স্যার ফজলে হাসান আবেদ: অগ্রযাত্রার অগ্রপথিক

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্যার ফজলে হাসান আবেদ/ ছবি: সংগৃহীত

স্যার ফজলে হাসান আবেদ/ ছবি: সংগৃহীত

স্যার ফজলে হাসান আবেদ একজন বাংলাদেশি সমাজকর্মী এবং বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন এই গুণীজন। সামাজিক উন্নয়নে তার অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্বের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন।

তৎকালীন ব্রিটিশ বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল ফজলে হাসান আবেদ জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ, লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে তিনি পড়াশোনা করেন। শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে শেল অয়েল কোম্পানিতে ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত মনপুরা দ্বীপের অধিবাসীদের মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

এই ধারাবাহিকতায়ই তিনি ব্র্যাক গড়ে তোলেন। চার দশকের মধ্যে ব্র্যাক পরিণত হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়।

এই গুণীজন তার কর্মজীবনে নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্র‌্যাক ছাড়াও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির হার্ভার্ড ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এডাব, বিআইডিএস, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ, গণসাক্ষরতা অভিযান, ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন, ইন্ডিপেনডেন্ট সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পভার্টি এলিভিয়েশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটি, আইডিএস, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইনাফি, সিএলইপি, এলডিসি’র মত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে ডক্টর ইন এডুকেশন, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স, যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লেটার্স, জাপানের রিক্কিও ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স লাভ, যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব দি সাউথ থেকে ডক্টর অব সিভিল লজ এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাডফোর্ড থেকে ডক্টর অব এডুকেশন ডিগ্রি লাভ করেন।

বাংলাদেশের এই গুণী ব্যক্তি র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, ইউনেস্কো নোমা পুরস্কার, এ্যালান শন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার, ইউনিসেফ মরিস পেট পুরস্কার, সুইডেনের ওলফ পাম পুরস্কার,শোয়াব ফাউন্ডেশন "সামাজিক উদ্যোক্তা" পুরস্কার, গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার, জাতীয় আইসিএবি, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুব-উল-হক পুরস্কার, গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার, হেনরি আর. ক্রাভিস পুরস্কার, প্রথম ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন পুরস্কার, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, ডেভিড রকফেলার পুরস্কার, নাইটহুড, এন্ট্রাপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার, ওয়াইজ পুরস্কার, সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, ওপেন সোসাইটি পুরস্কার, লিও তলস্তয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, ইয়াইদান পুরস্কার লাভ করেন।

চলতি বছর স্যার আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তাকে প্রতিষ্ঠানটির ইমেরিটাস চেয়ার নির্বাচিত করা হয়। 

শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দূর্বলতাজনিত কারণে ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর কয়েকদিন পর ২০ ডিসেম্বর ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অগ্রযাত্রার এই অগ্রপথিক।