আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুলেটে কোরিয়ার স্বপ্ন ভাঙলো শিক্ষার্থী নাঈমের
নারায়ণগঞ্জ তোলারাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার নাঈম ইসলাম। দিনমজুর বাবার ঘাম মুছে দিতে কোরিয়া যাবার স্বপ্ন ছিল তার। তবে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় বিজিবির বুলেটে বা-পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায় তার। আর এতেই ভেঙ্গে গেছে জীবনের সব স্বপ্ন।
নিজের পায়ে দাঁড়াতে গ্রাম থেকে নারায়নগঞ্জে খালার বাসায় উঠেন নাঈম ইসলাম। সেখানে তাদের একটি ফার্মেসিতে চাকরি নেয়। পাশাপাশি পড়াশোনা চলছিল। কোরিয়ান ভাষা শিখতে ভর্তি হয়ে বেশ ভালোভাবেই শেষ করেছিলেন কোর্স। এরই মধ্যে শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকালে আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে আন্দোলনরত অবস্থায় বুলেটবিদ্ধ হন তিনি। বুলেটটি বা-পায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। এতে করে বা-পায়ের হাঁড়টি ভেঙ্গে যায় তার।
আহত শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম জানান, আমি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি আন্দোলনে প্রায়ই যোগ নিতাম। গত ১৯ জুলাই আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হই। তখন সেখানে আমার বন্ধুরা ছিল, তারা আমাকে পাশের হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দেয়ার পর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমি পড়ালেখার পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষা শিখছিলাম, যাতে স্টুডেন্ট ভিসায় বা অন্য কোন ভিসায় কোরিয়া যাওয়া যায়। এখন তো আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ গুলিবিদ্ধ হওয়ায় এখন আর যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমার সুস্থ হতে অনেক দিন সময় লাগবে। আর পুরিপূর্ণ সুস্থ হই কিনা, তা আল্লাহ ভালো জানেন।
বর্তমানে সিএমএইচের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন নাঈম। তবে আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে তাকে প্রাইভেট বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করেছে পরিবার।
আহত শিক্ষার্থীর ভাই মোশারফ হোসেন বলেন, এখন সে বর্তমানে সিএমএইচের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থার আছে। ৫ আগস্টের আগে ১৯ জুলাই থেকে আমরা তাকে প্রাইভেটে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। ওখানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হলো গেছে। আমাদের একটাই আবেদন আমার ভাই যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এই সহায়তা যাতে জুলাই ফাউন্ডেশন করে।
এলাকাবাসীর পক্ষে রাকিব হাসান বলেন, নাঈমের যে ভবিষ্যৎ আছে সেটা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ নাঈম যে পরিমাণ অসুস্থ আরো দুইটা অস্ত্রোপাচার করতে হবে। যে অস্ত্রোপচার করার পরে আরো এক বছরেও হাঁটতে পারে কি না সন্দেহ আছে।
তার চিকিৎসা খরচ ও ভবিষ্যত উজ্জ্বলে সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছে এলাকাবাসীও।