অল্প খরচে বায়ুমণ্ডলকে কার্বনমুক্ত করার যন্ত্র উদ্ভাবন
ফিচার
একটি গাছ একবছরে বায়ুমণ্ডল থেকে যে পরিমাণ কার্বন মুক্ত করতে পারে, তা মাত্র ২শ গ্রাম পাউডার দিয়ে করা সম্ভব, এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অঙ্গরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী।
সেই বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তাদের এই উদ্ভাবিত যন্ত্র খুব কম খরচে বায়ুমণ্ডলকে পুরোপুরি কার্বন মুক্ত করতে সক্ষম।
বিজ্ঞাপন
২৩ অক্টোবর বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ন্যাচার’ এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে।
নিবন্ধে বলা হয়, একটি গাছ সারাবছর বায়ুমণ্ডলকে যতটা কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত করতে সক্ষম, তা মাত্র ২শ গ্রাম পাউডার ব্যবহার করে এবং খুব কম খরচে নতুন উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে বায়ুমণ্ডলকে সেই পরিমাণ কার্বনমুক্ত করা সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে যে ধরনের কার্বন মুক্ত করার জন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তা অনেক ব্যয়বহুল বলে গবেষক দল জানিয়েছেন। এ ধরনের যন্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃতও হয় না।
এ বিষয়ে নিবন্ধের সহলেখক ইউনির্ভাসিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বারকেলের অধ্যাপক ওমর ইয়াগি বলেন, আমরা এক ধরনের পাউডার একটি টিউবের ভেতরে ভরে বারকেলের বায়ুমণ্ডলে রেখে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছি যে, এটি কীভাবে কাজ করে।
ওমর ইয়াগি বলেন, এর কার্যকারিতা আসলেই চমৎকার! আমরা দেখেছি, এটি বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড পুরোপুরি মুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, এর ভেতরে একটি কাঠি ভরে দেওয়া দেওয়া হয়েছিল, যা গ্যাসের অণুগুলি শোষণ করে নিয়েছে। এটি জৈব কাঠামোর (organic Framework-COF)-এর মতোই কাজ করে।
অধ্যাপক ওমর ইয়াগি বলেন, আমি রীতিমতো উৎফুল্ল যে, এই যন্ত্রের মতো আর কোনো যন্ত্র এত কার্যকরিভাবে বায়ুমণ্ডলকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) মুক্ত করতে পারে না! এটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার বড় একটি সমাধান।
এ বিষয়ে নিবন্ধের মূল লেখক জিহুই ঝৌ বলেন, এই ‘ফ্লু গ্যাস ক্যাপচার’ পদ্ধতি ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তনে কাজ করে। কারণ, আপনি তো বায়ুমণ্ডলকে পুরোপুরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত করতে চাইছেন না।
আমাদের এই পদ্ধতি ১শ বছর বছর আগে বায়ুমণ্ডলের যে অবস্থা ছিল, আমাদের ঠিক সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
দ্য ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসি) বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যে পরিমাণ বেড়েছে, সেখান থেকে কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
শিল্প বিপ্লবের ফলে আগে বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্ব ছিল, বর্তমানে তার চেয়ে ৫০ শতাংশ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে বেশি রয়েছে।
আইপিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কার্বন ক্যাপচার জরুরি যদি আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সীমিত আকারে রাখতে চাই।
ওরম ইয়াগির গবেষক দল এই কার্বন ক্যাপচার যন্ত্র উদ্ভাবনে ২০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এসেছে।
সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই ফুল মানুষকে মুগ্ধ করে এসেছে। ফুলের রঙ, সৌন্দর্য, গন্ধ মানুষকে করেছে আকৃষ্ট। ফুল শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গোলাপ, বেলি, রজনীগন্ধা ইত্যাদি নানা সুন্দর সুগন্ধযুক্ত ফুল। এসব ফুলের ঘ্রাণ পাগল করে আমাদের। নানা আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় ফুল। প্রিয়জনকেও ফুল উপহার দেওয়ার প্রচলন আমাদের মাঝে অনেক পুরোনো। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু ফুল রয়েছে, যার গন্ধ অতি জঘন্য। এসব ফুলের সৌন্দর্য দেখে কাছে গেলে নিজ থেকেই আপনি হাত দিয়ে নাক চেপে ধরতে বাধ্য হবেন। কারণ এসব ফুলের গন্ধে নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসতে পারে আপনার। চলুন আজকে জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গন্ধযুক্ত এমন একটি ফুল সম্পর্কে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গন্ধময় এ ফুলটির নাম অ্যামোরফোফালাস টাইটানিয়াম। এই ফুলটি ‘লাশ ফুল’ (Corpse flower) নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
সিডনির একটি গ্রিনহাউসে জন্মানো এই ফুলটিকে দেখতে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য দর্শনার্থী। অদ্ভুত এই ফুল থেকে মৃত পচনশীল মানবদেহের তীব্র গন্ধ বের হয়। ফুলের কাছে আসলে আপনার মনে হবে আপনি কোনো পঁচা গলা লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এজন্যই এটি ‘লাশ ফুল’ নামে পরিচিত। দর্শনার্থীরা এটাকে কেউ কেউ পঁচা মাংসের গন্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আবার অনেকেই পঁচা খাবার, ঘামযুক্ত মোজা বা এমনকি রসুনের গন্ধ বলেও উল্লেখ করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার বনাঞ্চল থেকে এসেছে এই উদ্ভিদটি। সিডনির রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের কর্মীরা আদর করে এর নাম দিয়েছেন ‘পুট্রিসিয়া’। পুট্রিসিয়ার প্রভাবশালী ‘ভক্তরা’ নিজেদের পরিচয় দেন ‘পুট্রিসিয়ান’ হিসেবে। দর্শকদের জন্য সেখানে লাল গালিচা ও ভেলভেট দড়ি দিয়ে সজ্জিত স্থানে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই উদ্ভিদের ফুল ফোটার প্রক্রিয়া প্রাকৃতিকভাবে সাত থেকে দশ বছর সময় নেয়। ডিসেম্বরে যখন এর ফুল দেখা যায় তখন এর উচ্চতা ছিল মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি)। কিন্তু পররবর্তীতে ফুলের স্পাইকটি ধীরে ধীরে খোলার সাথে সাথে এটি ১.৬ মিটার (৫ ফুট ৩) লম্বা হয়েছে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ফুলের তীব্র পঁচা গন্ধ আশেপাশের এলাকার ছড়িয়ে থাকে। তবে ভালো খবর হলো, এই ফুলটি চার থেকে পাঁচ বছর পর মাত্র একবার ফোটে এবং ফোটার পর ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তাজা থাকে!
