মানুষের জীবন অতি মূল্যবান। তাই জীবনে সবধরণের অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এ শিক্ষাই দিয়েছেন। অনেক হাদিসে জীবনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন।
জীবনে আমরা যদি চিন্তা-ভাবনা করি, তাহলে আমাদের বুঝে আসবে, জীবনের মূহূর্তগুলো কত মূল্যবান। ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, জীবনের সঠিক মূল্য বুঝে আসবে আখেরাতে। কারণ, তখন চাইলেও একটি নেকি অর্জন করা সম্ভব হবে না।
বিজ্ঞাপন
পরকালের ওই সময় প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সদ্য দাফনকৃত একটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন সাহাবিদের লক্ষ্য করে বললেন, দুই রাকাত নামাজ, তোমরা যেটাকে সামান্য মনে কর, এই ব্যক্তির কাছে এই দুই রাকাত নামাজ- যা তার আমলনামাকে সমৃদ্ধ করবে; সারা দুনিয়া থেকে উত্তম। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৩৫০৬
অর্থাৎ তোমরা কখনও তাড়াতাড়ি দুই রাকাত নামাজ পড়ে নাও আর এটাকে সামান্য মনে কর। অথচ তা সামান্য নয়, এই মৃতব্যক্তি, যে এই কবরের মধ্যে রয়েছে, সে আফসোস করছে এবং আশা করছে, হায় আমার জীবনের আরও কিছু সময় যদি মিলতো, তাহলে আমিও দুই রাকাত পড়ে নিতাম আর তা আমার আমলনামাকে সমৃদ্ধ করত। তার কাছে দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম।
বিজ্ঞাপন
দুনিয়ায় যত নিয়ামত আছে, যত সম্পদ আছে- সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা, পদ-পদবী, রাজত্ব-সাম্রাজ্য, ইজ্জত-সম্মান অর্থাৎ দুনিয়ার যত নিয়ামত; তার কাছে দুই রাকাত নামাজ এসব নিয়ামত হতে উত্তম। এজন্য সে তামান্না করছে, হায়! যদি আমার জীবনের আরও দুই মিনিট মিলে যেত তাহলে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিতাম! তোমরা দুই রাকাত নামাজকে সামান্য মনে কর; তার কাছে জিজ্ঞেস করো- দুই রাকাত নামাজ কত মূল্যবান!
মানুষ দুনিয়ার জীবন কীভাবে আখেরাতের কাজে ব্যবহার করবে? এ প্রশ্নের উত্তরে আলেমরা বলেছেন, এজন্য চারটি কাজ করতে হবে।
১. গুনাহ থেকে বাঁচা: যাবতীয় গুনাহ থেকে খাঁটি তওবা করা এবং ভবিষ্যতে তা থেকে বেঁচে থাকার একনিষ্ঠ ইচ্ছা করা।
২. সবকাজ আল্লাহর জন্য করা: যেসব কাজ যাতে দুনিয়া-আখেরাতের ফায়দা রয়েছে, তা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে করা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা যত কাজ করি, এর মধ্যে কিছু রয়েছে ইবাদত এবং কিছু রয়েছে দুনিয়ার বৈধ কাজ। এসব কাজে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির নিয়ত করব। তাহলে সবকিছুই কাজে আসবে- ইনশাআল্লাহ।
৩. জিকিরের অভ্যাস: বেশি বেশি জিকিরের অভ্যাস করা। এটা অনেক বড় সম্পদ। যখন কারও জিকিরের অভ্যাস হয়ে যায় তখন শুয়ে-বসে, চলতে-ফিরতেও তার জবান আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে। সে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় কবুল হয়।
৪. অনর্থক কাজ ছেড়ে দেওয়া: যাবতীয় অনর্থক কাজ, কথা-বার্তা, আলাপ-আলোচনা, মজলিস ও প্রোগ্রাম থেকে নিজেকে বাঁচানো।
এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই চার কাজের হিসাব করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন সহজ হবে।
সমস্ত প্রতিক্রিয়া মনোযোগের যোগ্য নয়। কিছু গঠনমূলক এবং আপনার জন্য ভালো। পক্ষান্তরে কিছু প্রতিক্রিয়া বিষাক্ত আর আপনার সুস্থতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং বিচক্ষণ হতে শিখুন; সর্বদা আপনার মানসিক শান্তি এবং সুস্থতা রক্ষা করুন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সর্বদা সৎ পথে রাখুন। আমাদের ঈমানের ওপর অটল রাখুন। আমাদেরকে কখনো সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করুন। আমাদেরকে আগুন ও কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন। সর্বোচ্চ জান্নাতকে আমাদের শেষ আবাস করুন।
বিষয়গুলো অন্ধকারে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নির্জন রাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। যে আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, তার কাছে কাতরকণ্ঠে অভাব-অভিযোগের কথা জানান। মনের কথাগুলো খুলে বলুন, তিনি ফিরিয়ে দেবেন না। তিনি আপনাকে আলোর পথ দেখিয়েছেন এবং হৃদয়ের ভারাক্রান্ততাকে হালকা করেছেন। সবসময় আপনার জন্য তিনি আছেন, তাকে পরমভাবে বিশ্বাস করুন।
আপনি যা তা দিয়েই আপনি আকৃষ্ট করবেন। এটাই বাস্তব সত্য। ভালো কাজ করুন তা আবার আপনার কাছেই ফিরে আসবে। সদয় হোন এবং আপনার প্রতিও সদয় হবার একই প্রস্তাব দেওয়া হবে। আপনি যখন ইতিবাচক শক্তির প্রতিফলন ঘটান তাহলে আপনি অবশ্যই ইতিবাচকতাকেই আকৃষ্ট করবেন।
অতএব ভালো কিছু করার জন্য প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হোন, কারণ আপনি যা দেবেন সেটিই আপনি ফিরে পাবেন!
সব কিছু সবার জানার দরকার নেই। কেউ সেভাবে করে না। মনে রাখবেন, আমরা সবাই এক একটা কাজ করছি। প্রতিদিন, আমরা আরও শিখতে এবং আরও ভালো হতে চেষ্টা করি। এটাই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ভাবনা চিন্তায় যারা জগাখিচুড়ি সৃষ্টি করে তাদেরকে না বলু্ন। যারা আপনাকে বিরক্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ করতে থাকে তাদেরকেও। যারা সবসময় শিকারের ভূমিকা পালন করে যদিও এটা স্পষ্ট যে তারা ভুল করছে সেসব ব্যক্তিকেও না বলুন। যারা আশা করে যে আপনি তাদের অগ্রাধিকার দেবেন কিন্তু আপনার জন্য একই কাজ করবে না- তাদেরও এড়িয়ে চলুন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা অনুসরণ করে আপনি যখন সঠিক কাজটি করেন এবং যা তিনি নিষিদ্ধ করেছেন তা পরিত্যাগ করেন তখন এটি কখনই কোনো বিঘ্নতার দিকে আপনাকে নেবে না। এটি প্রকৃতপক্ষে আপনাকে তার সন্নিকটেই নিয়ে আসবে। সুতরাং আপনি নিজে কী নিজের মধ্যে রাখছেন সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন, কারণ এটি তার সঙ্গে আপনার সংযোগে প্রভাব ফেলতে পারে।
দয়াবান হওয়ার জন্য কোনো খরচ করতে হয় না। সদয় কাজ এবং সদয় শব্দগুলো কাউকে তাদের পথে ফিরিয়ে আনতে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে। শক্তি, অনুপ্রেরণা, আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অন্তর্নিহিত ক্ষমতা তাদের রয়েছে। আপনি পেছনে কী ফেলে এসেছেন?
