রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিবে বিএনপি!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যেই গঠন করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তাই ইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে সংলাপ করেছেন রাষ্ট্রপতি। ধাপে ধাপে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে বিএনপির একাধিক নেতা। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন সংলাপের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির চিঠি পেলে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফখরুলের এ মন্তব্যের পর ধারণা করা হচ্ছে সংলাপের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে দলটির।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন, সংলাপের আহ্বান পেলে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আলোচনার টেবিলে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিবে বিএনপি। রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরা হবে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ ও নির্বাচনকালীন নিরেপক্ষ সরকারের দাবি জানানো হবে বলেও জানান সূত্রটি।

এর আগে বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশনই জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না। আমরা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই। নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হলে তার অধীনে নির্বাচন কমিশন হবে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন হলে তা আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ কমিশনই হবে।

নির্বাচন কমিশন গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগকে ভেল্কিবাজি বাইস্কোপ বলে অবিহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই সরকারের রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন, সুতরাং সরকারের কথার বাইরে তো এক ধাপও তিনি এগুতে পারবেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি এই ধরনের কোনো সংলাপে যাব না। যে সার্চ কমিটি হবে সেটাও একতরফাই হবে। সার্চ কমিটি দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন আসবে সেটা একই জিনিস। সুতরাং সেই আলোচনায় যেয়ে আমাদের কোন লাভ নেই। নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপে যেতে আমরা এখন পর্যন্ত রাজি নয়। সংলাপে যাচ্ছি না। তারপরও উনারা (রাষ্ট্রপতি) যদি বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন সেটা চিন্তা করা যাবে।

রাষ্ট্রপতির সংলাপের ব্যাপরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কোনো চিঠি পাইনি। এবিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে চিঠি পেলে আমাদের স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।

সংবিধানে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও কোনো সরকারই সেই পথে হাঁটেনি। সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী কমিশন গঠিত হয়ে আসছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।

২০১৭ সালে সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। এরপর বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে (তখন আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন) সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাঁচটি করে নাম চায়। এরপর তারা ১০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পাঠায়। রাষ্ট্রপতি কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আরও চারজন কমিশনার নিয়োগ দেন।