তবে মজার বিষয় হলো রয়্যাল সিডনি বোটানিক গার্ডেনে এই বিরল প্রজাতির ফুলটি বিশ্বব্যাপী প্রায় এক হাজার অনুরাগীকে আকৃষ্ট করেছে। তীব্র পঁচা গন্ধ সত্ত্বে গ্রিন হাউজে জড়ো হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি, ২০২৫) । অবশেষে দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
গ্রিন হাউজের মুখপাত্র সোফি ড্যানিয়েল বলেন, তীব্র গন্ধের কারণে দর্শনার্থীদের জন্য বমির ব্যাগ রাখা উচিত কিনা তা নিয়ে আমরা প্রথম দিকে আলোচনা করেছিলাম। তবে এতে কারও ক্ষতি হয়েছে বলে শুনিনি।
লাশ ফুল মাত্র এক থেকে তিন দিন ফোটে, যদিও এর জন্য এক দশক সময় লাগে।
মিস ড্যানিয়েল বলেন, এগুলো খুব কমই খোলে, তাই খুব কমই ফুল ফোটে। কেননা, এই ফুলের প্রস্ফুটন একটি বিরল ঘটনা। কারণ, প্রস্ফুটনের জন্য পরিপূর্ণতা পেতে এই ফুলের সময় লাগে ৫ থেকে ১০ বছর।
তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীরা ফুলের কাছাকাছি যেতে চেয়েছে, কেউ কেউ ফুলের সামনে সেলফি তুলেছে, কেউ আবার ঝুঁকে ঘ্রাণ নিয়েছে। এক তরুণী পুট্রিসিয়ার সামনে মাথানত করে অভিবাদন জানান।
দিগন্ত জোড়া সবুজের বুক চিরে টলটলে পানির অপ্রশস্ত খাল। সে খালে ইঞ্জিনবোটের ফটফট শোনা যায় সারা দিনমান। যেনো সে শব্দেই জেগে থাকে আড়িয়ল বিল। কিন্তু কৃত্রিম সে শব্দকে উপেক্ষা করে এখানে ঋতুভিত্তিক সৌন্দর্য ফুটে থাকে। প্রকৃতি ধরা দেয় তার আপন চেহারায়। বিলের শো-শো বাতাস , শীতে পত্র-পল্লবহীন গাছেও পাখিদের কিচিরমিচির আর আর্দ্র মাটির বুকে সবুজে আবরণ প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার সাধ জাগায়। বিল জুড়ে জালের মতো ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট খাল। শীতে এই খালগুলোই বিলের আশীর্বাদ। বর্ষায় খালগুলো মিইয়ে যায় পানির তোড়ে। তখন বিল জুড়ে থৈ থৈ জল। কিন্তু শীত আর শুষ্ক মৌসুমে এই খালই ভরসা। খালই বিলের প্রাণ।
মুন্সিগঞ্জ জেলার ৯৪৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়েই এই আড়িয়ল বিল। যার দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটারের বেশি এবং প্রস্থ প্রায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। একদিকে পদ্মা নদী অন্যদিকে ধলেশ্বরী। তারই মাঝখানে এক বিপুল অবভূমি এই বিল। আড়িয়ল বিল। দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন জলাশয়। বর্ষায় বিশাল এই বিল পানিতে থাকে টইটুম্বর। শীতকালে এটি হয়ে ওঠে শীর্ণ-শুষ্ক। বিল রূপ নেয় ফসলের মাঠে। যতদূর দেখা যায় দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ শস্য খেত। প্রধানত ধান, সরিষা আর কুমড়ার চাষ হয় এই বিলে।
আড়িয়ল বিলের মাঠ থেকেই তোলা হয় বিপুলাকায় সব কুমড়া। বলা হয়, এই বিলের কুমড়ার আকারই সবচেয়ে বড়। এমনও শোনা গেছে একেকটি কুমড়ার ওজন ৪ মণেরও বেশি বেশি হয় এখানে।
বর্ষায় বিল ভরা মাছ , শুষ্ক মৌসুমে কুমড়া, শসা, আর নানা জাতের সবজি। আর হয় ধানের চাষ। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক ভাণ্ডার এই বিল। প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট আড়িয়ল বিলে ভাগ্য গড়ে, জীবিকা চলে এখানকার লক্ষ মানুষের।
