; বই জ্ঞানের সংরক্ষণাগার। বই প্রাগৈতিহাসিক কালের সঙ্গে বর্তমান এবং সুদূর ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ। এমন অবিচ্ছিন্ন সেতুবন্ধ আর হয় না। পৃথিবীর সব সেতু হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে, সব সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে, কিন্তু বই, বইয়ের মাধ্যমে রচিত যুগ পরস্পরা সেতুটি কখনো নষ্ট হবে না, ধ্বংস করার সাধ্য কারো নেই’।
দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসে আছেন পাউরুটি নিয়ে। তবে এটি যেমন তেমন রুটি নয় একেকটা রুটির ওজন ১ কেজির উপরে। দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও বেশ মজাদার।
নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া হাটে প্রতি সপ্তাহের শুধু রোববার দেখা মিলবে এমন অদ্ভুত রুটির। আশেপাশের মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে এই ঐতিহ্যবাহী নৌকারুটি। কেউবা হাটের মধ্যেই খাচ্ছেন আবার কেউবা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাপ-দাদার হাত ধরে হাটে এসে এই রুটি খেয়েছেন অনেকেই, এখনো হাটে এলে রুটির সাথে মিষ্টি খান মানুষ । এক সময় প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেত এই রুটি কিন্তু কালের বিবর্তনে শুধুমাত্র রোববারে তেবাড়িয়া হাটেই দেখা মিলে এই রুটির। বাপ দাদার শেখানো রুটি ও মিষ্টি বিক্রি ব্যবসা করে যাচ্ছেন এখানকার দোকানিরা।
একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, ভোর থেকেই শুরু হয় তেবাড়িয়ার হাট, প্রতি রোববারের হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে আগেরদিন থেকে প্রস্তুত করা হয় এক কেজি ওজনের এই নৌকা রুটি। বাবা-দাদাদের কাছ থেকে শেখা এই পেশা আর ছাড়তে পারেনি অনেকেই আর এভাবেই চলে সংসার। তারা জানায়,আগের মত আর বিক্রি হয়না ফলে এখন সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
আরিফ নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ছোটবেলায় বাবার সাথে এই হাটে অনেক এসেছি এখন একা একা আসি এই হাটে বন্ধুদের নিয়ে। রুটির পাশাপাশি এই হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র পাওয়া যায়। ১ কেজি ওজনের এই রুটি খেতে বেশ সুস্বাদু ও মজাদার।
তেবাড়িয়া এলাকার বৃদ্ধ শামসুল হক ( ৬০) বলেন, এই নৌকা রুটি অনেক আগে থেকে এ হাটে নিয়ে আসে দোকানিরা। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই বাবার হাত ধরে হাটে এসে এই রুটি খেয়েছি। এ হাটে অনেক বয়স্ক বিক্রেতা আছে যারা আমাকে চিনে। কতদিন এই রুটি থাকবে জানিনা যতদিন বেঁচে আছি নিয়মিত খাবো।
আধুনিক ফাস্টফুডের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো, একদিন হয়তো বিলীন হয়ে যাবে সেদিন আর বেশি দূরে নয় তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই ফুল মানুষকে মুগ্ধ করে এসেছে। ফুলের রঙ, সৌন্দর্য, গন্ধ মানুষকে করেছে আকৃষ্ট। ফুল শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গোলাপ, বেলি, রজনীগন্ধা ইত্যাদি নানা সুন্দর সুগন্ধযুক্ত ফুল। এসব ফুলের ঘ্রাণ পাগল করে আমাদের। নানা আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় ফুল। প্রিয়জনকেও ফুল উপহার দেওয়ার প্রচলন আমাদের মাঝে অনেক পুরোনো। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু ফুল রয়েছে, যার গন্ধ অতি জঘন্য। এসব ফুলের সৌন্দর্য দেখে কাছে গেলে নিজ থেকেই আপনি হাত দিয়ে নাক চেপে ধরতে বাধ্য হবেন। কারণ এসব ফুলের গন্ধে নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসতে পারে আপনার। চলুন আজকে জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গন্ধযুক্ত এমন একটি ফুল সম্পর্কে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গন্ধময় এ ফুলটির নাম অ্যামোরফোফালাস টাইটানিয়াম। এই ফুলটি ‘লাশ ফুল’ (Corpse flower) নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