মনে রাখবেন, এমন একটি পৃথিবীতে আপনি আছেন যেকোনো কিছু এখানে করতে পারেন, সদয় হওয়াকেই বেছে নিন।
মানুষের সঙ্গে আপনার সমস্যার বিবরণ শেয়ার করা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। বেশিরভাগই এসবকে পাত্তা দেয় না এবং এটি নিয়ে গসিপ করতে পছন্দ করে। এ নিয়ে বরং সর্বশক্তিমানের কাছে যান। তাকে বলুন, মন হালকা হবে, সমস্যারও সমাধান হবে। ভালো কাজ করুন। ভালো ভাবুন, ভালো বলুন।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ -সুরা আনয়াম : ১৬০
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করে, সে দশটি সৎকাজের সওয়াব পায় বরং আরো বেশি পায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গোনাহ করে সে তার শাস্তি এক গোনাহর সমপরিমাণ পায় কিংবা তাও আমি মাফ করে দেব। যে ব্যক্তি পৃথিবী ভর্তি গোনাহ করার পর আমার কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তার সঙ্গে ততটুকুই ক্ষমার ব্যবহার করব। যে ব্যক্তি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে বা (অর্থাৎ দুই বাহু প্রসারিত) পরিমাণ অগ্রসর হই। যে ব্যক্তি আমার দিকে লাফিয়ে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৫/১৫৩
‘আল্লাহর ঘরে যাওয়ার ডাক এসেছে, আপনি কি সাড়া দেবেন? আমাদের উমরা কাফেলার সবচেয়ে বিশেষ বিষয় হলো, সঙ্গে থাকবেন প্রখ্যাত এক ইসলামিক স্কলার। তিনি শুধু শরিয়া গাইডলাইন দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না, বরং কিভাবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে উমরা সম্পন্ন করতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। উমরা শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি এমন একটি সুযোগ। এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করতে পারবেন এবং নিজের আখেরাতকে সফল করতে পারবেন।’
‘উমরাপালনকারীদের সর্বোত্তম সেবাই আমাদের প্রতিশ্রুতি। অভিজ্ঞতার আলোকে মানসম্পন্ন সেবা দেই। এর অন্যতম হলো, দক্ষ সার্ভিস টিমের মাধ্যমে সময়মত খাবার পরিবেশন। আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। মক্কা-মদিনায় মানসম্পন্ন আবাসনের ব্যবস্থা। নারীদের জন্য নারী গাইড।’
এভাবেই হজ ও উমরার এজেন্সিগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। আবার কোনো এজেন্সি উমরা পালনের আগে-পরে ভিন্ন কোনো দেশ ঘুরে আসার প্যাকেজ ঘোষণা করে। ফলে মানুষ ব্যাপকভাবে উমরার দিকে ঝুঁকছে।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর এক নেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হজের বিপরীতে উমরার খরচ অনেক কম। সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার মধ্যে একজন উমরা করতে পারেন। ফলে খরচ বাঁচাতে অনেকেই উমরার দিকে ঝুঁকছেন।’
তার মতে, ‘ছোট ছোট উমরা গ্রুপ পরিচালকদের আকর্ষণীয় উমরা প্যাকেজ অফার ও নানা তৎপরতা উমরা যাত্রী বাড়ার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে সৌদি আরবের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণের সুবিধার সঙ্গে আরও দেশ ভ্রমণের সুযোগ তরুণদের উমরা পালনে বেশি আগ্রহী করে তুলছে।’
বাংলাদেশে হজ এজেন্সি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এর বাইরে ট্র্যাভেল এজেন্টরাও হজ ও উমরা নিয়ে কাজ করেন।
অ্যাসোসিয়েন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আব্দুস সালাম জানান, ‘হজের খরচ বেড়েছে। এটা সব দেশেই। এর সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ায় আরো খরচ বেড়েছে। একজনের হজের খরচ দিয়ে চার জন উমরা করতে পারেন। ফলে উমরার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এখন বছরে পাঁচ লাখের বেশি মুসলমান উমরা করতে যান।’
রয়েছে বিস্তর অভিযোগ উমরাকারীদের বড় একটি অংশ খুব আরামে মক্কা-মদিনার সফর শেষ করে দেশে ফেরেন এমনটা নয়। উমরার এজেন্টদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও অব্যবস্থাপনার কথা প্রায়ই শোনা যায়।
বিশেষ করে বৃদ্ধ ও অসুস্থ অনেকেই উমরা পালন করতে গিয়ে হারিয়ে যান। এমনও হয়েছে মসজিদে হারামে নামাজ পড়তে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে দলছুট হয়ে দুই-তিন পর্যন্ত একা থাকেন। এভাবে হারিয়ে যাওয়া রোধ করতে অনেকটাই উদাসীন থাকে এজেন্সিগুলো। এমনকি সঠিকভাবে উমরা পালনের বিষয়েও তারা সাহায্য করে না।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক গ্রুপ লিডার বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক যাত্রীকে হোটেলের কার্ড, মোবাইল ও পরিচয়পত্র রাখতে বলি। তারা কথা না শুনলে আমাদের কি করার আছে?’
