মক্তবে কোরআন শেখা নাইজারের ঐতিহ্য

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নাইজারের একটি মক্তব, ছবি: সংগৃহীত

নাইজারের একটি মক্তব, ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। দাপ্তরিক নাম ‘রিপাবলিক অব দ্য নাইজার।’ আফ্রিকার বিখ্যাত নাইজার নদীর নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে। দেশটির মোট আয়তন চার লাখ ৯০ হাজার বর্গমাইল। নাইজারের ২৫ মিলিয়ন মানুষের ৯৯.৩ শতাংশই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শহর নিয়ামি দেশটির রাজধানী। ৩ আগস্ট ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে নাইজার।

নাইজারে ইসলামের ইতিহাস সুপ্রাচীন হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্য তাদের প্রধান সংকট। এর পরও দেশটিতে ইসলামি কর্মকাণ্ড থেমে নেই। দেশটির আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সেবা ও রাজনীতি সর্বত্রই সক্রিয়।

বিজ্ঞাপন

দেশের প্রতিটি মসজিদে কোরআন মাজিদ শিক্ষাদানের জন্য মক্তব রয়েছে। বলা হয়, মক্তব নাইজারে কোরআনিক পরিচয়ের প্রতীক। দেশটির বেশিরভাগ পরিবার এখনও তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তির আগে মক্তবে পাঠানোর ঐতিহ্য বজায় রেখেছে।

অতীতে মক্তবে পবিত্র কোরআন মাজিদ হেফজ এবং শিশুদের কোরআনের জ্ঞান শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। অনেক দেশে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ঐতিহ্য অতীত থেকে বিদ্যমান ছিল এবং আজও এর প্রচলন রয়েছে।

সম্প্রতি আল জাজিরা নেটওয়ার্ক নাইজারের রাজধানী নিয়ামির মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষক ফাতিমা আহমেদের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে নাইজারের স্কুলগুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে।

আল জাজিরা নেট-এর সঙ্গে আলাপকালে ফাতিমা বলেছেন, খলিফা উসমান বিন ফোদিও নাইজার এবং নাইজেরিয়ায় শিক্ষার জন্য প্রথম মক্তব শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। কারণ তখন নানাবিধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল নাইজার।

সমাজের মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য গোত্রের আলেমদের ইমাম ও সমাজের নেতা হিসেবে বেছে নেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক গোত্রে একটি মসজিদ ও একটি ক্লাসরুম ছিল। এই শ্রেণিকক্ষটি ছিল কোরআন মুখস্থ করার এবং কোরআনিক বিজ্ঞান শেখার জন্য একটি বিশেষ কক্ষ, যা মক্তব নামে সমধিক পরিচিত।

কয়েক শতাব্দী ধরে, হুসা গোত্রের লোকজন কোরআন শিক্ষার এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। মক্তবগুলো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, যেসব ছাত্র সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্ত করত এবং ইসলামি জ্ঞান শিখত- তারা এই ক্লাসরুম এবং মসজিদে থাকতে পারত। এভাবে গত শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ইমাম ও ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যখন এ অঞ্চলের ইতিহাস এক বিরাট পরিবর্তনের সাক্ষী।

মক্তবে কোরআন শেখাচ্ছেন নাইজারের এক তরুণ, ছবি: সংগৃহীত

নাইজারে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, ফরাসি আগ্রাসন সত্ত্বেও বেশিরভাগ পরিবার এখনও তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তির আগে মক্তবে পাঠানোর ঐতিহ্য বজায় রাখে। তারা বিশ্বাস করে যে, ‘শৈশবে কোরআন মুখস্থ করা বা শিক্ষা করা একটি পাথরের ওপর খোদাই করার মতো।’

কোরআনি মক্তবগুলো বন্ধ করার জন্য ফরাসিরা অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক শিক্ষককে মেরে ফেলা হয়েছে, অনেকে প্রাণের ভয়ে দেশত্যাগ করেছেন। এমনকি কোরআন শিক্ষার উপকরণও পুড়িয়ে দিয়েছে ওই সময় সম্পর্কে ফাতিমা এভাবেই বলছিলেন।

বর্তমানে দেশে শত শত মক্তব রয়েছে। যদিও কিছুটা ভিন্ন আকারে এগুলো চলছে। আগে ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেওয়া হতো না, এখন প্রতিটি ছাত্রের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে চারশো ফ্রাঙ্ক (স্থানীয় মুদ্রা) নেওয়া হয় এবং বোর্ডিং এর জন্য আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হয়।

এখন অনেক তরুণ কোরআন শেখানোর দিকে ঝুঁকছে। তারা দেশটির ঐতিহ্য রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।