গলির মোড়ে, কার্ণিশের গায়ে ইন্টারনেট ঝুলে পড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একরকমের ট্রেন্ডি হয়ে উঠছে বাঙালি দিনকে দিন।
ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার এসব তো এখন আঙুলের ডগায়। ছুঁয়ে দিলেই মেলে। সহজলভ্য হয়ে গেলে যা যা হয় আর কি, কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
এই যে ট্রেন্ডি হয়ে ওঠা, এটা ঠিক এমন যে- ‘আজ গরীব বলে, ডট ডট ডট’, ‘ডট ডট ডট, একদিন তো মরেই যাবো!’ এসবও ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে।
আরও অনেক অনেক বিষয়, যেটা কিনা কখনোই আলোচনা হওয়ার নয়, সেসব নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। কে কেন এসব করছে, আদতে কেউ কিচ্ছু জানে না। তলিয়ে তো ভাবেই না! সবই ট্রেন্ড। এই ট্রেন্ড ফলো করতে গিয়ে অনেক কিছুই করতে হয় বলেই এসব করে লোকে। নতুবা ইজ্জত থাকে না।
নুসরাত ফারিয়ার পটাকা গান নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছে, হচ্ছে এখনও। পড়শীর রাস্তা নিয়েও তাই। যদিও, এই এক মাসেই মিউজিক ভিডিও দুটি ভিউ পেয়েছে পাঁচ মিলিয়নেরও অধিক।
এটা কেবল ইউটিউবের হিসেব। আরও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তো আছেই। কমেন্ট যা এসেছে, তার অধিকাংশই নেতিবাচক। কিন্তু কেন!
কারণটা অধিকাংশ কমেন্টকারীই জানে না। ঢুকে দেখেছে দশ হাজার ডিজলাইক, সেও একটা দিলো। দেখেছে দশজনের নেগেটিভ কমেন্ট, সেও একটা করলো। ট্রেন্ড মেন্টেইন যাকে বলে।
হাজারও চেষ্টা চরিত্র করে বা সাজগোজ, শরীরী ভঙ্গিমা আর সুরের মাধুকরী দিয়েও বাহবা কেন পেলো না পটাকা বা রাস্তা! এটা ভাববার বিষয় মনে হলেও, আদতে তা নয়। কারণ, বাঙালি ফেসবুকার আর ইউটিউবাররা কখন কেন কোনটাকে বাহবা দেবে, আর কোনটাকে লবডঙ্কা দেখাবে; তা কেউ ধারণাও করতে পারে না।
ধরে নিলাম, নুসরাত ফারিয়া খুব খারাপ গেয়েছে। রাকিব রাহুলের লিরিকের ‘রে পটাকা’ শব্দটা গানে এভাবে শুনতে ভাল লাগেনি। সঙ্গে নাচটাও বেমানান। প্রীতমের কম্পোজিশন ভাল হয়নি। বাবা যাদবের ডিরেকশন একদম বাজে। ইভেন, পুরো প্রডাকশনটাই যাচ্ছেতাই। ধরে নিলাম এসব। তবুও কেন সেটা শুনতে হলো লোকের!
গানটা ফারিয়ার বলে? ফারিয়া কবে এত লোককে শিক্ষা-দীক্ষা দেয়ার দায়িত্ব পেয়ে গেলো যে ওর একটা ভরপুর বিনোদনের গান তথা আইটেম গান থেকেই সবার সব কিছু শিখতে হবে! এমন হলো কেন, অমন হলো না কেন; সব কেন ওকেই শুনতে হবে!
পড়শীর রাস্তার কী সমস্যা? রবিউল ইসলাম জীবন খারাপ লিখেছে, ওকে। জুয়েল মোর্শেদের কম্পোজিশন ঠিকঠাক হয়নি, ওকে। পলকের ডিরেকশন বাজে, ওকে। পড়শী কীসব নাচ-অভিনয় করলো, ওকে। তো? ওটাই কেন দেখতে হবে সবাইকে? আরও হাজার হাজার গান তো পড়েই আছে ইউটিউবে! ওসবেও তো চোখ বোলানো যায়।
বিষয়টা কোনোভাবেই এমন নয় যে, আমাদের হাতে অপশন নেই। প্রচুর টিভি চ্যানেল আসাতে যেমন রিমোট টিপে টিপে চ্যানেল পাল্টানোর সুবিধা হয়েছে, ইন্টারনেট আরও ব্যাপকভাবে সবাইকে হিউজ অপশনের সুবিধা দিয়েছে। ফারিয়ার গান ভাল হয়নি? ইগনোর করো, ব্যস। পড়শীর গান ভাল হয়নি? পাল্টে ফেলো, ব্যস।
কেউ কাউকে বাধ্য যেহেতু করছেনা জোর করে শুনতে, অপশনেরও যেহেতু লিমিটেশন নেই; কেন এত ফাটছে লোকের! কেন এতো হাত উঠে যাচ্ছে কীবোর্ডে আজেবাজে কমেন্ট করতে!
ওই যে বললাম, ট্রেন্ডি পিপল। এই এরাই ইউটিউবে ঢুকে তুমুল আগ্রহে রেশমি এলন-টেলন এদের নোংরা ভিডিও দেখে, আর নিচে গিয়ে লম্বা লম্বা ওয়াজ ঝেড়ে আসে। পটকা তো ফাটবেই!