যে কারণে মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মাল্টার নাগরিকত্ব পেতে দুই দফায় আবেদন করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে পাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ থাকায় দুই দফায়ই আবেদন প্রত্যাখান করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তাঁদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নাগরিকত্বের আবেদনও খারিজ করেছিল মাল্টা কর্তৃপক্ষ।

শাহীন সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। শাহীন যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি) অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি ও বুশরা চাচাতো বোন। টিউলিপ শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

বিজ্ঞাপন

ফাঁস হওয়া নথিপত্রের বরাতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

ফাঁস হওয়া নথিপত্রের বরাতে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ২০১৩ সালে প্রথমবার মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলো শাহীন সিদ্দিক। কিন্তু ওই সময় দেশটির বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কর্মসূচি দেখভালের বিশেষ দায়িত্বে থাকা হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই আবেদন নাকচ করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর মেয়ে বুশরা সিদ্দিকসহ ২০১৫ সালে তিনি আবার আবেদন করেন। সেবার তাঁর বিরুদ্ধে পাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ পাওয়ায় আবেদন প্রত্যাখান করা হয়। 

তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাঁর মেয়ে বুশরা সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয়বার নাগরিকত্বের জন্য শাহীনকে খরচ করতে হতো ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। আর বুশরার খরচ পড়ত ২৫ হাজার ইউরো। এ ছাড়া ফি বাবদ হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসকে দিতে হতো ৭০ হাজার ইউরো।

২০১৫ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য (স্টেটমেন্ট) দেখান শাহীন। তাতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার জমা দেখানো হয়। আগের দুই মাসে ১১টি লেনদের মাধ্যমে ওই অর্থ হিসাবটিতে জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই অর্থের কোনো উৎসের কথা নথিতে জানানো হয়নি।

নথিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছিল প্রচ্ছায়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শাহীন সিদ্দিকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাঁর মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারিক সিদ্দিক ও শাহীন সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সম্প্রতি তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে কথা বলতে তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

পড়াশোনা শেষে বুশরা সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে থেকে যান। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে স্নাতকের পর তিনি জেপিমরগান ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। পরে সেই চাকরিও ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে উত্তর লন্ডনে গোল্ডারস গ্রিন এলাকায় স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৯ লাখ পাউন্ডের একটি বাড়ি কেনেন বুশরা। তাঁর ও শাহীন সিদ্দিকের সঙ্গে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।