নবী করিম সা.-এর শিক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন
স্থান কাল ভেদে নতুন নতুন পরিভাষা সংযোজন হয় আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রে। এমন একটি নতুন শব্দ কোয়ারেন্টাইন। শব্দটি নতুন হলেও ইতোমধ্যে এ সম্পর্কে মানুষ ভালোভাবেই অবগত হয়েছেন।
বিশ্বকে বর্তমানে যেই ভাইরাস শংকিত করে রেখেছে- তার নাম করোনাভাইরাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্যাপী তার ধ্বংসলীলা তাকিয়ে দেখছেন। কোনো প্রতিকার-প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। অচিরেই মহান আল্লাহতায়ালা এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের বিজ্ঞান ও জ্ঞান মানব মনে সৃষ্টি করে দিন, এই দোয়া করি।
আমার আশাবাদী মানুষ, আশায় আছি। আর নিরাশা কোনো মুমিনের কাজ নয়। হজরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ঔষধ রয়েছে।’
তবে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য যেসব পরামর্শ আসছে তার একটি হলো- কোয়ারেন্টাইন। আগেই বলেছি শব্দটি আমাদের সমাজে নতুন। আমরা এর সঙ্গে পূর্ব হতে পরিচিত নই। অনলাইন-অফলাইনে হঠাৎ করে এর ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। শব্দটির সঙ্গে বিশ্ববাসী নতুনভাবে পরিচিত হলেও এ বিষয় সম্পর্কে ইসলাম অনেক আগে থেকেই অবহিত। একেবারে প্রিয় নবী (সা.)-এর যুগ থেকে।
কোয়ারেন্টাইন বলতে সহজে আমরা যা বুঝি তা হলো- আক্রান্ত বা সম্ভাব্য ব্যক্তিকে পৃথক রাখা বা তার থেকে দূরত্বে অবস্থান করা। নবী করিম (সা.)-এর যুগে আমরা এর দৃষ্টানাত দেখতে পাই। একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে গুটিবসন্ত দেখা দেয় মহামারি হিসেবে।তখন এ রোগে আক্রান্তদের থেকে পৃথক থাকার জন্য নবী করিম (সা.) পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘হিংস্র বাঘের ছোবল হতে যেভাবে তোমরা পলায়ন করো, সেভাবে গুটিবসন্তে আক্রান্ত ব্যক্তি হতে দূরত্বে অবস্থান করো।’ -মুসনাদে আহমদ: ৯৭২০
ইমাম বোখারি (রহ.) প্রাসঙ্গিকভাবে হাদিসটি তার সহিহ গ্রন্থের চিকিৎসা অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তির কাছে যাবে না।’ একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ধরনের এক রোগীর সঙ্গে হাতে হাত রেখে মুসাফাহার মাধ্যমে বায়াত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, যাও কথার মাধ্যমে তোমার শপথ নিয়ে নিলাম।
বস্তুত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শে রয়েছে সর্বকালের সব সমস্যার সমাধান। আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে তা বুঝতে পারি না।
আরেকটি বিষয় কোনো রোগ বা ভাইরাস স্বয়ংক্রিয় নয়। রোগ সংক্রমণ হয় না বলেও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.),এর উক্তি রয়েছে। এর মানে হলো- কোনো রোগ স্বয়ংক্রিয় নয়। সংক্রমণে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাই হলো- সবার ওপরে। এ কথার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। এ কারণে রোগ সংক্রমণ হওয়া প্রশ্নের উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পাল্টা প্রশ্ন করেন, (তাহলে) প্রথমে সংক্রমণ করল কে? অনেক লোকের সংস্পর্শে থাকলেও দেখা যায় সবাই সংক্রমিত হয় না। কেউ হয় কেউ হয় না। এছাড়া মানব স্বভাবের শ্রেণি বিন্যাস রয়েছে। কেউ সামান্য কিছুতে ভয় পায়, অন্যের ওপর দোষ চাপায়। আবার কেউ কেউ সবকিছু নিয়তির ওপর ছেড়ে দেয়। অনেক চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে ভয় পায়। দাফন-কাফনে অংশ নিতে ভয় পায় বহু মানুষ। তাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, অশুভ যাত্রা, পেঁচার ডাক, সফর মাস ও অপয়া ইত্যাদি হওয়া বলতে কিছু নেই।’
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, দারুল উলুম মিরপুর, ঢাকা
আরও পড়ুন:
মহামারি প্রসঙ্গে ইসলামের পরামর্শ ও দোয়া
বিপদে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন
করোনা থেকে বাঁচতে আল্লামা শফীর পাঁচ পরামর্শ
সাময়িকভাবে মসজিদ বন্ধ রাখা বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা
রোগ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা