রমজানে তারাবি ও নফল ইবাদতের গুরুত্ব

  • মাহমুদ আহমদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় আমরা মাগফিরাতের দশক অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। রমজান মাস এলেই রোজার সাথে সাথে যে ইবাদতটির নাম সর্বাগ্রে আসে তা হল তারাবির নামাজ। তারাবি শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম বা আরাম।

তারাবির নামাজে চার রাকাত নামাজ পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেয়া হয়, তাই পরিভাষাগতভাবে এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ আসলে তাহাজ্জুদ নামাজেরই আরেকটি নাম, কিন্তু রমজান মাসে সর্ব সাধারণ যেন এ থেকে অধিকহারে কল্যাণমণ্ডিত হতে পারে এ জন্য সাধারণ মানুষকে রাতের প্রথম ভাগে অর্থাৎ, ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি (রা.) বলেছেন, ‘একদিন গভীর রাতে রসুলুল্লাহ্ (সা.) বাহির হয়ে মসজিদে গেলেন এবং নামাজ পড়লেন, কিছু লোকও তার (সা.) পিছনে নামাজ পড়লেন। ভোর হওয়ার পর লোকজন পরস্পরের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করায় দ্বিতীয় রাতে লোক সংখ্যা আরো বেড়ে গেল এবং তারা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে নামাজ পড়ল। এ দিন ভোর হওয়ার পর লোকদের মাঝে আরো বেশি আলোচনা হল এবং তৃতীয় রাতে মসজিদের লোক সমাগম আরো বেশি হল, মহানবী (সা.) বাইরে বের হয়ে নামাজ পড়লেন আর তারাও তার (সা.) সাথে নামাজ পড়লেন। যখন চতুর্থ রাত এলো তখন এতো লোক সমাগম হল যে, মসজিদে স্থান সঙ্কুলান হল না। কিন্তু মহানবী (সা.) এ রাতে তারাবির নামাজের জন্য বের হলেন না, এমনকি ভোর হয়ে গেলে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন এবং ফজরের নামাজ শেষে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাশাউদ পাঠের পর বললেন, তোমাদের বিষয়টি আমার কাছে গোপন ছিল না। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, এ নামাজ না আবার তোমাদের ওপর ফরজ করে দেয়া হয় আর তোমরা তা পালনে ব্যার্থ হও। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এ নামাজের বিষয়টি তেমনই রইল’ (বোখারি)।

হজরত আব্দুর রহমান বিন আব্দিল কারী (রা.) বর্ণনা করেছেন, রমজানের এক রাতে আমি হজরত উমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম এবং দেখলাম, লোকেরা পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে আছে। কেউ একা একা নামাজ পড়ছিল, আবার কেউ কেউ এভাবে নামাজ পড়ছিল যে, তার পিছনে কিছু লোক নামাজ পড়ছিল। এ অবস্থা দেখে হজরত উমর (রা.) বললেন, আমার মনে হয় সবাইকে একজন কারীর পিছনে একত্রিত করে দিলে ভাল হয়। অতঃপর তিনি (রা.) দৃঢ় প্রত্যয় করলেন এবং উবাই বিন কাবের পিছনে তাদের সবাইকে মুক্তাদি হিসেবে একত্রিত করে দিলেন।

মহানবী (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’ (বোখারি ও মুসলিম)। এ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় তারাবির নামাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের প্রভূ প্রতিপালক যিনি সকল কল্যাণের মালিক এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তিনি প্রতি রাতে এমন সময় পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন যখন রাতে এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে আর বলেন, কে আমাকে ডাকে যেন আমি তার ডাকে সারা দেই, কে আমার কাছে প্রার্থনা করে যেন আমি তাকে দান করি এবং কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেই’ (বোখারি)।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে বাড়িতেই বাজামাত তারাবি ও অন্যান্য নামাজ আদায় করব।

আল্লাহতায়ালার বন্ধুত্ব ও তার ভালোবাসা পেতে চাইলে নফল ইবাদত একান্ত প্রয়োজন। আমারাও যেন পবিত্র এই রমজানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অনেক বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য প্রাপ্তগণের অন্তর্ভূক্ত হতে পারি, সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামী গবেষক কলামিস্ট, -মেইল- [email protected]