দেশে করোনাভাইরাসে তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সার্জিক্যাল মাস্কের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মাস্কের দামও ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্জিক্যাল মাস্কের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন একই ডিস্ট্রিবিউটরকে একটি ইনভয়েসে ৫০০ পিসের বেশি মাস্ক সরবরাহ না করে, সেই নির্দেশনা দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বুধবার (১১ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আয়োজিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি, মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন, ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো—
থ্রি লেয়ার (তিন স্তরের) সার্জিক্যাল মাস্কের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ৩০ টাকা, যা জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে; নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে মাস্ক বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক একই ডিস্ট্রিবিউটরকে একটি ইনভয়েসে ৫০০ পিসের বেশি ফেস মাস্ক সরবরাহ না করা।
এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে এর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ৫০ এমএল সাইজে উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই সভায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থাই গুরুতর। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
‘বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪: সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র্য’ শিরোনামের গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যৌথভাবে এটি প্রকাশ করেছে ইউএনডিপি।
এখানে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। এতে ২০২২-২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এখানে মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, তা-ও এখানে বিবেচনায় এসেছে।
সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই সংঘাতকবলিত দেশের বাসিন্দা। চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশের বেশি বসবাস করেন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ এমন পরিবারে আছেন, যে পরিবারের অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন।
বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক- ২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মানুষের জীবনযাত্রার মান (৪৫ দশমিক ১ শতাংশ)। এরপর রয়েছে শিক্ষা (৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ) ও স্বাস্থ্য (১৭ দশমিক ৩ শতাংশ)।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।
সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছেন। এরপরই রয়েছে পাকিস্তান (৯ কোটি ৩০ লাখ), ইথিওপিয়া (৮ কোটি ৬০ লাখ), নাইজেরিয়া (৭ কোটি ৪০ লাখ) ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৬ কোটি ৬০ লাখ)। বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই এই পাঁচ দেশের বাসিন্দা।
ইউএনডিপি প্রকাশিত সূচকে দেখা গেছে, দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখের বয়স ১৮ বছরের কম। এই সংখ্যাটা বিশ্বের মোট শিশুর ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর তুলনায় চরম দারিদ্র্যে রয়েছে বিশ্বের মোট প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইউএনডিপির সূচক অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে বসবাস করছেন। সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় শিশুমৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোয় এই হার মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। যুদ্ধ চলা দেশগুলোর মানুষ পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ইউএনডিপির কর্মকর্তা আচিম স্টেইনার বলেন, ‘গত কয়েক বছরে সংঘাত বেড়ে কয়েক গুণ হয়েছে। এতে প্রাণহানি নতুন করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংঘাতের জেরে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এতে বড় পরিসরে মানুষের জীবন ও জীবিকা বাধার মুখে পড়ছে।’
এই সংঘাত বন্ধ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের পরিচালক সাবরিনা আলকায়ার। তিনি বলেন, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় দারিদ্র্য বিমোচনের গতি তুলনামূলক কম। তাই বলা যায়, এসব দেশের দরিদ্র মানুষকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য ও প্রবীণ সাংবাদিক এন এম হারুন আর নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
এন এম হারুন স্ত্রী, এক মেয়ে, এক নাতনি, দুই ভাই ও এক বোনসহ অসংখ্য সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। প্রবাসী সাংবাদিক আবু মুসা হাসান তার ছোট ভাই। আজ শুক্রবার বাদ জুমা লালমাটিয়া জামে মসজিদে জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
এন এম হারুনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া। এক বিবৃতিতে তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এন এম হারুন ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে অনার্সসহ এমএ পাস করেন। এরপর তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি তৎকালীন ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি (এনা) সাপ্তাহিক হলিডে, ঢাকা কুরিয়ার, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে এন এম হারুন ছিলেন ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সিতে। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রাক্কালে তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ (মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী) স্বাক্ষরিত বুলেটিনের সংবাদ প্রচার করে অফিস থেকে বেরিয়ে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আবার সাংবাদিকতা শুরু করেন। সর্বশেষে তিনি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকা থেকে অবসর নেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। সবজি থেকে মাংস কিনতে গেলেও পুড়ছে হাত। হাতের ব্যাগ অর্ধেক পূর্ণ হবার আগেই খালি হয়ে যাচ্ছে পকেট।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সবজির বাজারে। কাঁচা পেঁপে আর মুলা ছাড়া বাকি সব সবজিই হাঁকিয়েছে সেঞ্চুরি। শিম, টমেটোর মতো সবজিগুলো হাঁকিয়েছে ডাবল সেঞ্চুরি। সরকারের নানা তৎপরতায় ডিমের দাম কিছুটা কমলেও ব্রয়লারের দাম বাড়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা বাজার সরেজমিন পরিদর্শন করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এসময় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে সরকারকে প্রয়োজনে কঠোর হবার পরামর্শ দেন ভোক্তারা।