এই যেমন মোহাম্মদ সেলিম। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়ল বিলে চাষ ফেলেন তিনি। কুমড়ার চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন। সন্তানদের ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে এখনো বিলের কাদা গায়ে মেখে দিনভর খাটেন তিনি।
মোহাম্মদ সেলিমের মত আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম। বংশ পরম্পরায় এ বিলের পানি ও মাটির সাথে তার সকল সখ্য। এখানে চাষ করে অভাব ঘুচেছে সংসারে। বিদেশ পাঠিয়েছেন দুই সন্তান।
সেলিম ও নূরুল ইসলামের মতো আরও অনেক কৃষকের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন প্রত্যেকের ভাগ্য বদলের পিছনে আছে প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট আড়িয়ল বিল। বিশেষ করে এ বিলে চাষ করা কুমড়াই এসব মানুষের ভাগ্য বদলের রহস্য।
মো. সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, "বোঝার বয়স থেকে আড়িয়াল বিলে খাইটা খাই। দাদা করে গেছেন , বাবা করেছেন, এখন আমি করি। সেই একই কাজ- কুমড়ার চাষ করি। এবারও আল্লাহর রহমতে ২-৩ লাখ টাকার কুমড়া বেচমু। লাউ আছে কিছু জমিতে। সেগুলো উঠামু।"
এবার একটু দাম কম এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, "দিন দিন ফলনও কমতেছে। তবে তাও যা ফলে সংসার চইলা যায়। ছেলে মেয়ে বড় হইছে। যা হয় দু:খ নাই । ভালোই চলছে।"
নুরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে এ বিলে পইড়া আছি। "এবার কানি পাঁচেক জমিন চাষ করছি ইরি ধান। ৪-৫শ মন ধান আল্লাহ দিতে পারে। কুমড়া বেচমু কয়েক লাখ টাকার । আমার পরিবারে ছেলে মেয়ে আমরা দুইজন নাতি নাতনি মিলে ১২ জন। সবার খরচ এই চাষ থেকে চলে। পোলারা দেশের বাইরে গেছে । আল্লাহ দিলে ভালোই চলে।
আরেক কৃষক আব্দুল গনি জানালেন, এই বিলে তাদের ভাগ্য বদলেছে । "বর্ষায় মাছ, শুষ্ক মৌসুমে ধান, সরিষা, কুমড়ার চাষ আমাদের ভাগ্য বদল করেছে ।"
কয়েক লাখ মানুষ এই বিলে খেটে বাচে। এই অঞ্চলের মানুষ আগে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করত। বিল পারি দিয়ে দিনে অন্যত্র কাজে যেত আর অনেক রাতে ফিরে আসত বাড়ি। কিন্তু অনেকের জন্যই এখন সেই দিন গত হয়েছে। এই বিলে চাষাবাদ ও তা থেকে উৎপাদন হওয়ার পর থেকে এখন অনেকেরই জীবনে সচ্ছলতা এসেছে । বিলে চাষাবাদ করে আয় করা অর্থে অনেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন সন্তানদের। আর সেই বিদেশ থেকে আসা অর্থে তাদের বড় বড় ব্যবসা হয়েছে। বড় বড় বাড়ি হয়েছে।
"কুমড়া মানুষের দুঃখ ঘুচাইছে এখন আল্লাহ দিলে অনেক চাষ হয়। নতুন করে শাপলা চাষ হচ্ছে। তাতেও অনেক মানুষের বেকারত্ব ঘুচেছে। জীবিকা হয়েছে। আমরা আরিয়াল বিলকে আশির্বাদ মনে করি," বলেন আব্দুল গনি।
চাষপদ্ধতি নিয়ে জানতে চাইলে চাষিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে টইটুম্বুর পানিতে আড়িয়াল বিল দখল করে কচুরিপানা। পানি কমলে সেই কচুরিপানা দিয়েই তারা ভিটা তৈরি করেন। এমন একেকটি ভিটা তৈরিতে খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা । পরে রোদের তাপে কচুরি পানা পচে শুকিয়ে মিশে যায় মাটির সাথে। ততদিনে ভাদ্র মাস হাতছানি দেয় প্রকৃতিতে। মিষ্টি রোদের ঝলমলে পরিবেশে কুমড়ার বীজ বোনা হয়। শুরু হয় ভাদ্র থেকেই। শেষ হয় কার্তিক মাসে।
