৩০৬, জয়ের জন্য যথেষ্ট হলো কি?

  • এম. এম. কায়সার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

৫০ ওভারে ৩০৬। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের বিরুদ্ধে এই স্কোর কি ম্যাচে আগে আশা করেছিল বাংলাদেশ? ম্যাচপূর্ব আলোচনায় পুনের এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হটফেভারিটের সিটে রেখেছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের ৩০৬ রানের সঞ্চয় দেখে তারাও এখন নিজেদের ভবিষৎদ্বানী নিয়ে চিন্তিত। নিশ্চিতভাবে চিন্তিত অস্ট্রেলিয়াও! পুনের ম্যাচে তিনশ’ ছাড়ানো বাংলাদেশের এই স্কোর এমন অনেক হিসেব বদলে দিয়েছে। সেই বদলের মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার শিরোনাম- বাংলাদেশ এই ম্যাচ জিততে পারে!

জি¦ আপনি ভুল পড়ছেন না। এই প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হলো উইকেটের গুনমান অনুযায়ী খেলেছে দল। ভারতের মাটিতে এবারের বিশ্বকাপে তিনশ ছাড়ানো ইনিংসকে ম্যাচজেতার আবশ্যিক এবং প্রথম শর্ত বলে মানা হচ্ছে। একটু দেরিতে এসে সেই শর্ত পুরো করলো বাংলাদেশ। অন্যান্য দলগুলো যেখানে তাদের ম্যাচে নিয়মিত তিনশ রানের জমা তুলছে সেখানে বাংলাদেশের এমন সঞ্চয় এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো হলো। তাও আবার একেবারে শেষ ম্যাচে এসে!

বিজ্ঞাপন

শেষের এই রানসাফল্যই বাংলাদেশকে পুনে ম্যাচে অনেক বড় একটা স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যার নাম অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। বিশ্বকাপে মঞ্চে অস্ট্রেলিয়াকে কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ কি সেই হিসেব বদলে দেওয়ার ম্যাচ? অন্তত ম্যাচের প্রথমার্ধ বা ব্যাটিংয়ে সেই স্বপ্ন সফল করার কাজটুকু সেরেছে দল। এখন বাকি অর্ধেকের দায়িত্বভার বোলিং বিভাগের কাঁধে। মঞ্চ সাজানো। এখন শুধু বোলাররা ‘খেলে’ দিলেই হলো।

ব্যাটিং মন্দ হয়নি। তবে আরো ভালো হতে পারতো-এই দুঃখবোধ নিয়েই মাঝবিরতিতে ফিরেছে দল। ৩০৬ রানের স্কোরটা তো ৩৫০ ও হতে পারতো! এই অভাববোধ নিয়েই ৫০ ওভার শেষ করলো বাংলাদেশ।

তবে এই প্রথম চলতি বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে আগে ব্যাটিং করতে নেমে পুরো ইনিংস জুড়ে নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের হাতে রাখতে পারলো বাংলাদেশ। ১০ থেকে ৫০ ওভার পর্যন্ত পুরো সময়টাকে যদি পাঁচ স্তরে ভাগ করা যায় তাহলে মানতেই হচ্ছে এই পাঁচ পর্বের পুরোটায় বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে যা দেখিয়েছে তার নাম-দাপট।

তবে ক্রিকেটে একটা কথা সবসময় বলা হয়ে থাকে, যখন প্রতিপক্ষকে নরম পেয়েছে তখন তাকে পিষে ফেলো; যাতে সে আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারে। বাংলাদেশের ব্যাটিং ঠিক সেই মানের নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারেনি। অথচ সুযোগটা ছিল। ৪০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩৯ রান তোলা দল কেন শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৭ রান তুলবে? হাতে বিপুল উইকেট জমা, ওভার বিস্তর; এমন পরিস্থিতিতে কেন শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৭ রান জমা হবে?

শেষের দিকে এসে এই ‘নরম’ ধাঁচের ব্যাটিংই শুধুমাত্র বাংলাদেশের ইনিংসের সমালোচনার একমাত্র বিষয়।

পুনের পাটা উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই নেই জানার পর অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা দ্রুতগতিতে তাদের কৌশল বদলে ফেলে। প্রতি ওভারে শর্টপিচ বল ঠুকে। আর বুকের সীমানায় উড়ে আসা শর্ট বলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দুর্বলতা চিরকালিন। সেই দ্বন্দ্বে পড়ে সবার আগে কাটা পড়লেন তানজিদ হাসান তামিম। পুরো ম্যাচজুড়ে প্রচুর শর্ট বল করলো অস্ট্রেলিয়া। যার কয়েকটা ছক্কা-চার হলো, কিন্তু বেশিরভাগ সময় অজিরা সেই পরিকল্পনায় সফল। শেষের দিকে এসে বাংলাদেশের রান তাই হানড্রেড মিটারের গতি পেল না।

বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৩০৬ রান সন্তোষ ছড়াচ্ছে। স্বপ্ন বুনছে। তবে সেই সঙ্গে বাস্তবতা বলছে, এই বিশ্বকাপে তিনশ রান খুবই স্বাভাবিক বিষয়। পুনেতে সেই স্বপ্ন আর বাস্তবতার কাটাকুটিতে একটা আশা নিয়ে অপেক্ষামান বাংলাদেশ; যদি বোলাররা এখন ম্যাচ জেতায়!