পৌষের শীতে অসহায় পদ্মাচরের জনজীবন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা/ছবি: বার্তা২৪.কম

খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা/ছবি: বার্তা২৪.কম

চরের কথা পরে। ঠিক তাই! রাজশাহী সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদফতর থেকে নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোজ বিলি করা হচ্ছে গাড়িভর্তি শীতবস্ত্র। ঘটা করে তা প্রচারও করা হচ্ছে। তবে তা সীমাবদ্ধ মহানগরী, জেলা সদর ও উপজেলা সদরের মধ্যেই। সহযোগিতার ছিটেফোঁটাও পৌঁছাচ্ছে না পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়া চরবাসীর দ্বারে।

তেমনি অভাগা পদ্মানদীর মধ্যচরের বাসিন্দারা। রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের খিদিরপুরের অধীনে চরটি। যার অবস্থান মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে নদীগর্ভে। পৌষের শীতে এখানে অবিরাম বয়ে চলছে হাড় হিম করা ঠান্ডা বাতাস। হিম হাওয়া ও শীতে কাবু হয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত চরের মানুষগুলো।

বিজ্ঞাপন

তিনবেলা দু’মুঠো ভাত জোটাতে যাদের হিমশিম খেতে হয়, তাদের কাছে গরম পোশাক কেনা তো রীতিমতো বিলাসিতা! তাই সরকারি সহায়তার অপেক্ষায় দিন কাটছে মধ্যচরের বাসিন্দাদের। তবে স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকারি সহায়তা বলতে এ পর্যন্ত পুরো ওয়ার্ডের জন্য তিনি মাত্র ১৩টি কম্বল পেয়েছেন। ওপর মহলে আরও সহায়তা চাওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

শীতের মধ্যে রুটি রুজির সন্ধানে চরবাসী

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনস্থ মধ্যচরের বাসিন্দাদের নদীর ভাঙা-গড়ার মধ্যেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। চরটিতে পদ্মার করাল গ্রাসে সর্বস্বান্ত হওয়া শ’খানেক পরিবারের বসবাস। যাদের সংসার চলে দিন এনে দিন খেয়ে। কিন্তু মেলেনি তীব্র শীত নিবারণে কোনো সহায়তা। তাই ভরা শীতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে মধ্যচর ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টা পর্যন্ত পদ্মার মধ্যচরের পুরো এলাকা কুয়াশায় ঢাকা। সঙ্গে বইছে হিম বাতাসও। তা অনেকটা ঝড়ো হওয়ার মতো। খড় ও টিন দিয়ে তৈরি ঘরগুলোর পাশে কোথাও কোথাও জড়ো হয়ে আগুন পোহাচ্ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-শিশুরা। তাদের কাছে শীত নিবারণের এটিই মাত্র মাধ্যম। অধিকাংশ পুরুষ শীত উপেক্ষা করে সেই কাক ডাকা ভোরে বেরিয়েছে কর্মের সন্ধানে।

চরের বাসিন্দারা জানান, দিনের চেয়ে রাতের ঠান্ডা বাতাস অসহনীয় হয়ে পড়ে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। শরীরের হাড় পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। রাতে ঠান্ডা ভাত খেলে কাঁপুনি উঠে যায়। কোনো মতে দিন পার করতে হচ্ছে- বিকল্প যাওয়ার জায়গা নেই।

শীত উপেক্ষা করে স্কুলে ছুটছে শিশুরা

চরের গৃহবধূ মুসলিমা বেগম বলেন, ‘ঠান্ডার জ্বালায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আর বাঁচতেছি না! কিন্তু উপায় তো নেই। চর থেকে যাবো কোতি (কোথায়)। যাওয়ার জায়গাও নাই।’

চরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ শুধু নির্বাচনের সময় দেখা মেলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের। ভোটের সময় অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। কাছে বসে, গায়ে হাত বুলিয়ে বলে যায়- রিলিফের চাল-গম দেবে, ঈদে কাপড় দেবে, শীতে কম্বল দেবে। ভোটের পরে দেখা মেলেনা তাদের।

শাহানা বেগম নামে জানান, ‘আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই দুনিয়ায়। তারা (রাজনৈতিক নেতারা) কত মানুষকে কত কিছু দেয় শুনি। বয়স্ক ভাতা, ঈদে কাপড় দেয় ও শীতে কম্বল দেয়। চরের মানুষদের তো দিতে দেখি না। আমাদের কেউ কোনো দিন কিছু দেয়নি।’

পদ্মার মধ্যচরে শীতে কাবু চারবাসী

স্থানীয়দের অভিযোগ ভরা শীতেও তাদের জুটছে না কম্বল। মিলছে না কোনো সরকারি সহায়তাও। তাই শহরের বিত্তশালীদের তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অসহায় চরবাসী।

হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ভোটার ২ হাজার ২০০ জনের কিছু বেশি। অথচ আমাকে ইউনিয়ন থেকে কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১৩টি। কাকে রেখে আমি এই কম্বল কাকে দিবো? সেগুলো বিলিও করিনি, এলাকায়ও যায় নি। চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি, চরবাসীর জন্য আরও কম্বল দিতে বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন। কম্বল আসলেই পৌঁছে দেয়া হবে।’