রোগ প্রতিরোধে অজুর কার্যকারিতা
করোনার প্রতিষেধক না থাকায় এর প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায়। এ জন্য ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন- এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে, অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, মাছ-গোশাত ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।
বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। করোনার সংক্রমণ রোধে চিকিৎসকরা পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আমরা জানি, হাত ধোয়ার অভ্যাস অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হাত ধোয়া দিবসও পালন করা হয়। চলমান সময়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব মানুষ যেভাবে অনুধাবন করছেন, তাতে মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এটা নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে হাত ধোয়াকে শুধু রোগ প্রতিরোধ নয় বিশাল সওয়াবের কারণ বানাতে পারি। অর্থাৎ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়, প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষে এবং সর্বাবস্থায় অজুর সহিত থাকার নিয়ত করলে এটা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। এক কথায়, অজুর মাধ্যমে সর্বদা পরিচ্ছন্ন থাকা যায়।
কারণ আল্লাহতায়ালা অজুর সময় এমন অঙ্গগুলো ধোয়া ফরজ করেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে শরীরে দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।’ -সূরা মায়িদা: ৬
অজুর ফজিলত: অজুর মধ্যে আল্লাহতায়ালা অনেক নেয়ামত দিয়েছেন। বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রচুর সওয়াব রয়েছে। হাদিসে ‘বেহেশতের চাবি বলা হয়েছে নামাজকে, আর নামাজের চাবি বলা হয়েছে হলো অজুকে। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন অজু করে সে দশটি নেকি লাভ করে।’
অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। অজুকারী ব্যক্তি হাশরের ময়দানে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবেন। অজুকারীদের অনেকে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ পেয়েছেন। অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠকারী ব্যাক্তির জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া অজুর শুরুতে কবজি পর্যন্ত দুই হাত ধোয়া, কুলি করা, মিসওয়াক করা, কান ও নাকের বহির্ভাগ পরিষ্কার করাকে নবী করিম (সা.) সুন্নত হিসেবে অনুসরণ করতে বলেছেন। বক্ষমান নিবন্ধে বিজ্ঞানের আলোকে অজুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
মুখমণ্ডল ধৌত করা: আমরা জানি, মানুষের মুখ ও দুই হাত শরীরের সবচেয়ে বেশি আবরণমুক্ত অংশ। তাই এগুলোতে সহজেই ধুলাবালি ও রোগজীবাণু লাগতে পারে। এ ছাড়া চোখের ভ্রুযুগল, চোখের পাতা, গোঁফ, দাড়ি- সহজেই ময়লাযুক্ত হতে পারে। এসব কিছু হাত-মুখ ধোয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায়। মুখ অপরিষ্কার থাকলে রোগজীবাণু সহজেই মুখে প্রবেশ করতে পারে। মুখের ঘাম, ময়লা ও জীবাণু ত্বকের সঙ্গে সেঁটে থাকতে সাহায্য করে। তাই ঘন ঘন অজুর মাধ্যমে মুখমণ্ডল জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব। এ ছাড়া মুখ ধোয়ার ফলে শরীর ও মন সতেজ হয়। ক্লান্তি ভাব কমে যায়।
দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য শরীরের এই অংশটুকু প্রায় খোলা থাকে, যার ফলে এ অংশে ময়লা ও রোগজীবাণু লাগতে পারে। হাতের আঙুলের ডগার মাধ্যমে বিশেষ করে চুলকানোর পর আঙুল, নাক, চোখ ও কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এসব জীবাণু বিস্তার লাভ করে। অপরিষ্কার হাত খাদ্য ও পানীয়কেও জীবাণুযুক্ত করতে পারে। তবে সুস্থ ত্বক এসব জীবাণুর জন্য এক স্বাভাবিক প্রতিরোধক। কিন্তু ত্বকে সামান্যতম ক্ষত হলে তার মাধ্যমে এসব জীবাণু দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে পাঁচড়া, ফোড়া থেকে শুরু করে ইত্যাদি রোগ হতে পারে। চিকিৎসকরা তো এখন জোর দিয়ে বলছেন, এখণ অপরিচ্ছন্ন হাতের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। সুতরাং অজু করার সময় প্রথমে ভালোভাবে হাত ধুয়ে পরে মুখমণ্ডল ধৌত করলে এসব রোগ থেকে সহজেই মুক্ত থাকা সম্ভব।
মাথা মাসেহ করা: অজুর সময় ভেজা হাতে মাথা মাসেহ করা ফরজ। রোগজীবাণুমুক্ত থাকতে এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর। কারণ মানুষের মাথা ও চুল সব সময় উন্মুক্ত থাকে। যার ফলে চুলের মধ্যে ময়লা ও রোগজীবাণু জমা হয়। সুতরাং ভেজা হাতে মাথা মাসেহ করার মাধ্যমে সেই ময়লাগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। মাথা মাসেহ করার পাশাপাশি ঘাড়েও ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করে নেওয়া রাসূল (সা.)-এর সুন্নত। এর দ্বারা অজুর একটি সুন্নত যেমন আদায় হয়, তেমনি ঘুম থেকে উঠে বা কর্মক্লান্ত হলে ভেজা হাতে ঘাড় মাসেহ করলে সতেজতা অনুভূত হয়।
টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধৌত করা: দুই পা সবচেয়ে বেশি খোলা থাকে। এর ফলে এই অংশ খুব ময়লা ও জীবাণুযুক্ত হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পা থাকলে রোগজীবাণু ছড়াতে পারে না। তাই অজুর মাধ্যমে ভালোভাবে পা ধোয়ার মাধ্যমেও আমরা করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে পারি। কারণ কোনোভাবে যদি পায়ে করোনার জীবাণু লেগে যায়, তা খুব সহজেই হাতে উঠে যেতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, অজুতে ধারাবাহিকভাবে যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়- তা স্বাস্থ্যের জন্য ফলদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, অজুর শুরুতে উভয় হাতে পানি ঢালাতে শরীরে শিরার কার্যক্রম সচল হয়ে উঠে, অতঃপর ধীরে ধীরে চেহারা ও মস্তিষ্কের রগগুলোর দিকে তার প্রভাব পৌঁছতে থাকে। অজুর মধ্যে প্রথমে হাত ধোয়া তারপর কুলি করা তারপর নাকে পানি দেওয়া তারপর চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ধারাবাহিকতা রোগ প্রতিরোধের জন্য উপকারী।
এ আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, হাত ধোয়া যেমন উপকারী, তেমনি অজু একটি সহজ কাজ। কিন্তু এর গুরুত্ব ও ফজিলত অশেষ। সুতরাং চলমান সময়ে একটু সচেতন হলে হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অজু করে নিতে পারি, এর ফলে সওয়াব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সক্ষম হবো। এ জন্য খুব বেশি কষ্ট কিংবা সময় নয়, দরকার একটু সচেতন মন।
আরও পড়ুন:
মহামারি প্রসঙ্গে ইসলামের পরামর্শ ও দোয়া
বিপদে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন
করোনা থেকে বাঁচতে আল্লামা শফীর পাঁচ পরামর্শ
সাময়িকভাবে মসজিদ বন্ধ রাখা বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা
রোগ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
করোনা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় স্বস্তি
‘সামাজিক দূরত্ব রেখে ইবাদত পালন সম্ভব’
নবী করিম সা.-এর শিক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন