পদকের জন্য ভাই কোনো কষ্ট পাননি: শিবলী মহম্মদ

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাদি মহম্মদে ও শিবলী মহম্মদ

সাদি মহম্মদে ও শিবলী মহম্মদ

বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অনন্তলোকে পাড়ি জমান গুণী এই শিল্পী। সংগীত জগত থেকে শুরু করে সব জায়গায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ভাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ

সাদি ছিলেন আমার বন্ধুর মতো, পরামর্শক! আমরা সংগীতের দুই দিকে গিয়েছিলাম। সংগীত ও নাচ। ভাই যেহেতু রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, সেহেতু আমার নাচের কস্টিউম কেমন হবে, এক্সপ্রেশন কেমন হবে, রবীন্দ্রনাথের গানের কথার মূলভাব যত্ন করে বুঝিয়ে দিতেন। আমরা একসঙ্গে ছবি দেখতাম, গান শুনতাম। আমি কী খাবো, তিনি কী খাবেন সবকিছুই একই ছন্দে চলতো আমাদের। মায়ের চলে যাওয়াটা আমাদের থামিয়ে দিয়ে গেছে। আমি তো কাজে ব্যস্ত থেকে কিছুটা উতরে গিয়েছিলাম।

একটি বন্ধুমহল ছিল। নীপা, শাকিলা, তপন, সুকল্যাণ, হিরু, কাজল আপাসহ বেশ কয়েকজনের একটি সার্কেল। মা হারাবার পর আমারও ডিপ্রেশন আর একাকীত্ব ঘিরে ধরেছিল। আমি চেষ্টা করেছি, বন্ধু আর নাচের ক্লাসের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবকিছু ভুলে থাকতে। তবে সাদি গানের ক্লাসের পরের সময়টুকু একা থাকতেই পছন্দ করতেন।

বিজ্ঞাপন
সাদি মহম্মদ

এই বেদনার দিনে যেটা আমাকে বেশি পীড়া দিচ্ছে, সেটি হলো, সোশ্যাল মিডিয়া এবং কিছু সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার ইস্যুতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রটানো হচ্ছে। এটা একদমই সত্যি নয়! আমরা কোনো পদকের জন্য কাজ করিনি। আমার ভাইয়ের এসব যন্ত্রণা একদম ছিল না। আমি একুশে পদক পেয়েছি, সে জন্য সম্মানীত বোধ করছি। তবে আমার একটু খারাপ লাগছিল যে, ছোট ভাই হয়ে বড় ভাইয়ের আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছি। তিনি অনেক উদার মনের মানুষ। তাই তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুই তো নাচের জন্য অনেক করেছিস। তুই পাওয়াতে আমি অনেক খুশি!’ তবে তিনি পুরস্কার প্রদানের দিন আমার সঙ্গে যাননি, নিজে পাননি সেই কষ্ট থেকে নয়! অহেতুক যদি কেউ তাকে প্রশ্ন করে বসে আপনাকে কেন দিলো না, এই প্রশ্নতে তিনি বিব্রত হবেন বলে তিনি সেদিন আমার সঙ্গে যাননি।  

একটি মেডেল নিয়ে কেউ কেউ ইস্যু তৈরি করছেন। সাদির রবীন্দ্রসংগীত শোনেন কোটি কোটি বাঙালি। এ রকম শিল্পীর পদকের জন্য আহাজারি থাকার কথা নয়। তিনি পদকের জন্য কোনোভাবেই কষ্ট পাননি। সাদি মহম্মদের জনপ্রিয়তা পৃথিবীর কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। পদক নিয়ে কথা হলে সরকারও বিব্রত হবে! সাদিকেও ছোট করা হবে! স্বীকৃতি পেলে ভালো লাগে। তবে সাদি মহম্মদ সবকিছুর ঊর্ধ্বে একজন শিল্পী। তাই, পদকের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর রটনা আর কেউ করবেন না, এটি সাদি মহম্মদের ভক্তদেরও অনুরোধ।

মা ও বড় ভাই সাদির সঙ্গে শিবলী মহম্মদ

মাকে ঘিরেই ছিল আমাদের সংসার। মা ছিলেন আমাদের পুরো পৃথিবী। আমাদের মা ৯৬ বছর বেঁচে ছিলেন। তাকে আমরা মাথায় করে রেখেছি। মাকে বলতাম, মা আর কী করবো? মা বলতেন, আর কী করবি! তোরা আমাকে তো মাথায় করে রেখেছিস। যখন শিল্পকলা পদক পেয়েছি, মাকে এনে দিয়েছি। মা যে কী খুশি হয়েছেন! মা-কেন্দ্রিক সংসার অনেক মূল্যবান!

শেষে বলতে চাই, ভাই, তো ভাই-ই! ভাইকে তো কোনো বিশেষণে বিশেষিত করা সম্ভব নয়। তবে ভাইটা আমার বড় ভালো মানুষ ছিলেন। তার ঈশ্বর প্রদত্ত গলা ছিল। আমাদের একদম একা করে চলে গেলেন। এটা কী ঠিক করলেন! আমাদের কথা একটুও ভাবলেন না! ভাইয়ের প্রতি আমার বড্ড অভিমান রয়ে গেল। আমি শুধু বলবো, ‘ভাই, তুমি যেখানে থাকো, ভালো থেকো! আমার বন্ধু হয়ে থেকো!’