আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুক্রবার (২৩ জুন)। বাঙালির অধিকার ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। তাকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক।
নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পান এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ওপর ভিত্তি করে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসর হতে থাকে। এই অসাম্প্রদায়িক নীতিই হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বের দিতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলে রূপান্তরিত হয়। পরিণত হয় গণমানুষের সংগঠনে। ১৯৭০ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন ,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ’৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ’৬৬-এর ছয়দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তির সনদ রচনা এবং ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসন অবসানের প্রতিশ্রুতি অর্জন দলটিকে মুক্তিকামী মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বের জন্যই আওয়ামী লীগকে ’৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব-বাংলার মানুষ তাদের মুক্তির ম্যান্ডেট দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্টজনরাও মনে করেন, আওয়ামী লীগের অর্জন পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক অর্জন, এই দলের অর্জন বাংলাদেশের অর্জন। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন মনে করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করেছে এ দল। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশবিরোধীদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধ্বংস্তূপ থেকে উঠে এসে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপসহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলার পর আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় বিজয় অর্জন করে এবং সেই থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছে। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গত ১৪ বছরে অভাবনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে সরকার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মতাদর্শগত অবস্থানে অনড় থাকার সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ৭৪ বছরের ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি সময় সভাপতির দায়িত্বে থেকে দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।