কেমন ছিলেন রানী?

কী অবস্থায় ছিলেন রানী শেষ সময়ে?

  • মাহবুবুর রহমান সজীব
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ষাটের দশকের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা রানী সরকার, ‘প্যাথোজ কুইন’! পুরো নাম আমিরুন নেসা খানম।


১৯৫৮ সাল থেকে শুরু করে অন্তত ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিতাস একটি নদীর নাম, তালাশ, চান্দা, বন্ধন, চন্দ্রনাথ, দেবদাস, কাঁচের দেয়াল সহ বহু সফল ছবি রয়েছে তাঁর ক্যারিয়ারে।


সময়ের নির্মমতায় খুব দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন তিনি গত ক’বছর ধরে। শারীরিক অসুস্থতা আর অর্থাভাব তাঁকে চতুর্দিক থেকে প্রচণ্ড অসহায় করে রেখেছিল।

বিজ্ঞাপন

/uploads/files/Nod8lX2M91kkoL4nIyc9L2ipvNA596Qp9vaWcJuw.jpeg

আরও পড়ুন: কেমন ছিলো চিরকুটের বিলেত সফর?

সর্বশেষ যেদিন দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে, বলছিলেন-

পত্রপত্রিকা, বাংলাদেশ- আমার জন্য কীইবা এমন করল? বলোতো সত্যি কথা? এই মুহূর্তে যা কিছু তোমরা নিবা, লিখবা, ছবি তুলবা, যা কিছু করো না কেন- আমার কী লাভ? এতটুকু লাভ তো নেই-ই, বরং আমার বলতে এখন ভীষণ খারাপ লাগে।

আমি এত খারাপ অবস্থায় আছি এই মুহূর্ত পর্যন্ত, এত খারাপ অবস্থায় আছি- কোন ভাষা নেই তোমাদের জানাবার। কী কষ্টে আমার দিন যাচ্ছে! হায় হায় রে.. কার কাছে যাব, কোথায় যাব! কে আমার এই অভাবের খবর নেবে? এই দুর্দশার?

এ দোর ও দোর চার দোর থেকে কয়টা পয়সা ভিক্ষে করার মতন পাই, ভিক্ষে করি.. সেই দিয়ে বাড়ি ভাড়াটা দেই, আর সারাটা মাস না খেয়ে থাকতে হয়।

জাউ খাই, পানি দিয়ে ভাত কচলিয়ে খাই; এইভাবে বেঁচে আছি। কী তোমাদের বলব, কী তোমরা লিখবে! কী বা আমার উপকারে আসবে!

/uploads/files/SN7jgq6C6PQ1jOn1HDmF67qMcNAzPTnXqmapqYuD.jpeg

একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অবসাদগ্রস্ত রাণীর ভেতর থেকে। চুপ করে রইলেন। এই সময়ের পরিচালক যারা, তারা নাকি কাজ করার জন্য যোগ্যই মনে করতেননা দাপুটে এই অভিনেত্রীকে!

বললেন-

আমাদের সময়ে বাংলাদেশে পরিচালক যারা এসেছে, তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গে আমার কাজ করা হয়নি। তবে এখন যারা কাজ করছে, তারা তো বিগ বিগ ব্যাপার!

সেই সব জায়গায় আমাদের যাওয়ার ক্ষমতা নেই, তারা আমাদের ঠিক যোগ্য বলে মনেই করে না! তাদের চোখে আমরা ভয়ঙ্কর অযোগ্য।’

/uploads/files/QM2juyvaI2gYJEhK56ySjXCbT9pbLtlQVXkCHP3P.jpeg

বলতে বলতেই আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে রানী সরকার। গালের দু’পাশ দিয়ে জলের চিকণ ধারা বইতে শুরু করল।

আরও পড়ুন: সীমানা পেরিয়ে শম্পার ছবি

আবার শুরু করলেন-

আমি সিনেমায় কী করতে এসেছিলাম? যে ক’টা দিন বেঁচে থাকি, মানসম্মানের সঙ্গে থাকব, এভাবেই একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে যাব- এটাই তো? কিন্তু আজ আমি ভিখারীর মতো হাত পাতছি মানুষের কাছে। কেন? এই কেনর উত্তর কেউ দিতে পারবে না..

পারেওনি দিতে। চলেই গেলেন তিনি শেষ পর্যন্ত। আজ শনিবার, ভোররাত চারটায়।

/uploads/files/MMqn7aj4GfQiEBh7tSxRJPUc3dU5hUPzl5QRl979.jpeg

কিন্তু এভাবে আর কত? আর কত রাণী সরকারের আর্তি শুনতে হবে? শুনতেই বা হবে কেন?

রানী সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে সেবার যখন নেমেছিলাম রাস্তায়, তখনও ভেতরটা কেমন কাঁদছিল, ধুঁকছিল লজ্জায়। এই লজ্জা আমার একার নয়, আমাদের সবার..।

বার্তা২৪-এ আরও পড়তে পারেন:

সাঞ্জুর অজানা সাত
এই পপি, সেই পপি..
সানি লিওনি’র না বলা গল্প