সংকট বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, দুশ্চিন্তায় সেবা সংস্থাগুলো
সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং অর্থায়ন সংকটসহ নানান কারণে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার পথে এগোচ্ছে বলে মনে করছে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই ওয়াশ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ ও সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (RRRC) আয়োজিত ‘Plumbers of the World: Legacy and Realities of Rohingya Response' শীর্ষক সেমিনারে এই বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত তাদেরকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। যদিও জেআরপি (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ২০২৪) রোহিঙ্গাদের কিছু সুযোগ তৈরি করেছে যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে এবং তাদের দেশে ফিরে গিয়ে জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে পারে।’
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর'র প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী বলেন, ‘সার্বিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। বিশেষ করে সেখানে এমন কিছু হয়েছে যা আমরা কল্পনাও করিনি। এখনও আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইছে, যা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই মুহূর্তে এটা ভূ-কৌশলগত ইস্যু।’
আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে, যা রোহিঙ্গা সংকটকে আরও খারাপ দিকে নেবে। ক্যাম্পের ওয়াশ ব্যবস্থাপনার নিয়ে বলবো এ বিষটি অন্যান্য ৮-৯টি খাতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। সীমিত সম্পদ নিয়ে ছোট একটা ভূখণ্ডে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য সুপেয় পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে। তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম এবং তাদের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিতের প্রয়জনীয়তার উপর জোর দেন। এক্ষেত্রে সরকারসহ সকল পক্ষকে এগিয়ে আসা এবং একটি সমন্বয়ের মাধ্যমে ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে কাজ করার কথা বলেন।
আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার, ডেভিড বাগডেন, প্রিন্সিপাল কোর্ডিনেটর, ইন্টার সেক্টর কোর্ডিনেটর গ্রুপ (আইএসসিজি), রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স, মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন, রিফিউজি সেল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ড. সিলজা রাজেন্দর, হেড অব সাব-অফিস, ইউএন ওমেন প্রমুখ। এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করা সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাসমূহ, এনজিও-আইএনজিও ও গণমাধ্যমসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।