তাহসান নয়, মিথিলা বা রোজা জিতেছে: তসলিমা নাসরিন
জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খানের নতুন বিয়ের খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই পড়ে গেছে। ফেসবুকে অসংখ্য পোস্টে দেখা গেছে একটি কথা, তা হলো ‘তাহসান জিতেছে’। এবং সেই পোস্টগুলো নব্বইভাগই পুরুষের।
ফলে এ নিয়ে নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে কিছু লিখবেন সেটা মোটামুটি অনুমেয় ছিলো। এবার সত্যি হলো অনুমান। একটু আগেই বেশ লম্বা একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা। তা পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘‘ফেসবুক ছেয়ে গেছে ‘তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে’ রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো! হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান? আসলে যারা জিতেছে জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে, তারা চেঁচাচ্ছে কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়ে, ডিভোর্সী হয়েও একটা ‘কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে’ পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা ‘জিতে যাওয়া’ই মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেই দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। স্ট্রাগল করার সময় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে পুরুষতান্ত্রিক নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলাকে নিয়েও কম কুৎসা রটানো হয়নি।
তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারছে- নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না কুৎসা বা নিন্দে, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভাল না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক, সে স্বামী হোক, ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে, এ জিতে যাওয়ার তৃতীয় শর্ত। তাহসানকে যদি কখনও পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে তাহসানকে ত্যাগ করার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই চ্যালেঞ্জে জিতেছে। জয়তু নারী।’’