সিডনির একটি গ্রিনহাউসে জন্মানো এই ফুলটিকে দেখতে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য দর্শনার্থী। অদ্ভুত এই ফুল থেকে মৃত পচনশীল মানবদেহের তীব্র গন্ধ বের হয়। ফুলের কাছে আসলে আপনার মনে হবে আপনি কোনো পঁচা গলা লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এজন্যই এটি ‘লাশ ফুল’ নামে পরিচিত। দর্শনার্থীরা এটাকে কেউ কেউ পঁচা মাংসের গন্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আবার অনেকেই পঁচা খাবার, ঘামযুক্ত মোজা বা এমনকি রসুনের গন্ধ বলেও উল্লেখ করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার বনাঞ্চল থেকে এসেছে এই উদ্ভিদটি। সিডনির রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের কর্মীরা আদর করে এর নাম দিয়েছেন ‘পুট্রিসিয়া’। পুট্রিসিয়ার প্রভাবশালী ‘ভক্তরা’ নিজেদের পরিচয় দেন ‘পুট্রিসিয়ান’ হিসেবে। দর্শকদের জন্য সেখানে লাল গালিচা ও ভেলভেট দড়ি দিয়ে সজ্জিত স্থানে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই উদ্ভিদের ফুল ফোটার প্রক্রিয়া প্রাকৃতিকভাবে সাত থেকে দশ বছর সময় নেয়। ডিসেম্বরে যখন এর ফুল দেখা যায় তখন এর উচ্চতা ছিল মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি)। কিন্তু পররবর্তীতে ফুলের স্পাইকটি ধীরে ধীরে খোলার সাথে সাথে এটি ১.৬ মিটার (৫ ফুট ৩) লম্বা হয়েছে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ফুলের তীব্র পঁচা গন্ধ আশেপাশের এলাকার ছড়িয়ে থাকে। তবে ভালো খবর হলো, এই ফুলটি চার থেকে পাঁচ বছর পর মাত্র একবার ফোটে এবং ফোটার পর ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তাজা থাকে!
তবে মজার বিষয় হলো রয়্যাল সিডনি বোটানিক গার্ডেনে এই বিরল প্রজাতির ফুলটি বিশ্বব্যাপী প্রায় এক হাজার অনুরাগীকে আকৃষ্ট করেছে। তীব্র পঁচা গন্ধ সত্ত্বে গ্রিন হাউজে জড়ো হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি, ২০২৫) । অবশেষে দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
গ্রিন হাউজের মুখপাত্র সোফি ড্যানিয়েল বলেন, তীব্র গন্ধের কারণে দর্শনার্থীদের জন্য বমির ব্যাগ রাখা উচিত কিনা তা নিয়ে আমরা প্রথম দিকে আলোচনা করেছিলাম। তবে এতে কারও ক্ষতি হয়েছে বলে শুনিনি।
লাশ ফুল মাত্র এক থেকে তিন দিন ফোটে, যদিও এর জন্য এক দশক সময় লাগে।
মিস ড্যানিয়েল বলেন, এগুলো খুব কমই খোলে, তাই খুব কমই ফুল ফোটে। কেননা, এই ফুলের প্রস্ফুটন একটি বিরল ঘটনা। কারণ, প্রস্ফুটনের জন্য পরিপূর্ণতা পেতে এই ফুলের সময় লাগে ৫ থেকে ১০ বছর।
তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীরা ফুলের কাছাকাছি যেতে চেয়েছে, কেউ কেউ ফুলের সামনে সেলফি তুলেছে, কেউ আবার ঝুঁকে ঘ্রাণ নিয়েছে। এক তরুণী পুট্রিসিয়ার সামনে মাথানত করে অভিবাদন জানান।
দিগন্ত জোড়া সবুজের বুক চিরে টলটলে পানির অপ্রশস্ত খাল। সে খালে ইঞ্জিনবোটের ফটফট শোনা যায় সারা দিনমান। যেনো সে শব্দেই জেগে থাকে আড়িয়ল বিল। কিন্তু কৃত্রিম সে শব্দকে উপেক্ষা করে এখানে ঋতুভিত্তিক সৌন্দর্য ফুটে থাকে। প্রকৃতি ধরা দেয় তার আপন চেহারায়। বিলের শো-শো বাতাস , শীতে পত্র-পল্লবহীন গাছেও পাখিদের কিচিরমিচির আর আর্দ্র মাটির বুকে সবুজে আবরণ প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার সাধ জাগায়। বিল জুড়ে জালের মতো ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট খাল। শীতে এই খালগুলোই বিলের আশীর্বাদ। বর্ষায় খালগুলো মিইয়ে যায় পানির তোড়ে। তখন বিল জুড়ে থৈ থৈ জল। কিন্তু শীত আর শুষ্ক মৌসুমে এই খালই ভরসা। খালই বিলের প্রাণ।