এদিন শিম প্রতি কেজি ২০০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ১২০ টাকা, প্রতি কেজি পেপে ৫০ টাকা, গাজরের কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, ঢেড়স প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও প্রতি পিস ফুলকপি ৮০ টাকা, প্রতি পিস বাধাকপি ৭০টাকা, প্রতি পিস লাউ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা, প্রতি কেজি পেয়াজ ১২০-১৩০ টাকা, প্রতি কেজি রসুন ২৪০-২৬০ টাকা, প্রতি কেজি আদা ৩০০-৩৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
স্বস্তি নেই মাংসের দামেও। গরিবের আমিষ পূরণের একমাত্র মাধ্যম ব্রয়লারেরও বাড়ছে দাম। ১৮০-১৯০ টাকার প্রতি কেজি ব্রয়লার বেড়ে ২০৫ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ও লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও সরকারের বেধে দেয়া প্রতি ডজন ১৪২ টাকার চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দামে ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
ব্রয়লার মুরগিরর দাম বাড়ার আশঙ্কা জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, গতকাল ২০০ টাকা করে ব্রয়লার বিক্রি করছি তবে আজ মুরগি আনতে গেলে দাম বাড়ার কথা জানিয়েছে আরৎ থেকে। তবে এখনো স্লিপ পাইন, স্লিপ পেলে বলতে পারবো কতটা বাড়ছে।
সবজির খুচরা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, আমার এখানে পেপে ছাড়া আর কোন সবজি ১০০ টাকার নিচে নাই। একটা লাউও আজ ১০০ টাকা করে বিক্রি করতেছি। সব কিছুর দামই বেশি। আমরা বেশি টাকায় কিনে আনি, বেশি টাকায় বিক্রি করি। তবে এমন দাম বাড়ায় কাস্টমাররা সবজি নেয়া কমিয়ে দিছে। আগে যে এক কেজি নিতো এখন সে আধা কেজি নিচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের দামের এমন উচ্চমূল্যে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন ভোক্তা ইসমাইল। তিনি বলেন, বৃষ্টি হইছে, বন্যা হইছে ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে এইভাবে দাম বাড়াবে? তাহলে আমদানির আগেই ডিমের দাম কিভাবে কমে যায় শুধু ঘোষণা শুনেই? এখন সবাই সুযোগ পাইছে তাই যে যেভাবে পারছে আমাদের পকেট কাটছে। এটা নিয়ে সরকারের আরও কঠোর হওয়া উচিৎ।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ক্রমশ ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, মৃতের ৬০ ভাগই এই এলাকার বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুসারে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ২২৬ জন। তন্মধ্যে শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের। এই এলাকার সাড়ে ৯ হাজার বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকার কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয় তন্মধ্যে অন্যতম মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন, যার বেশিরভাগই দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার। এই সিটির যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, খিলগাঁও ও মানিকনগর এলাকার মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা দেখা যায়, সারাদেশে ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা রাজধানী ঢাকাতে। তারমধ্য শীর্ষে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এখানে মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৬৮৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকার উত্তর সিটি, যেখানে মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৪৬১ জন, এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ, সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ৬৬৩ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দারা।
অথচ গত ১২ বছরে ঢাকার এই দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধন আয়োজনে খরচ করেছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ঢাকার দুই সিটির চলতি অর্থবছরে মশা মারার বাজেট ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে উত্তরে ১২১ কোটি ৮৪ লাখ আর দক্ষিণে ৩১ কোটি এক লাখ টাকা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর মৌসুম নভেম্বর ও ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়ত হতে পারে। প্রাদুর্ভাব এখনো চরমে পৌঁছায়নি, তবে ধীরে ধীরে কমার আগে এটি আগামী সপ্তাহে শীর্ষে ওঠতে পারে। এ বছরের পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় বেশি নাজুক। তারা জনগণকে সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
দক্ষিণ সিটিতে কেন এত ডেঙ্গু রোগী, এ বিষয়ে জানতে বার্তা২৪.কম যোগাযোগ করে দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবিরের সঙ্গে। শামসুল কবির স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনকে মারাত্মক ভুলে বলে আখ্যায়িত করেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেন।
ডা. ফজলে শামসুল কবিরের দাবি, দক্ষিণে দেশের বড় বড় মেডিকেল হাসপাতাল অবস্থিত। অধিদফতর প্রতিদিন সারাদেশের ডেঙ্গু আক্রান্তদের যারা এই এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয় তাদেরকে এই সিটির রোগী বলে উল্লেখ করে। যেহেতু এই হাসপাতালগুলো দক্ষিণে অবস্থিত। অথচ আমরা যখন তালিকা দেখি তখন দেখি চার ভাগের এক ভাগ পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান দেখে পরিকল্পনা সাজাই না। আমরা বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু মোকাবেলায় পরিকল্পনা সাজিয়েছি। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ চলমান রয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে ও থাকবে।