দুগ্ধশিল্পে ঋণ ও ন্যায্যমূল্য চান প্রান্তিক খামারিরা

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অক্সফ্যাম ও বিডিডিএফ আয়োজিত জাতীয় সভা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

অক্সফ্যাম ও বিডিডিএফ আয়োজিত জাতীয় সভা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

দেশের দুগ্ধশিল্প বিকাশে সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সুবিধা ও ন্যায্য মূল্যে বাজারে দুধ বিক্রি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিরা। তাদের দাবি, দেশে পর্যাপ্ত চাহিদা থাকার পরও যথাযথ নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট পরিষেবার অভাবে এই শিল্পটির বৃদ্ধি ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অক্সফ্যাম ও বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিডিএফ) আয়োজিত জাতীয় সভায় বক্তারা এ সব দাবি তুলেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মো. আফতাব উদ্দিন সরকার, এলডিডিপির অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াছি উদ্দিন প্রমুখ।

সভায় মূল নিবন্ধ পাঠ করেন বিডিডিএফের প্রচার সম্পাদক ও অক্সফ্যামের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. মুতাসীম বিল্লাহ। তিনি বলেন, দেশে তরল দুধের উৎপাদন বিগত ১০ বছরে বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ এবং দুধের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৯৯ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্তমান ধারায় দুধের উৎপাদন অব্যাহত থাকলে দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে, যা এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সক্ষম হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অক্সফ্যামের ইকোনোমিক জাস্টিস ও রেসিলিয়েন্স প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. খালিদ হোসাইন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রান্তিক নারী খামারিরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

এ সময় কুড়িগ্রামের রৌমারীর প্রান্তিক খামারি আমেনা বেগম বলেন, প্রান্তিক জনপদে পর্যাপ্ত চিলিং প্লান্ট না থাকায় প্রায়ই উৎপাদিত দুধ নষ্ট হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে এই শিল্পের সাথে জড়িতদের জন্য চিলিং প্লান্ট স্থাপনসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা প্রদানের দাবি জানান।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে দেশীয় ডেইরি শিল্প। বর্তমানে ডেইরি খাত একটি বাণিজ্যিকভাবে সফল শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে এক লক্ষেরও বেশি নিবন্ধিত খামারি রয়েছেন, যার প্রায় অর্ধেকই উচ্চশিক্ষিত যুবকদের উদ্যোগে পরিচালিত। একইসঙ্গে গবাদি পশুর মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাত গুণ। দেশে দুধের মোট চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এখন দেশীয় উদ্যোক্তারা সরবরাহ করছেন। এমন একটি সম্ভাবনাময় শিল্পখাত কেবল অসম শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।

অনুষ্ঠানে ডেইরি শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা বলেন, আমাদের দেশে আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধের সঙ্গে দেশে উৎপাদিত দুধের অসম প্রতিযোগিতা বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাল্ক আকারে আমদানি করা গুঁড়ো দুধের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করার ওপর সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।

উন্নয়নের এই ধারাকে টেকসই ও মজবুত করতে সরকারের পাশাপাশি ডেইরি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন- দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান, গবাদি প্রাণির কৃত্রিম প্রজজনকারী প্রতিষ্ঠান, প্রাণিখাদ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, দুগ্ধ খামারি, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, গণমাধ্যম ও বেসরকারী সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ‘বাংলাদেশ ডেইরী ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’ বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার মধ্য দিয়ে বিগত চার দশকে বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে সংস্থাটি বাংলাদেশের চাঞ্চল্যের দুর্যোগপীড়িত খামারিদের নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত ৫টি জেলার (গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর) ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামারিদের ঋণ সুবিধা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাজারে অভিগমন ও সম্প্রসারণ সেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ খামারির জীবন মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। উক্ত প্রকল্পে খামারিদের বিভিন্ন ধরনের সফলতা, প্রতিবন্ধকতা ও শিক্ষণসমূহ সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের ডেইরি শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।