মুন্সিগঞ্জ জেলার ৯৪৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়েই এই আড়িয়ল বিল। যার দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটারের বেশি এবং প্রস্থ প্রায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। একদিকে পদ্মা নদী অন্যদিকে ধলেশ্বরী। তারই মাঝখানে এক বিপুল অবভূমি এই বিল। আড়িয়ল বিল। দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন জলাশয়। বর্ষায় বিশাল এই বিল পানিতে থাকে টইটুম্বর। শীতকালে এটি হয়ে ওঠে শীর্ণ-শুষ্ক। বিল রূপ নেয় ফসলের মাঠে। যতদূর দেখা যায় দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ শস্য খেত। প্রধানত ধান, সরিষা আর কুমড়ার চাষ হয় এই বিলে।
আড়িয়ল বিলের মাঠ থেকেই তোলা হয় বিপুলাকায় সব কুমড়া। বলা হয়, এই বিলের কুমড়ার আকারই সবচেয়ে বড়। এমনও শোনা গেছে একেকটি কুমড়ার ওজন ৪ মণেরও বেশি বেশি হয় এখানে।
বর্ষায় বিল ভরা মাছ , শুষ্ক মৌসুমে কুমড়া, শসা, আর নানা জাতের সবজি। আর হয় ধানের চাষ। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক ভাণ্ডার এই বিল। প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট আড়িয়ল বিলে ভাগ্য গড়ে, জীবিকা চলে এখানকার লক্ষ মানুষের।
এই যেমন মোহাম্মদ সেলিম। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়ল বিলে চাষ ফেলেন তিনি। কুমড়ার চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন। সন্তানদের ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে এখনো বিলের কাদা গায়ে মেখে দিনভর খাটেন তিনি।
মোহাম্মদ সেলিমের মত আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম। বংশ পরম্পরায় এ বিলের পানি ও মাটির সাথে তার সকল সখ্য। এখানে চাষ করে অভাব ঘুচেছে সংসারে। বিদেশ পাঠিয়েছেন দুই সন্তান।
সেলিম ও নূরুল ইসলামের মতো আরও অনেক কৃষকের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন প্রত্যেকের ভাগ্য বদলের পিছনে আছে প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট আড়িয়ল বিল। বিশেষ করে এ বিলে চাষ করা কুমড়াই এসব মানুষের ভাগ্য বদলের রহস্য।
মো. সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, "বোঝার বয়স থেকে আড়িয়াল বিলে খাইটা খাই। দাদা করে গেছেন , বাবা করেছেন, এখন আমি করি। সেই একই কাজ- কুমড়ার চাষ করি। এবারও আল্লাহর রহমতে ২-৩ লাখ টাকার কুমড়া বেচমু। লাউ আছে কিছু জমিতে। সেগুলো উঠামু।"
এবার একটু দাম কম এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, "দিন দিন ফলনও কমতেছে। তবে তাও যা ফলে সংসার চইলা যায়। ছেলে মেয়ে বড় হইছে। যা হয় দু:খ নাই । ভালোই চলছে।"
নুরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে এ বিলে পইড়া আছি। "এবার কানি পাঁচেক জমিন চাষ করছি ইরি ধান। ৪-৫শ মন ধান আল্লাহ দিতে পারে। কুমড়া বেচমু কয়েক লাখ টাকার । আমার পরিবারে ছেলে মেয়ে আমরা দুইজন নাতি নাতনি মিলে ১২ জন। সবার খরচ এই চাষ থেকে চলে। পোলারা দেশের বাইরে গেছে । আল্লাহ দিলে ভালোই চলে।
আরেক কৃষক আব্দুল গনি জানালেন, এই বিলে তাদের ভাগ্য বদলেছে । "বর্ষায় মাছ, শুষ্ক মৌসুমে ধান, সরিষা, কুমড়ার চাষ আমাদের ভাগ্য বদল করেছে ।"
কয়েক লাখ মানুষ এই বিলে খেটে বাচে। এই অঞ্চলের মানুষ আগে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করত। বিল পারি দিয়ে দিনে অন্যত্র কাজে যেত আর অনেক রাতে ফিরে আসত বাড়ি। কিন্তু অনেকের জন্যই এখন সেই দিন গত হয়েছে। এই বিলে চাষাবাদ ও তা থেকে উৎপাদন হওয়ার পর থেকে এখন অনেকেরই জীবনে সচ্ছলতা এসেছে । বিলে চাষাবাদ করে আয় করা অর্থে অনেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন সন্তানদের। আর সেই বিদেশ থেকে আসা অর্থে তাদের বড় বড় ব্যবসা হয়েছে। বড় বড় বাড়ি হয়েছে।
