চার ইস্যুতে ফের টালমাটাল পুঁজিবাজার

  • মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

চার ইস্যুতে আস্থা ও তারল্য সংকটে ফের টালমাটাল হয়েছে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। অব্যাহত রয়েছে দরপতন। প্রায়দিনই কমেছে লেনদেন ও সূচক। ফলে কমেছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিও।

ইস্যুগুলো হচ্ছে- গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের অনিয়ম ও নৈরাজ্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া।

বিজ্ঞাপন

নতুন ফান্ড না আসা এবং উল্টো শেয়ারের ডিমান্টের তুলনায় সাপলাই বেশি হওয়ার ফের আস্থা ও তারল্য সংকটে পড়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজার বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ সময়ে শেয়ারের দাম কম থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে যা বাজার জন্য পজেটিভ বলে মনে করেন তারা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য মতে, এর ফলে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময়ে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে পুঁজি নেই হয়েছে ২ হাজার ৭৫ কোটি ৫৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এ সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৩০৮ পয়েন্ট। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেনদেন ১ হাজার কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকার গড়ে নেমে এসেছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ২৯১ কোটি ৭৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। প্রধান সূচক কমেছে ১০০৬ পয়েন্ট। লেনদেন কমেছে অর্ধেক। ফলে ব্রোকারেজ ব্যবসায়ীরা আবারও লোকসানের মুখে পড়ছেন।

তবে তার আগে ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়। তাতে বিনিয়োগকারী ও ব্রোকরেজ হাউজ ব্যবসায়ীরা লাভমান হয়।

নাম না প্রকাশের শর্তে ইবিএল, শাকিল রিজভী এবং শেলটেক ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডার বার্তা২৪.কমকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষামতায় আসার পর একটি গ্রুপ ২০১৯ সালে বাজার ভালো থাকবে বলে গুজব ছড়ায়।

এরপর মন্ত্রী-এমপিদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তাদের হাত খালি। তারা কম দামে শেয়ার কেনার জন্য আবার বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে নেতিবাচক খবর ছড়াচ্ছেন।

তারা বলেন, এই চক্রের মূল হোতার মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সুবিধা নিতে পরিকল্পিতভাবে বাজারে দরপতন অব্যাহত রাখছেন আর বিনিয়োগকারীরা তাতে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। হুজুগে পড়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি বর্তমান ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুঁজিবাজার ভালো না হওয়ার মূল কারণ চাহিদার চেয়ে আইপিও, রাইটের বোনাস শেয়ারের সাপলাই বেশি। ফলে বাজার মূলধন বাড়ার সঙ্গে বিনিয়োগকারী বাড়ছে না।

তিনি বলেন, এ কারণে প্রতিনিয়তই শেয়ারের দাম কমছে। আর এ সুযোগ নতুন করে প্রাইভেট প্লেসেমেন্ট বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারটিতে নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অনিয়ম ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর বিনিয়োগকারীরা আবারও পর্যবেক্ষণের মুডে চলে এসছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের দুরবস্থা এবং প্রয়োজনের তুলনায় বিনিয়োগ না বাড়ায় দেশের অর্থনীতি এখনো গতিশীল নয়। তার প্রভাবই পড়েছে পুঁজিবাজারে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেশ কিছু দুর্বলতাকেও দায়ী করেন ঢাবির এই অধ্যাপক।