তসলিমাকে মঈন আলির বাবার ঝাঁঝাল জবাব
ইংল্যান্ডের মুসলিম ক্রিকেটার মঈন আলিকে নিয়ে বিতর্কিত টুইট করে বিপাকে পড়েছেন তসলিমা নাসরিন। ইংলিশ ক্রিকেটাররা ক্ষোভ ঝেরে যারপরনাই নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন বিতর্কিত এ লেখিকাকে। তার রেশ না কাটতেই নেতিবাচক মন্তব্যের ঝাঁঝাল জবাব দিলেন এবার মঈনের বাবা মুনির আলি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তসলিমার 'জঘন্য’ টুইটের সমালোচনায় বিষাক্ত তীর ছুঁড়লেন বাবা মুনির, ‘ছেলের বিরুদ্ধে তসলিমা নাসরিনের এমন জঘন্য মন্তব্যে আমি হতবাক, একইসঙ্গে ব্যথিত। নিজের মন্তব্যের সমর্থনে যে টুইট করেছেন, সেখানে তিনি লিখেন- ওটা নিছক মজা ছিল। বলেন, তিনি নাকি মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই তিনি বুঝে যাবেন কী লিখেছেন। আর মৌলবাদই বা কী। তার এ মন্তব্য সম্পূর্ণ ইসলাম-পরিপন্থী। আত্মসম্মান এবং অন্যের প্রতি সম্মান না থাকলেই কেবল একজন মানুষ এতটা নিচে নামতে পারেন।’
গণমাধ্যমে কড়া কথা বলেও মনের মধ্যে জ্বলতে থাকা আগুন নিভাতে পারেননি এ ইংলিশ অলরাউন্ডারের বাবা। তাই সামনে দেখা হলে উপযুক্ত জবাবটা তখনই মুখের ওপর দিতে চান, ‘সত্যি আমি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। তবে রাগ সামাল না দিলে লোকজন আমাকেও ছাড়বে না। তবে কোনোদিন যদি তার সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে তাকে রসিকতার অর্থটা অভিধান থেকে জেনে নিতে বলবো। তখন তার মুখের ওপরই জবাবটা দিয়ে দেব।’
ছেলে মঈনকে নিয়ে কেউ এমন মন্তব্য করবে, সেটা যে বিশ্বাসই হচ্ছে না বাবা মুনিরের, 'না জেনে কাউকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা কখনো উচিত নয়। এরপর রসিকতা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা! তিনি যেমন ভাবছেন বিষয়টা তেমন নয় মোটেই। আমার ছেলেকে নিয়ে তিনি যা বলেছেন, সেটা বিশ্বাসই করতে পারছি না। সারা ক্রিকেট দুনিয়া জানে মঈন কেমন মানুষ।’
জার্সিতে মদ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের লোগো লাগিয়ে মাঠে খেলা সম্ভব নয়। চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে তাই মঈন অনুরোধ রেখেছিলেন তার জার্সিতে যেন অ্যালকোহল কোম্পানির বিজ্ঞাপন সাঁটানো না হয়। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজিটি পরে অবশ্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খবরটা অস্বীকার করে।
এই ব্যাপারটা হয়তো ভালো লাগেনি তসলিমা নাসরিনের। বাজে একটা টুইট করে বসেন। 'লজ্জা' ও 'আমার মেয়েবেলা' গ্রন্থের লেখিকা তসলিমা টুইটারে লিখেন, ‘মঈন আলি ক্রিকেট না খেললে হয়তো সিরিয়ায় চলে যেতেন, যোগ দিতেন আইএসআইএস'য়ে।’
সঙ্গে সঙ্গে সেটা ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ায়। তাতেই বিতর্কের শুরু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে সমালোচনার ঝড়। তসলিমার সেই টুইট মেনে নিতে পারেননি ক্রীড়া অনুরাগী থেকে শুরু করে ইংলিশ ক্রিকেটাররা। তসলিমার প্রতি তোপ দাগেন রাগে ফেটে পড়া জোফরা আর্চার, বেন ডাকেট, স্যাম বিলিংস ও সাকিব মাহমুদরা।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সুর পাল্টে ফেলেন ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করা তসলিমা। আগের টুইটটা মুছে ফেলেন। রসিকতার ছলে নিজের অপকর্ম ঢাকতে নতুন টুইটও করে ফেলেন। ফিরতি টুইটে লিখেন, ‘বিদ্বেষীরা ভালো করেই জানে, মঈন আলিকে নিয়ে আমার টুইটটা কেবল রসিকতা ছিল। কিন্তু তারা এটাকে ইস্যু বানিয়ে ফেলেছে আমাকে অপমান করার জন্য। কারণ আমি মুসলিম সমাজকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আর আমি ইসলামী ধর্মান্ধতার বিরোধী। মানব সভ্যতার অন্যতম বড় বিয়োগান্তক ঘটনা হলো, অতি নারীবাদী বামরাও নারীবিরোধী ইসলামপন্থীদের সমর্থন করে।’
কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি প্রবাসী সাহিত্যিক তসলিমার। নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়। ফের জোফরা আর্চারের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তসলিমার ফিরতি টুইটটা রিটুইট করে আর্চার এবার লিখেন, ‘রসিকতা? কেউ তো হাসছে না, এমনকি আপনিও না। এখন টুইটটা কেবল মুছে ফেলতে পারেন আপনি।’