শিক্ষক হতে চান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফেরিওয়ালা কামাল

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কামাল হোসেন। ছবি: বার্তা২৪.কম

কামাল হোসেন। ছবি: বার্তা২৪.কম

জন্মের দুই বছর পরেই পৃথিবীর আলো থেকে বঞ্চিত হন কামাল হোসেন। অভাব অনটনের ৭ সদস্যের সংসারে কামাল বড় ছেলে। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি এখন বরিশাল বিএম কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ফেরিওয়ালার ব্যবসা করে চালিয়ে যাওয়া লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চান কামাল।

ব্রেইল পদ্ধতিতে বরিশালের গাছিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। পরে বরিশাল বিএম কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন।

বিজ্ঞাপন

কামাল বরিশাল সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের নান্নুর ছেলে। তার বাবা পেশায় রিকশা চালক। রিকশা চালিয়ে ৭ সদস্যের সংসার কোনো মতে চালান তার বাবা। লেখাপড়ার ব্যয়ভার চালানো তার বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও পিছিয়ে পড়ার ছেলে নন তিনি। চিন্তা করেন নিজেই রোজগার করে লেখাপড়ার খরচ চালাবেন। এমন চিন্তা থেকে চলে আসেন সাভারে।

অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে ইঁদুরের বিষ, তেলাপোকা, ছাড়পোকা মারার ওষুধ, আয়না ও চিরুনিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাভারের জামগড়ার বিভিন্ন রাস্তায় ফেরি করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জামগড়া চৌরাস্তায় দেখা মেলে তার। তিনি বলেন, ‘আমার দৃষ্টি শক্তি নেই। আমি প্রতিবন্ধী। তাই শিক্ষার আলো দিয়ে পৃথিবীকে দেখতে চাই। এ জন্যই রাস্তায় বেরিয়েছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লেখাপড়া করে বিকেল হলেই আমি একটি হ্যান্ড মাইক ও প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে বের হই। অনেকে প্রতিবন্ধী দেখে করুণা করে আমার কাছ থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করেন। অনেকে আবার অবহেলা করে তাড়িয়ে দেন। তারপরেও তো লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হবে। সারাদিন ১ হাজার অথবা তার বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪শ টাকা লাভ হয়। তা দিয়ে বাসা ভাড়া, খাওয়ার বিল দেই। বাকিটা লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করি।’

এ ব্যাপারে জাতীয় শ্রমিক লীগের আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন ইমাম বলেন, ‘যেহেতু আমি প্রতিবন্ধী ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করি, তাই তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করব।’