কেউ কেউ শোনালেন সবচেয়ে বড় কুমড়ার জাত চৈতালির কথা। বললেন, আড়িয়ল বিলে একসময় শুধু চৈতালি জাতের বড় আকারের কুমড়ার চাষই হতো। তবে এত বড় কুমড়া খুচরা বাজারে বিক্রি অপেক্ষাকৃত দুষ্কর। এ কারণে ব্যবসায়িক মন্দা দেখা যেতো। তাছাড়া রয়েছে ইঁদুরের উৎপাত। একটি বড় কুমড়া ইঁদুর কাটলে গোটাটাই নষ্ট। এসব কারণে চৈতালীর কদর এখন কিছুটা কম। এখন বিভিন্ন জাতের কুমড়ার চাষ হয় এখানে। বিশেষ করে হাইব্রিড জাতের কুমড়া চাষে আগ্রহ বেশি কৃষকদের। কারণ এর ফলন বেশি।
ইন্দোনেশিয়ান বেঙ্গল টু ,মল্লিকা-১, লাল তীরসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের কুমড়ার বীজ বপন করেন কৃষকরা। ঢাকার সিদ্দিক বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয় বীজ। কার্তিক মাসে বীজ বপণের পর থেকেই শুরু হয় পরিচর্যা। এরপর বীজ ফুটে গাছ হয়। বাড়তি পরিচর্যায় গাছ বড় হতে থাকে। আর পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত গাছগুলোয় কুমড়া ফলতে থাকে। যা বাজারজাত করা হয়। আড়িয়ল বিলের কুমড়ার কদর আছে ক্রেতাদের কাছে। তাই নামেও চলে অনেক কুমড়া। আর স্বাদেও তা সেরা।
ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ কেউ এখনো বাণিজ্যিকভাবে চৈতালির চাষ করেন । সৌখিন চাষীরাই বেশি করেন। তবে সে সংখ্যা এখন অনেক কম।
বাজারজাত করারও রয়েছে বিশেষ কৌশল। বিস্তৃত খেত থেকে কুমড়া কেটে নৌকা করে খাল বেয়ে নেওয়া হয় বিলের ঘাটে। সেখান থেকে ছোট বড় নৌকার ওপরেই গাদি ঘাটে সাজানো হয় কুমড়ার পসরা। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে তা নিলামে উঠে। দর হাঁকে কৃষক। দর কষাকষির এক পর্যায়ে নির্ধারণ হয় কুমড়ার কাদির দাম। এর পর ট্রাকে উঠানো হয় কুমড়া। শুরু হয় কুমড়ার বাণিজ্যিক যাত্রা। আগে ঢাকার শ্যামবাজারে কুমড়া গুলো বিক্রি হলেও এখন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কেজি হিসেবে বিক্রি হয় ।
জোবায়ের মোল্লা নামের একজন কৃষক জানালেন, আগে কুমড়া বাজারজাত করতে শুধু নদী পথ ব্যবহার হতো। ছোট ছোট নৌকা ও ট্রলারে কুমড়া উঠিয়ে নেওয়া হতো গাদি ঘাটে। সেখান থেকে আবার নদী পথে শ্যামবাজার যেত। এরপর দেশের বিভিন্ন বাজারে মিলত আড়িয়াল বিলের কুমড়া।
এক দিকে যেমন কদর কমেছে চৈতালি জাতের কুমড়ার । অন্যদিকে সক্ষমতাও কমেছে আড়িয়ল বিলের চাষাবাদের। তা ছাড়া খণনের অভাবে বিলের খালগুলোও হয়ে পড়ে পানিশুণ্য। কৃষকদের অভিযোগ, রাস্তাঘাট না থাকায় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পণ্য আনা নেওয়া করতে হয়। এতে ভোগান্তির শেষ নেই। এছাড়া কৃষি অধিদফতরের আওতাধীন সুযোগ সুবিধাও পান না এখানকার কৃষকরা।
গাদি ঘাট এলাকায় কথা হয় কৃষক আবু বক্করের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বারো মাসই কষ্ট করি। মোবাইলে অনেক খবর দেখি সহযোগিতা পায় সবাই। আমরা তো পাইনা । এখানে রাস্তা না থাকায় আমাদের চলাচলে কষ্ট। ধান কুমড়া আনা নেওয়ায় অনেক কষ্ট করতে হয়। আমাদের দাবি এখানে উন্নত প্রযুক্তি আসুক খাল গুলো খনন করা হোক ।
একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা যায় না এ দিকে। কোন সহযোগিতা পাই না আমরা। বিলের কৃষিভিত্তিক আধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানালেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বার্নিং ম্যান’। উৎসবটি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ব্ল্যাক রক সিটির মরুভূমিতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, উদ্যোক্তা এবং দর্শকেরা এসে একত্রিত হন। সৃজনশীলতা, মুক্ত পরিবেশ, স্বাধীনতা—এগুলোই হচ্ছে উৎসবের মূলমন্ত্র। একই আদর্শে সংগীত, শিল্পকলা ও প্রকৃতির মিশেলে ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি অভিনব উৎসবের আয়োজন হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে। উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’। এতে বিভিন্ন দেশের শিল্পী, উদ্যোক্তা আর সৃজনশীল মানুষেরা অংশ নেবেন।
মারমেইড বিচ রিসোর্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবকে ঘিরে রিসোর্টে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফেস্টিভ্যাল ঘিরে পুরো রিসোর্টে করা হচ্ছে আলোকসজ্জা। নানা সৃজনশীল আর্টের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে পুরো রিসোর্ট। তৈরি করা হচ্ছে ৫ টি মঞ্চ।
মারমেইড ইকো-ট্যুরিজম লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) রেক্সি ডমিনিক গমেজ জানান, "বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল হতে যাচ্ছে তিনদিনের এমন একটি জমকালো উৎসব যেখানে জাপান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা এবং রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের পারফরম্যান্সের দারুণ এক কম্বিনেশন। সঙ্গীতের পরিবেশকে আরও রঙিন করে তুলতে এই উৎসবে যুক্ত হবে মুখরোচক সব খাবার, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং উপকূলীয় সৌন্দর্যের এক দারুণ মিশেল"।
তিনি আরও জানান, উৎসবের জন্য থাকবে দৃষ্টিনন্দন ৫টি মঞ্চ, বিজলিবাতির নৌকা বা মুনবোট লাইট শো, ফায়ার শো, সি-ফুড মেডিটেশন, ইয়োগা সেশন, আর্ট থেরাপি, আর্ট ওয়ার্কশপ সহ নানা আয়োজন। এছাড়া থাকবে ওয়ার্ল্ড ফুড মার্কেট, ফ্লুটিং মার্কেট, ফ্যাশন মার্কেট এবং বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা মানুষদের নিয়ে টক শেসন।
শিল্পী রনি আহম্মেদ বলেন, আর্ট তৈরি করে বার্নিং ক্রেবের সাথে মার্চ করা হয়েছে যাতে লোকজন মিউজিকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। ঐরকম একটা আার্টিস্টিক মিউজিক্যাল এক্সপেরিয়েন্সের সাথে সাথে পিউর আর্টের যে এক্সপেরিয়েন্স সেটি দেওয়া হবে। মারমেইড এটা সবসময় করে তবে এবার আরেকভাবে হবে।
উৎসবের আয়োজক মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘টেক এ ব্রেক’–এ উৎসবের মূল ধারণা। আয়োজনের তিন দিনে অতিথিদের রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। থাকবে দেশ সেরা রাঁধুনিদের তৈরি করা সুস্বাদু খাবার ও পানীয়র আয়োজন।
আয়োজনের পুরোভাগে তারকা রাঁধুনি ইনারা জামালের সৃজনশীল পরিবেশনা থাকবে। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কিউরেটর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন জাপানের বিখ্যাত ফেস্টিভ্যাল আর্কিটেক্ট ও লাইটিং ডিজাইনার জিরো এনদো।
বর্ষার পাশাপাশি শীতের শুরু থেকে বাড়তে শুরু করে আড়িয়ল বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিলের প্রধান চাষাবাদে ভরে থাকে বিল। কুমড়ার খেত, বিস্তীর্ণ সরিষার চাষ, এখানে ওখানে নতুন ধানের রোপণ, আর খালে প্রবাহিত পানিতে নৌকার বিচরণ মন কাড়ে সবার। পাশাপাশি এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখির আনাগোণা। দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখির সাথে অতিথি পাখির বিচরণ আলাদা এক সৌন্দর্য যুক্ত করেছে এই আড়িয়ল বিলে। এ যেন পাখিদের এক অনন্য মিলনমেলা।
মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে ঘুরে দেখা যায় অতিথি পাখিরা এসে ভীর করেছে। হাজার হাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক উড়ে আসছে। বিভিন্ন জলাশয় ও সবজি খেতে বিচরণ করছে এসব পাখির দল।
পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি অবভূমি এই আড়িয়ল বিল। দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর থাকলেও আড়িয়ল বিলের বেশিরভাগ অংশই শুষ্ক ঋতুতেও আর্দ্র থাকে। কোথাও কোথাও, বিশেষ করে খালগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ পানির সঞ্চারণ দেখা যায়। তবে শীতকালে একটি বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়।আড়িয়ল বিল। আর শুরু হয় পাখির আনাগোণা।পাতিহাঁস, সাদা বক, মদনটাক, কানি বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল, মাছরাঙা এসব দেশি পাখির পাশাপাশি বালিহাঁস, সাদা গাঙচিলসহ নাম না জানা অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে আড়িয়ল বিল।
স্থানীয়রা বলছেন, দেশে শীত বাড়ার সাথে সাথে পরিযায়ী পাখির আগমন বেড়েছে। এর মধ্যে শামুকখোল, সাদা বক, বালি হাঁসের পরিমাণ বেশি। এরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে। ভোর থেকেই খাদ্যের সন্ধানে পাখিদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সন্ধ্যার আগেই অতিথি পাখিরা আহার শেষে ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায়। আশ্রয় নেয় বিলের উঁচু গাছে। খুব কাছ থেকে এসব পাখির বিচরণ উপভোগ করতে পেরে আনন্দ পান এই মানুষেরা।
বিস্তীর্ণ আড়িয়ল বিলের কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জমিতে পাখিরা দল বেঁধে খাদ্যের সন্ধান করছে। অল্প পানিতে ছোট ছোট মাছ ও শামুক ধরে খাচ্ছে।
উপজেলার বীরতারা, পাটাভোগ, পশ্চিম নওপাড়া, আটপাড়া, গাদিঘাট এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ও ধানের জমিতে অতিথি পাখির বিচরণ চোখে পড়ে। খেতে কাজে ব্যস্ত চাষীদের মতো যেন পাখিগুলোও দিনভর ব্যস্ত খাদ্য সংগ্রহে।
সাইবেরিয়া অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে পানকৌড়ি, বালিহাঁসসহ বিভিন্ন জাতের অতিথি পাখিরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে।
পরিযায়ী পাখির দল শীতপ্রধান দেশ থেকে আবাসস্থল অনুপযোগী হওয়া, খাদ্যের অভাব ও প্রচণ্ড শীতের কবল থেকে নিজেদের বাঁচাতে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাতিশীতোষ্ণ অংশে উড়ে আসে। বিশেষ করে আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখির দল আসতে শুরু করে। এরা ফসলের খেত, জলাশয়ে ঘুরে কীটপতঙ্গ, মাছ খেয়ে জীবন বাঁচায়।
অতিথি এই পাখিদের সুরক্ষা সকলের দায়িত্ব।দেশের প্রচলিত আইনে এসব অতিথি পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
প্রকৃতি গবেষকরা বলছেন, অতিথি পাখিসহ সকল প্রজাতির দেশীয় পাখি দেশের সম্পদ। এরা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই পাখি রক্ষায় সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগ করে প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখা উচিত।