"কুমড়া মানুষের দুঃখ ঘুচাইছে এখন আল্লাহ দিলে অনেক চাষ হয়। নতুন করে শাপলা চাষ হচ্ছে। তাতেও অনেক মানুষের বেকারত্ব ঘুচেছে। জীবিকা হয়েছে। আমরা আরিয়াল বিলকে আশির্বাদ মনে করি," বলেন আব্দুল গনি।
চাষপদ্ধতি নিয়ে জানতে চাইলে চাষিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে টইটুম্বুর পানিতে আড়িয়াল বিল দখল করে কচুরিপানা। পানি কমলে সেই কচুরিপানা দিয়েই তারা ভিটা তৈরি করেন। এমন একেকটি ভিটা তৈরিতে খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা । পরে রোদের তাপে কচুরি পানা পচে শুকিয়ে মিশে যায় মাটির সাথে। ততদিনে ভাদ্র মাস হাতছানি দেয় প্রকৃতিতে। মিষ্টি রোদের ঝলমলে পরিবেশে কুমড়ার বীজ বোনা হয়। শুরু হয় ভাদ্র থেকেই। শেষ হয় কার্তিক মাসে।
কেউ কেউ শোনালেন সবচেয়ে বড় কুমড়ার জাত চৈতালির কথা। বললেন, আড়িয়ল বিলে একসময় শুধু চৈতালি জাতের বড় আকারের কুমড়ার চাষই হতো। তবে এত বড় কুমড়া খুচরা বাজারে বিক্রি অপেক্ষাকৃত দুষ্কর। এ কারণে ব্যবসায়িক মন্দা দেখা যেতো। তাছাড়া রয়েছে ইঁদুরের উৎপাত। একটি বড় কুমড়া ইঁদুর কাটলে গোটাটাই নষ্ট। এসব কারণে চৈতালীর কদর এখন কিছুটা কম। এখন বিভিন্ন জাতের কুমড়ার চাষ হয় এখানে। বিশেষ করে হাইব্রিড জাতের কুমড়া চাষে আগ্রহ বেশি কৃষকদের। কারণ এর ফলন বেশি।
ইন্দোনেশিয়ান বেঙ্গল টু ,মল্লিকা-১, লাল তীরসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের কুমড়ার বীজ বপন করেন কৃষকরা। ঢাকার সিদ্দিক বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয় বীজ। কার্তিক মাসে বীজ বপণের পর থেকেই শুরু হয় পরিচর্যা। এরপর বীজ ফুটে গাছ হয়। বাড়তি পরিচর্যায় গাছ বড় হতে থাকে। আর পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত গাছগুলোয় কুমড়া ফলতে থাকে। যা বাজারজাত করা হয়। আড়িয়ল বিলের কুমড়ার কদর আছে ক্রেতাদের কাছে। তাই নামেও চলে অনেক কুমড়া। আর স্বাদেও তা সেরা।
ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ কেউ এখনো বাণিজ্যিকভাবে চৈতালির চাষ করেন । সৌখিন চাষীরাই বেশি করেন। তবে সে সংখ্যা এখন অনেক কম।
বাজারজাত করারও রয়েছে বিশেষ কৌশল। বিস্তৃত খেত থেকে কুমড়া কেটে নৌকা করে খাল বেয়ে নেওয়া হয় বিলের ঘাটে। সেখান থেকে ছোট বড় নৌকার ওপরেই গাদি ঘাটে সাজানো হয় কুমড়ার পসরা। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে তা নিলামে উঠে। দর হাঁকে কৃষক। দর কষাকষির এক পর্যায়ে নির্ধারণ হয় কুমড়ার কাদির দাম। এর পর ট্রাকে উঠানো হয় কুমড়া। শুরু হয় কুমড়ার বাণিজ্যিক যাত্রা। আগে ঢাকার শ্যামবাজারে কুমড়া গুলো বিক্রি হলেও এখন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কেজি হিসেবে বিক্রি হয় ।
জোবায়ের মোল্লা নামের একজন কৃষক জানালেন, আগে কুমড়া বাজারজাত করতে শুধু নদী পথ ব্যবহার হতো। ছোট ছোট নৌকা ও ট্রলারে কুমড়া উঠিয়ে নেওয়া হতো গাদি ঘাটে। সেখান থেকে আবার নদী পথে শ্যামবাজার যেত। এরপর দেশের বিভিন্ন বাজারে মিলত আড়িয়াল বিলের কুমড়া।
এক দিকে যেমন কদর কমেছে চৈতালি জাতের কুমড়ার । অন্যদিকে সক্ষমতাও কমেছে আড়িয়ল বিলের চাষাবাদের। তা ছাড়া খণনের অভাবে বিলের খালগুলোও হয়ে পড়ে পানিশুণ্য। কৃষকদের অভিযোগ, রাস্তাঘাট না থাকায় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পণ্য আনা নেওয়া করতে হয়। এতে ভোগান্তির শেষ নেই। এছাড়া কৃষি অধিদফতরের আওতাধীন সুযোগ সুবিধাও পান না এখানকার কৃষকরা।