তিনি বলেন, তার পরও হারিয়ে গেলে আমরা যথাসাধ্য খুঁজে দেখি। কিন্তু এত বড় প্রাঙ্গণে কারো খোঁজ করা অনেকটা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মতো।
বাংলাদেশ থেকে উমরা পালন করতে গিয়ে এভাবে হারিয়ে যাওয়া, অসুস্থতা ও প্রতারিত হওয়াসহ নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়েন যাত্রীরা। যদিও হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে যাত্রীদের সচেতনতার কথা বলেন মক্কার ইবরাহিম খলিল রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ অফিস কিংবা মদিনার কিং ফাহাদ ২১ নম্বর গেইটের কাছে বাংলাদেশ হজ অফিসের দায়িত্বশীলরা।
কয়েকজন উমরা পালনকারী ও ভুক্তভোগী বলেন, হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করতে হবে এমন একটি জায়গা আগে থেকেই ঠিক করে রাখলে দুশ্চিন্তা এড়ানো যায়।
গ্রুপ লিডারদের প্রতারণা বছরজুড়ে উমরার ব্যবস্থাপনা করে বেসরকারি এজেন্সিগুলো। এখানে সরাসরি লাইসেন্সধারী এজেন্সির বাইরে বিভিন্ন গ্রুপ লিডাররা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা-টিকেট করিয়ে হোটেল ভাড়াসহ সব ব্যবস্থা করে। উমরার ক্ষেত্রে এমন গ্রুপের সংখ্যাই বেশি। আর তাদের মাধ্যমে উমরা পালন করতে গিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এখানে বড় অভিযোগের জায়গা হলো, বিভিন্ন গ্রুপ লিডাররা তাদেরকে এক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যান। পরে গিয়ে দেখেন উল্টা চিত্র।
উমরা করতে গিয়ে এমন বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানান আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ‘সবাই চান মক্কায় থাকার সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাবা শরিফে পড়তে আর মদিনায় থাকলে মসজিদে নববিতে পড়তে। তাই তারা চান হোটেল যেন হাঁটার দূরত্বে হয়। এ জন্য গ্রুপ লিডাররা বেশি টাকা চার্জ করে। কিন্তু গিয়ে দেখা যায় যে, হোটেল থেকে মসজিদ এতই দূরে যে হেঁটে যাওয়ার উপায় নাই। তার মধ্যে নোংরা পরিবেশ, পানি না থাকা, নোংরা টয়লেটের সমস্যা তো থাকেই।’
এ বিষয়ে সরকারের সু-নজর থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এক্ষেত্রে কোনো গ্রুপ লিডারের মাধ্যমে তৃতীয় মাধ্যম হিসেবে উমরা না যেয়ে এজেন্সির মাধ্যমে সরাসরি উমরায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে হজ মিশন।
তাদের স্পষ্ট কথা, কোনোভাবেই গ্রুপ লিডার নামধারী তৃতীয় পক্ষ বা বেনামী মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়া।
এজেন্সিগুলো বিভিন্ন দামে নানা ধরনের প্যাকেজ সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্যাকেজের টাকা দেখে নয় বরং সার্ভিস দেখে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এজেন্সির মাধ্যমে উমরা পালন করা ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, প্যাকেজে থাকা-খাওয়া, ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন ও ফ্লাইট ভাড়াসহ সব সুবিধা আছে কি-না তা যাচাই করে প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে। কম টাকার প্যাকেজে অনেক জরুরি সার্ভিস বাদ পড়তে পারে, আবার প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
থাকা-খাওয়া মক্কা-মদিনায় যেখানে থাকবেন, ওই হোটেল, বাসা কী ধরনের, মসজিদ থেকে কত দূরে, লিফট আছে কি-না, একেক রুমে কতজন থাকবেন, একটি টয়লেট কতজনের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে- এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে যেতে হবে। এমন পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞরা।
সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি-না, খাবার না দিলে কোথায় কী ধরনের খাবার পাওয়া যাবে, কত খরচ পড়বে তার ধারণা রাখার পরামর্শ দেন তারা।
অসুস্থতা উমরার সফর সাধারণত ১৫ দিনের হয়। কিন্তু সফরে বিরূপ আবহাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ পথ হাঁটা এবং প্রচুর মানুষের ভিড় থাকায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা থাকা জরুরি।
কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জন্য মক্কা ও মদিনায় মিশন অফিসে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা আছে বলে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধি-শাখার উপ-সচিব ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক।
রোগীর পরিস্থিতি গুরুতর মনে হলে চিকিৎসকরা বড় হাসপাতালে রেফার্ড করে থাকেন।
এর বাইরে মক্কা-মদিনার ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হজ ও উমরাকারীদের জন্য স্বাস্থ্য ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
