কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

প্রায় তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে স্পিডবোট সেবা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এ স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণকারী আ.লীগ নেতারা পলাতক থাকায় এ সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। কাজ না থাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে স্পিডবোট চালক ও এ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। তাই দ্রুত সকল সংকট কাটিয়ে দ্রুতগতির এ সেবা চালুর দাবি যাত্রী ও চালক-কর্মচারীদের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লি¬উটিএ) তথ্য বলছে, ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালের দিকে কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। ১৩ কিলোমিটার দূরত্বের এই নৌপথে ৪টি ফেরি ও ৯টি লঞ্চ চলাচল করে থাকে। এর সাথে ১২ ও ১৮ সিটের প্রায় একশত স্পিডবোট চলতো দুইপাড়ে (আরিচা ও কাজিরহাট)। এতে করে এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের জলপথ পাড়ি দেয়া যেতো ১৫ থেকে ২০ মিনিটে। একারণে প্রতিদিন হাজারেরও অধিক মানুষ যাতায়াত করতেন স্পিডবোটে।

বিজ্ঞাপন

সড়কপথে ঢাকার সাথে পাবনার দূরত্ব ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার। যানজটের কবলে পড়লে লাগতে পারে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা সময়। সেখানে কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় ক্লান্তির যাত্রায় ভোগান্তি কমাতে মানুষ এই নৌপথ বেছে নেন। এ রুট বেছে নেবার সবচেয়ে বড় কারণ দ্রুতগতির স্পিডবোট সেবা। কিন্তু প্রায় দীর্ঘ তিন মাস ধরে এ সেবা বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কাজীরহাট ঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ইঞ্জিনবিহীন স্পিডবোটগুলো যমুনার চরে ও নদীর নালায় পড়ে আছে। কোনো কোনো বোটের রং নষ্ট হয়ে উঠে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে অন্যান্য যন্ত্রাংশ। দু'একজন চালকের দেখা মিলল আশেপাশে। এদিকে অল্প সময়ে যে পথ পারি দেয়া যেতো এ বোট সেবায়, সেটি না বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ঘাট এলাকার দোকানিরা। একারণে বোটগুলো পড়ে থাকায় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

এব্যাপারে ঘাটের নিয়মিত যাত্রী ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, আমি মানিকগঞ্জে চাকরি করি। সময় বাঁচাতে কুইক সার্ভিস বা স্পিডবোট ব্যবহার করি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সার্ভিস বন্ধ থাকায় অসুবিধায় পড়ে গেছি। বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

ঘাটের চায়ের দোকানদার আব্দুল বাতেন জানান, স্পিডবোট বন্ধ হওয়ায় এই নৌপথে যাত্রী সমাগম অনেকটাই কমে গেছে। অল্প কিছু যাত্রী আসেন, তারা লঞ্চ দিয়ে পার হন। ফলে বেচা-বিক্রি কমে গেছে। যখন স্পিডবোট চলতো তখন দিনে ৫/৭ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আর এখন বিক্রি হচ্ছে দিনে ৫শ, সর্বোচ্চ হাজার টাকা।

এভাবে চললে দুর্মূল্যের বাজারে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, দ্রুত স্পিডবোট চালু করা হোক। এতে সবারই স্বস্তি ফিরবে।

স্পিডবোট চালক বাপ্পী বলেন, এ ঘাটে ৫০/৬০ জন স্পিডবোট চালক রয়েছে। প্রায় তিনমাস বোট চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের উপার্জন একেবারে বন্ধ। জিনিসপত্রের যে দাম, নিয়মিত কাজ করেই সংসার চালানো কঠিন। সেখানে তিনমাস বসে থাকায় খুব অসহায় অবস্থায় পড়েছি আমরা।

ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন বলেন, এতদিন ঘাটের এই বোটগুলোর নিয়ন্ত্রণে আ.লীগ নেতারা ছিল। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, মানসম্পন্ন যাত্রীসেবা নিশ্চিত না করাসহ নানা অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। এর বাইরেও তারা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক কুকর্ম করেছেন, একারণেই ভয়ে তারা আত্মগোপনে থাকায় বোটগুলো বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে এগুলোর রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে বলে জেনেছি। এখন কর্তৃপক্ষের উচিত নতুন করে রুট পারমিট দিয়ে দ্রুত এটাকে আবার চালু করা।

এদিকে সরকার পতনের পর স্পিডবোটের সাথে সম্পৃক্ত মালিক, চালক ও কর্মচারীরা পলাতক থাকায় এ সেক্টর দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি গ্রুপ। তিনটি গ্রুপের মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ চলমান। তবে দ্রুত এ রুটে পূর্বের ন্যায় স্পিডবোট সেবা চালু করতে ইতিমধ্যে বোটগুলোর রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লি-উটিএ)। কাজিরহাট ও আরিচা রুটে ৩০টি করে মোট ৬০ ও কাজিরহাট-দৌলতাদিয়া রুটে ১০টি স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি রয়েছে বলেও জানায় এ দপ্তর।

স্পিডবোট চালুর ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর নগরবাড়ি-কাজীরহাট ঘাট কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার আব্দুল ওয়াকিল জানান, স্পিডবোট বন্ধ হওয়ার পর মালিকপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে, কোনো সাড়া না মেলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। আগ্রহী স্থানীয় অন্যান্য স্পিডবোট মালিকদের নতুন করে আবেদনের জন্য চিঠি দেয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে দ্রুতই স্পিডবোট চালু করা হবে।