বিপদে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন
যেকোনো বিপদ-আপদের সময় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করাই মুমিনের পরিচয়। হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম বিপদে পড়ে আল্লাহতায়ালাকে ডেকেছিলেন। আল্লাহতায়ালা তার বিপদ দূর করেছিলেন। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং স্মরণ করো আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সঙ্গে তাদের মত আরো দিলাম আমার বিশেষ রহমতস্বরূপে এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।’ -সূরা আম্বিয়া: ৮৩-৮৪
আমরা জানি, দুনিয়ার নিয়ামত ও সুখ-শান্তি আল্লাহ দেন, মুসিবত ও বিপদ-আপদও আল্লাহ দেন। তবে মুমিনের কর্তব্য হলো- নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করা, আর বিপদে আল্লাহকে স্মরণ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের নিকট যে সব নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহরই নিকট থেকে আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান করো। -সূরা নহল: ৫৩
** রোগ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
** মহামারি প্রসঙ্গে ইসলামের পরামর্শ ও দোয়া
বিপদে পড়লে মুমিনগণ আল্লাহকে ডাকে। আল্লাহতায়ালা এতে খুশি হন। বিপদ দূর করে দেন। অপরদিকে দুর্বল ঈমানের মানুষ বিপদে পড়লে ঘাবড়ে যায়, হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ নিরাশ হতে আল্লাহতায়ালা নিষেধ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ -সূরা জুমার: ৫৩
ব্যস, কীসের ভয়? আল্লাহ বলেছেন তার রহমত থেকে নিরাশ না হতে, সুতরাং কোনো বিপদে আমাদের নিরাশ হলে চলবে না। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলে দিয়েছেন বিপদমুক্তির পথ। আর তা হলো- নামাজ ও ধৈর্য।
এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা রয়েছেন ধৈর্যশীলদের সঙ্গে।’ -সূরা বাকারা: ১৫৩
বস্তুত পার্থিব জীবনের পরতে পরতে রয়েছে সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না। আবার এ থেকে উত্তরণের সহজ এবং কার্যকর পথ ও পন্থাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। বান্দার জীবন যেন বিপদের কারণে থমকে না দাঁড়ায়। বিপদের ঘোর অমানিশায়ও যেন সমাধানের পথ খুঁজে পায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়লে এর প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়। সাহাবি হজরত হুযাইফা (রা.) বলেন, ‘যখন কোনো কঠিন বিষয় সামনে আসত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ -সুনানে আবু দাউদ: ১৩১৯
এভাবে মেহেরবান আল্লাহ বান্দার জন্য মানুষের জীবন সহজ করে দিয়েছেন। বলেছেন, বিপদে যদি পড়ো, নামাজে দাঁড়াও আর আল্লাহর সাহায্য প্রত্যক্ষ করো। সাহাবাদের জীবন-কর্ম এমনই ছিলো, যেকোনো প্রয়োজন, বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখ ও বালা-মুসিবতে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
আল্লাহতায়ালাকে স্মরণের ক্ষেত্রে উদাসীনতা ছাড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহতায়ালাকে ভুলে থাকা মানুষকে মৃত আত্মায় পরিণত করে। এই শ্রেণির লোকদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাবো।’ -সূরা ত্বহা: ১২৪
হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের ন্যায়।’ -সহিহ বোখারি
বিপদ মানুষের নিত্যসঙ্গী। এটা আসবেই, কিন্তু বিপদ থেকে উত্তরণে আল্লাহকে বেশি স্মরণ এবং তার জিকিরে মশগুল থাকতে হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।