তবে কারো যদি নিয়মিত কোনো ওষুধ খেতে হয়, তাহলে যতদিন সফরে থাকবেন ওই হিসেব করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখা। কেননা সৌদি আরবে কেউ ফার্মেসি থেকে চাইলেই ওষুধ কিনতে পারে না। তার জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখাতে হয়।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওয়াকফ ও ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ২০২৪ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের বিমান হামলায় প্রায় ১ হাজার মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ইসরায়েলি সেনারা ৯৬৬টি মসজিদ ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে ৮১৫টি মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং ১৫১টি মসজিদ আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৯টি কবরস্থানও ধ্বংস করা হয়েছে, একাধিক কবর ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। বিমান হামলায় ৩টি গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মিডল ইস্ট মনিটর সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
এই ধ্বংসযজ্ঞের খবরটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং তা গত ১৬ মাস ধরে চলমান। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনা হলেও ইসরায়েলি সেনাদের হামলা থামছে না।
গাজার জনগণের ওপর এই বর্বর হামলার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার প্রাক্তন যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গাজার জনগণের ওপর দুর্ভিক্ষ চালানোর অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
উল্লেখ্য, গাজার অবরুদ্ধ অবস্থায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
২০২৫ সালের প্রথম দিকে ৫ জানুয়ারি গাজা উপত্যকায় একদিনেই অন্তত ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এ ছাড়া গত তিন দিনে ১০০ বারের বেশি বোমা হামলা চালিয়ে ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এমন পরিস্থিতিতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের এই ধ্বংসযজ্ঞ শুধু মানুষ হত্যা বা বসতিগুলোর ধ্বংস নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধ্বংসের অংশ। মসজিদ, গির্জা, কবরস্থান- এসব ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ধ্বংস হওয়ায় প্যালেস্টাইনি জনগণের চিহ্ন এবং ঐতিহ্যও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার মানবিক সংকট নিয়ে নিন্দা জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
পবিত্র কোরআন-হাদিসে কেয়ামতের ঘটনাগুলো বর্ণিত হয়েছে। আলেমরা কেয়ামতের ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন। এদিন মানুষ কবরে পুনর্জীবন লাভ করে হাশরের মাঠে জমায়েত হবে। তখন তাদের অবয়ব হবে খুবই দীর্ঘ। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়বে অনেকে। তাদের অন্তরজুড়ে ভয়ভীতি বিরাজ করবে। কারণ আল্লাহর হিসাব গ্রহণ ও প্রতিদান সম্পর্কে তারা সন্ত্রস্ত থাকবে।
তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার কাছে দ্রুত পুরো সৃষ্টিজগতের হিসাব গ্রহণের সুপারিশ করবেন। দীর্ঘ এক হাদিসে এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে।
এরপর মানুষের আমল উপস্থাপন করা হবে। পরে প্রাথমিক পর্যায়ে হিসাব নেওয়া শুরু হবে। আমলনামা দেওয়া হবে। সব ধরনের আমল ওজন করা হবে। এর পর মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হবে। মুমিনদের আল্লাহ পথ চলার আলো দেবেন। মুনাফিকদের জন্য কোনো আলো থাকবে না। তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়ে কাফেরদের সঙ্গে বসবাস করবে।
কেয়ামতের এমন কঠিন দিনে একটি দোয়ার ওজন সবেচেয়ে ভারী হবে বলে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে অসংখ্য দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন। বিভিন্ন সময় তিনি এমনকিছু আমলের কথা বলেছেন যা আকারে খুবই কম ও সংক্ষিপ্ত হলেও এর সওয়াব অনেক বেশি। এটি তেমনই একটি দোয়া। দোয়াটি হলো-
অর্থ : আমি আল্লাহতায়ালার পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তার সৃষ্টির সংখ্যা সমপরিমাণ, মহান সত্ত্বার সন্তুষ্টির পরিমাণ, তার আরশের ওজন পরিমাণ এবং তার বাক্যগুলোর কালির পরিমাণ।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) উম্মুল মুমিনিন জুয়াইরিয়া (রা.)-এর ঘর থেকে বের হন। তখন জুয়াইরিয়া (রা.) নিজের নামাজের স্থানে ছিলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) ফিরে আসেন। তখনও জুয়াইরিয়া (রা.) নামাজের স্থানে ছিলেন।
অতঃপর রাসুল (সা.) আবার বের হন এবং আবার ফিরে আসেন। তখনও জুয়াইরিয়া (রা.) নামাজের স্থানে ছিলেন। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি কি এখনো তোমার নামাজের স্থানে রয়েছ!’
জুয়াইরিয়া (রা.) বলেন, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমার স্থান থেকে গিয়ে চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি।
এ সময়ে তুমি যা পড়েছ তার সঙ্গে ওইসব বাক্যের ওজন করা হলে তাই ভারি হবে।’ অতঃপর তিনি দোয়াটি পড়েন। -সুনানে আবু দাউদ : ১৫০৩