উমরার টিকিটে নজিরবিহীন সিন্ডিকেট

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উমরার টিকিটে নজিরবিহীন সিন্ডিকেট, ছবি: সংগৃহীত

উমরার টিকিটে নজিরবিহীন সিন্ডিকেট, ছবি: সংগৃহীত

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগকে পুঁজি করে পবিত্র রমজানে উমরার টিকিটে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট। কয়েকটি এয়ারলাইন্সের অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও ১৫-২০টি এজেন্সি মিলে এ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। ১ লাখ ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় উমরা করতে যাওয়ার জন্য বুকিং দিয়ে এখন উৎকন্ঠায় রয়েছে যাত্রীরা। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে স্বাভাবিক মূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে উমরাযাত্রী ও এজেন্সি মালিকরা। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন আটাব।

উমরাযাত্রী ও উমরাহ ট্যুর পরিচালনাকারী এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ উমরা করতে যান। আগামী মার্চে রমজান মাস। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং ১৫-২০টি এজেন্সি সিন্ডিকেট করে টিকিটের টাকা বাড়িয়েছে।
এবার প্রায় প্রতি রিটার্ন টিকিটে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ এজেন্সি মালিকরা আগামী মার্চের টিকিট কিনতে গেলেই বিমান থেকে বলা হচ্ছে সোলডআউট। কয়েকটি এজেন্সি প্রায় সব টিকিট বুকিং দিয়ে উচ্চমূল্য নিয়ে থাকে। এসব এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে জনদুর্ভোগ কমানোর দাবি জানিয়েছে এজেন্সিগুলোর সংগঠন আটাব।

জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম ছিল জনপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা। ডিসেম্বরে পাঁচ হাজার টাকা দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা। জানুয়ারি মাসের টিকিট বিক্রি হয় ৮৫ হাজার টাকা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকা। আর মার্চ মাসের টিকিট পাওয়াই যেন দুষ্কর। ১ মার্চ থেকে রমজান শুরু হতে পারে। এ জন্য উমরা করতে ইচ্ছুক ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কেবল খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। আর তাতেই দাম বেড়ে গেছে। এক লাখ ১০-২০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। সামনে এ দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সি মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ট্রানজিট নেওয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ভাড়াও বেড়েছে। নভেম্বরে যে ভাড়া ৬০ হাজার টাকা ছিল, মার্চের সেই ভাড়া রাখা হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকা। মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া শ্রমিকরাও পড়েছেন বিপাকে। তারা এতদিন ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিমান টিকিট পেলেও তাদেরও রমজানের সময়ের টিকিট কিনতে হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকায়।

গত বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে মার্চ মাসের একটি রিটার্ন টিকিটের মূল্য দেখা গেছে ৯৮ হাজার টাকা। আর ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ১২ মার্চে জেদ্দা যাওয়ার টিকিট অনলাইনে ৭৬ হাজার ৭৮৬ টাকা এবং ২০ মার্চে রিটার্ন টিকিটের মূল্য ৫৭ হাজার ৩৭০ টাকা দেখা গেছে। ইউএস বাংলার রিটার্ন টিকিটের মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৬ টাকা।

বেসরকারি হজ ও উমরা এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, এয়ারলাইন্সগুলো আমাদের জিম্মি করে ফেলেছে। রমজানে যারা উমরা করতে যাবেন তারাই এখনো আসেননি। কিন্তু চাহিদা বাড়তে পারে এ সম্ভাবনা থেকে আগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। আর এ সুযোগে কিছু ধনী এজেন্সি সিন্ডিকেট করে এয়ারলাইন্সগুলো থেকে আগেভাগেই ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কিছু বেশি দামে টিকিট কিনে জমা করে রাখছে। এ কারণে সাধারণ উমরার জন্য সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সি মালিকরা এয়ালাইন্সগুলোর কাছ থেকে সরাসরি টিকিট চেয়েও পাচ্ছে না। ফলে তাদেরকে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে। এসব সিন্ডিকেট টিকিট প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ করছে। আর এয়ারলাইন্স ও সিন্ডিকেটের লোভের শিকার হয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ট্রাভেল ও উমরা এজেন্সি মালিকরা।

তারা আশঙ্কা করছেন, রমজানে উমরার সময় এমনিতেই সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যায়। তার ওপর ফ্লাইটের ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ার কারণে এবার মোট খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এবার উমরা করতে কমবেশি দুই লাখ ২০ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ-আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার জনগণের স্বার্থ দেখবে বলে সবাই মনে করে। কিন্তু বিগত ৫ মাসে বারবার দাবি জানিয়েও টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তিনি বলেন, চাহিদা বাড়বে এ সম্ভাবনা থেকে তারা আগেভাগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তাদের কাছ থেকে টিকিট আগে থেকেই কিনে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। ফলে সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সি ও গ্রাহকরা টিকিট কিনতে গেলে সোলডআউট দেখাচ্ছে। ফলে তাদেরকে আরো বেশি দামে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে টিকিট কিনতে হচ্ছে।

সিন্ডিকেটের কাছে বর্তমানে পাঁচ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত টিকিট জমা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট নেই, ভিসা নেই তবু কৃত্রিম উপায়ে তারা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে আগেভাগেই টিকিট কিনে রাখছে। পরে তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের এত টাকার উৎস কী তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এ আটাব নেতা।

এ বিষয়ে এক ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় উমরা যাত্রীদের মধ্যে উৎকন্ঠা রয়েছে। সেই সঙ্গে এজেন্সিগুলোও বিপাকে পড়েছে। এখন সরকারের উচিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। আর বিমানের পক্ষ থেকে রমজানে কয়েকটি ফ্লাইট বাড়িয়ে দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন। বিমানের সিস্টেমে টিকিট দেখালেও বুকিং করতে গেলে টিকিট পাওয়া যায় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের বিষয়ে বিমানের পরিচালক (বিপণন) আশরাফুল আলম জানান, বিমানের অনলাইন সিস্টেমে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মোহাম্মদ শামসুল করিম বলেন, প্রত্যেক টিকিটে মূল্য লেখা থাকে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া হলে তাতে বুঝা যাবে। আর চাহিদার তুলনায় টিকিট কম থাকলে সাধারণত দাম বাড়ে। রমজানে বিমানের ফ্লাইট বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কমার্শিয়াললি ডিমান্ড থাকলেও অনেক সময় ফ্লাইট বাড়ানোর সুযোগ থাকে না। সে ক্ষেত্রে জনবলসহ বিভিন্ন কারণে অপারেশনের সুযোগ হয় না। তবে জনস্বার্থে ফ্লাইট বাড়ানো গেলে টিকিটের দাম কমে আসতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।