বেরোবিতে প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও হয়নি সমাবর্তন

  • বেরোবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি সমাবর্তন। গত বছরের প্রথম কোয়ার্টারে হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর হয়ে ওঠেনি। তবে এই বছরেই সমাবর্তন হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো.শওকাত আলী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত মূল সনদ ছাড়াই প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী পাস করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী মূল সনদ না পাওয়ায় দেশের বাহিরের বিভিন্ন স্কলারশিপ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারতেন না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার তৈরি হলে ২০২৩ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.হাসিবুর রশিদ সমাবর্তন ছাড়াই মূল সনদ দেন। এছাড়াও তিনি তখন ঘোষণা দেন ২০২৪ সালের প্রথম কোয়ার্টারে সমাবর্তন করবেন। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে বলে জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়। পরে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

এইদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে গত ৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন উপাচার্য ড. হাসিবুর রশিদ। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে যোগদান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড.শওকাত আলী।

বিজ্ঞাপন

সমাবর্তন না হওয়ায় আক্ষেপ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাকের হোসেন পাশা বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সমাবর্তন আমাদের কাছে একটি বিশেষ দিন। চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত এই ডিগ্রি প্রদানের দিনটি সব শিক্ষার্থীর কাছে বেশ গুরুত্ব বহন করে। প্রত্যেকে চান দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। তাই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ছবি তুলে রাখেন। অনেকে মা-বাবাকে সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন এবং তাদেরও গাউন পরিয়ে তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে সন্তানের শিক্ষা সমাপনী মা-বাবাকে স্মরণ করে রাখার জন্যই হলেও দিনটির বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বাইজিদ আহমেদ রনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমার একটি আবেগের জায়গায়। দীর্ঘ ১৬টি বছর পার করলেও এখনো সমাবর্তন আয়োজন করা হয়নি। আমরা দেখি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এক দশক পার হলেই সমাবর্তন হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) এখনো সমাবর্তন নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তন করে মেইন সার্টিফিকেট নেয়। কিন্তু আমরা সমাবর্তন ছাড়াই মেইন সার্টিফিকেট নিয়েছি। এটি একটি কষ্টের জায়গা। আমরা আশা করব বর্তমান প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তন আয়োজন করবে।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ১৬ বছরেও সমাবর্তন নেই এইটি দুঃখজনক। আমরা জেনেছি উপাচার্য মহোদয় বলেছেন তিনি সমাবর্তন করবেন। আমরা আশা করি তিনি খুব শীঘ্রই তা করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সমাবর্তন নিয়ে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। খুব শীঘ্রই দিন তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। আমি সমাবর্তন করার জন্য আগ্রহী এবং সেটি আমি এই বছরই করব। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আগামী একাডেমিক কাউন্সিল দিন তারিখ ঠিক করা হবে।