জিকে শামীমের যৌথ প্রকল্পের বন্ধ ব্যাংক হিসাব অবমুক্ত চায় গণপূর্ত

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জিকে শামীম

জিকে শামীম

সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে মুদ্রা পাচার আইনসহ একাধিক মামলায় কারাবন্দী বিতর্কিত যুবলীগ নেতা জিকে শামীম। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে সরকারের অনেক মেগা প্রকল্প রয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পগুলোর কাজ অনেকটাই থমকে আছে। কোনো কোনো প্রকল্পের কাজ বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় চুক্তি বাতিলের জন্য টার্মিনেশন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নকারী ৫টি অংশী প্রতিষ্ঠান অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ব্যাংক হিসাব উন্মুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের সেই আবেদন আমলে নিয়ে গণপূর্ত অধিদফতর স্থগিতকৃত ব্যাংক হিসাবসমূহ অবমুক্ত করার জন্য সুপারিশপত্র দিয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৬ষ্ঠ বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং ৭ম বৈঠকের আলোচ্যসূচির ভিত্তিতে করা কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। এর আগে সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে জিকে শামীমের প্রকল্পগুলোর অবস্থান জানতে চেয়েছিল। তার জবাবে রোববারের (২৪ নভেম্বর) বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে-জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড গণপূর্ত অধিদফতরের যে সকল প্রকল্পের কাজ এককভাবে বাস্তবায়ন করছে, সেই সকল কাজের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগসমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পে কাজ বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে চুক্তি বাতিলের জন্য টার্মিনেশন নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়েছে- জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নকারী ৫টি অংশী প্রতিষ্ঠান অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ব্যাংক হিসাব উন্মুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন। জি কে বিল্ডার্স লি: একসাথে যৌথ উদ্যোগে গঠিত হলেও কাজসমূহ প্রকৃতপক্ষে এই ৫টি প্রতিষ্ঠানই (যারা পার্টনার ইনচার্জ হিসাবে যৌথ উদ্যোগের চুক্তিতে উল্লেখিত) বাস্তবায়ন করছে। নির্মাণ কাজের বিপরীতে যৌথ উদ্যোগের ব্যাংক হিসাবসমূহও তারা পার্টনার ইনচার্জ এককভাবে পরিচালনা করছে। এই বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কাজের বিপরীতে যৌথ উদ্যোগের স্থগিতকৃত ব্যাংক হিসাবসমূহ অবমুক্ত করার জন্য গণপূর্ত অধিদফতর সুপারিশপত্র দিয়েছে।

বৈঠকে বিষয়টি অবতারণ করে সাবেক মন্ত্রী বর্তমান কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে মুদ্রা পাচার আইনসহ একাধিক মামলায় কারাবন্দী জিকে শামীমের ঠিকাদার কোম্পানির অধীনে একক কিংবা যৌথ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি নজরে এসেছে। তিনি বলেন, জিকে শামীমের ঠিকাদার কোম্পানীর অধীনে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে এ প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া জরুরি। তাই জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড সরকারি প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রাখতে ব্যর্থ হলে তিনি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরামর্শ দেন।’

তার জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে জিকে শামীমের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অধীনে একক কিংবা যৌথ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে এবং যথাযথ আইনগত পদ্ধতি অনুসরণ করে বিষয়টি সমাধান করার জন্য ইতোমধ্যে গণপূর্ত অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে লিখিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’

তিনি কমিটিকে অবহিত করেন, জিকে শামীম র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর কৌশলগতভাবে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড কিছু কিছু প্রকল্পে অল্প পরিসরে কাজ শুরু করার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে যথাসময়ে এই প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে।

এছাড়া বৈঠকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ‘কিটকট’ (পর্যটকদের জন্য সমুদ্র সৈকতে ব্যবহৃত ছাতা ও টেবিল)পর্যটকদের বিনামূল্যে ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের সকল হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলো এসটিপির আওতায় আনার জন্য সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মো. জিল্লুল হাকিম, মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আনোয়ারুল আশরাফ খান, এবং ফরিদা খানম অংশগ্রহণ করেন।