ছোট ছেলের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি প্রবীর মিত্র
সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্রর চার সন্তান। সবচেয়ে ছোট ছেলের নাম সামিউল ইসলাম। ছোট ছেলেকে অকালে হারিয়েছিলেন তিনি। তখন সামিউলের বয়স ছিল ৩০, ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করেছেন। হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান সামিউল। জীবদ্দশায় আদরের সন্তানের মৃত্যু তাড়িয়ে বেড়িয়েছে প্রবীর মিত্রকে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রোববার প্রবীর মিত্র মারা যান। যেন প্রিয় সন্তান সামিউলের কাছেই ফিরলেন তিনি। প্রায় ১০ বছর আগে ইউরো দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিউলকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছিলেন এই খ্যাতিমান অভিনেতা।
সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র বলেছিলেন, ‘ও (সামিউল) বাইরে খেতে পছন্দ করত। বাইরে থেকে পরোটা নিয়ে এসেছিল। পেটে গ্যাস হয়েছিল। পরে স্ট্রোক হয়ে ছেলেটা মারা গেল। ছোট ছেলের মৃত্যু আমাকে খুব পীড়া দেয়। আমি ওকে ভুলতে পারি না।’
১৯৭৩ সালে অজন্তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রবীর মিত্র। বিয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। সামিউলের মৃত্যুর আগে ২০০০ সালে স্ত্রী অজন্তা মিত্রও মারা যান। প্রবীর মিত্র বলেন, ‘ওর মায়ের (অজন্তা) সঙ্গে ওর (সামিউল) নব্বই ভাগ মিল ছিল। চোখ, নাক, হাত, গায়ের রং মায়ের কাছাকাছি ছিল।’
প্রবীর মিত্রর চার সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম ও সামিউল ইসলাম। সামিউল বাদে বাকি তিনজন বেঁচে আছেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত।
আজ সোমবার জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হয়েছে প্রবীর মিত্রর। দুপুরে তার মরদেহ এফডিসিতে নেওয়া হয়। এরপর চ্যানেল আইয়ে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে খ্যাতিমান এ অভিনেতাকে।
১৯৪১ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুনবাজার গুয়াখোলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। দাদার বসতবাড়ি কেরানীগঞ্জে। প্রয়াত এ অভিনেতার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়–পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।