গাদি ঘাট এলাকায় কথা হয় কৃষক আবু বক্করের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বারো মাসই কষ্ট করি। মোবাইলে অনেক খবর দেখি সহযোগিতা পায় সবাই। আমরা তো পাইনা । এখানে রাস্তা না থাকায় আমাদের চলাচলে কষ্ট। ধান কুমড়া আনা নেওয়ায় অনেক কষ্ট করতে হয়। আমাদের দাবি এখানে উন্নত প্রযুক্তি আসুক খাল গুলো খনন করা হোক ।
একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা যায় না এ দিকে। কোন সহযোগিতা পাই না আমরা। বিলের কৃষিভিত্তিক আধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানালেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বার্নিং ম্যান’। উৎসবটি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ব্ল্যাক রক সিটির মরুভূমিতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, উদ্যোক্তা এবং দর্শকেরা এসে একত্রিত হন। সৃজনশীলতা, মুক্ত পরিবেশ, স্বাধীনতা—এগুলোই হচ্ছে উৎসবের মূলমন্ত্র। একই আদর্শে সংগীত, শিল্পকলা ও প্রকৃতির মিশেলে ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি অভিনব উৎসবের আয়োজন হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে। উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’। এতে বিভিন্ন দেশের শিল্পী, উদ্যোক্তা আর সৃজনশীল মানুষেরা অংশ নেবেন।
মারমেইড বিচ রিসোর্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবকে ঘিরে রিসোর্টে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফেস্টিভ্যাল ঘিরে পুরো রিসোর্টে করা হচ্ছে আলোকসজ্জা। নানা সৃজনশীল আর্টের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে পুরো রিসোর্ট। তৈরি করা হচ্ছে ৫ টি মঞ্চ।
মারমেইড ইকো-ট্যুরিজম লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) রেক্সি ডমিনিক গমেজ জানান, "বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল হতে যাচ্ছে তিনদিনের এমন একটি জমকালো উৎসব যেখানে জাপান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা এবং রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের পারফরম্যান্সের দারুণ এক কম্বিনেশন। সঙ্গীতের পরিবেশকে আরও রঙিন করে তুলতে এই উৎসবে যুক্ত হবে মুখরোচক সব খাবার, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং উপকূলীয় সৌন্দর্যের এক দারুণ মিশেল"।
তিনি আরও জানান, উৎসবের জন্য থাকবে দৃষ্টিনন্দন ৫টি মঞ্চ, বিজলিবাতির নৌকা বা মুনবোট লাইট শো, ফায়ার শো, সি-ফুড মেডিটেশন, ইয়োগা সেশন, আর্ট থেরাপি, আর্ট ওয়ার্কশপ সহ নানা আয়োজন। এছাড়া থাকবে ওয়ার্ল্ড ফুড মার্কেট, ফ্লুটিং মার্কেট, ফ্যাশন মার্কেট এবং বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা মানুষদের নিয়ে টক শেসন।
শিল্পী রনি আহম্মেদ বলেন, আর্ট তৈরি করে বার্নিং ক্রেবের সাথে মার্চ করা হয়েছে যাতে লোকজন মিউজিকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। ঐরকম একটা আার্টিস্টিক মিউজিক্যাল এক্সপেরিয়েন্সের সাথে সাথে পিউর আর্টের যে এক্সপেরিয়েন্স সেটি দেওয়া হবে। মারমেইড এটা সবসময় করে তবে এবার আরেকভাবে হবে।
উৎসবের আয়োজক মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘টেক এ ব্রেক’–এ উৎসবের মূল ধারণা। আয়োজনের তিন দিনে অতিথিদের রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। থাকবে দেশ সেরা রাঁধুনিদের তৈরি করা সুস্বাদু খাবার ও পানীয়র আয়োজন।
আয়োজনের পুরোভাগে তারকা রাঁধুনি ইনারা জামালের সৃজনশীল পরিবেশনা থাকবে। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কিউরেটর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন জাপানের বিখ্যাত ফেস্টিভ্যাল আর্কিটেক্ট ও লাইটিং ডিজাইনার জিরো এনদো।