চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্ট্যাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) উদ্যোগে ‘শ্বেতপত্র প্রকাশই শেষ কথা নয় সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি’ শীর্ষক মুক্ত সংলাপ আয়োজিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে এই মুক্ত সংলাপ শুরু হয়। যা চলে টানা সাড়ে তিন ঘন্টা।
সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ও চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপ উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় সংলাপে মুখ্য আলোচক ছিলেন অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক, প্যানেল আলোচক ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আর হক। এতে ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন ড. মো শহীদুল হক।
চবির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রসেসর ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা অসংখ্য কমিশন হতে দেখেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় বলে, কোন বিষয়কে যদি ধামাচাপা দিতে হয় তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু নয়টি কমিশনের একটিও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৫৩ বছর নির্বাচন দেখেছি, আর নির্বাচন দেখতে চায় না। বর্তমান সরকারের সংস্কার কাজে রাজনৈতিক দলগুলোকে সময় দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সমাজের রন্ধে-রন্ধে যেরকম দুর্নীতি, যেরকম অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ঢুকে গেছে। এর থেকে শুদ্ধ করতে হলে একটা শুদ্ধাচার লাগবে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ড. এ কে এনামুল হক রাষ্ট্র সংস্কারের শ্বেতপত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে মেজর সংস্কার করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা ফলপ্রসূ কিন্তু এখানে ইনকাম কম হওয়ায় এদিকে কেউ পড়তে আসেনা। আমাদের দেশ আপাদমস্তক দুর্নীতিতে মোড়ানো। দুর্নীতি দূর করতে মেইন জায়গায় হাত দিতে হবে। আমাদের দেশে ২৮ ধরণের দুর্নীতি হয়ে থাকে। আমরা যেগুলো নিয়ে ব্যস্ত আছি সেগুলো প্রধান দুর্নীতি নয়। ভেতরে অনেক ভয়ংকর অবস্থা। এগুলো থেকে বের হওয়া খুব সহজ হবে না। এগুলোকে দমন করতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিছু কমিশিন গঠন করা হয় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরিই ইন্ডিপেন্ডেন্ট থাকতে পারে না। সামাজিক অবস্থা এখন যে অবস্থায় আছে তাতে মনে হয় না যে দুর্নীতি মুক্ত হবে দেশ। আমাদের আরেকটু সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।
বেগম ইসমত আরা হক বলেন, দেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছে এর জন্য অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার ফলাফল আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়াও শ্বেতপত্র প্রকাশ করেই কাজ শেষ নয়। এটা বাস্তবায়নে আমাদের সকলকেই কাজ করতে হবে। শ্বেতপত্রের সুপারিশ আমরা বাস্তবায়ন করব।
চবি পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, এই সরকার আমাদের অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ের ফসল। তাই এই সরকারকে কোন ভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই। দেশের সর্বত্রই ছিল দুর্নীতিগ্রস্থ। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ব্যতীত কোন বিকল্প নেই।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ফ্যাসিবাদ সরকারের শ্বেতপত্র পেশ করেন। তিনি দেশে বিদ্যমান ১০ টি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হল বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, খেলাপী ঋণ, নড়বড়ে আর্থিক খাত, উচ্চ জ্বালানী তেলের দাম, বিনিয়োগ স্বল্পতা, অপ্রতুল কর রাজস্ব, ক্রমবর্ধমান ক্ষণ, আয় ও সম্পদ বৈষম্য।
তিনি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের একটা ভংগুর অর্থনীতি ও বৈষম্যে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ দিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে এ থেকে উত্তরণ করতে। আমাদের সকলকে এ কাজে সহযোগীতা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, শ্বেতপত্র নিয়ে দেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম এমন আয়োজন করেছে। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। এটাকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে। শ্বেতপত্রটি আহামরি কিছু নয় ১৫ বছরের দুর্নীতি মাত্র এক মাসে তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে ভালো কিছুর সূচনা হয়েছে।
মুক্ত সংলাপে বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, ডিন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।