‘সামাজিক দূরত্ব রেখে ইবাদত পালন সম্ভব’
ইসলামে জুমার বিকল্প থাকায় সামাজিক দূরত্ব রেখে ধর্মীয় ইবাদত পালন সম্ভব। এ ছাড়া নামাজ বাসগৃহে জামাতবদ্ধ হয়ে পড়ার সুযোগ থাকায় জরুরি কারণে মসজিদে অনুপস্থিতির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকরা।
শুক্রবার (২০ মার্চ) গণমাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে কর্মরত শিক্ষকদের যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
যৌথ বিবৃতিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আমিনসহ অধ্যাপক ড. আব্দুল অদুদ, ড. মো. রইছ উদদীন, ড. মোস্তফা কামাল, ড. মো. নজরুল ইসলাম, মুহাম্মদ নূরুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, তারেক বিন আতিক, মুহাম্মদ ছালেহ উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ রেজাউল হোসাইন, মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মুহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান ও মোহাম্মদ ওমর ফারুকের নাম রয়েছে।
বিবৃতিতে শিক্ষকগণ বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানব সভ্যতা মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন। চীন, ইতালি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলো বিশ্বপরিমণ্ডল থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু সৌদি আরবের পবিত্র হারামাইনে সর্বশেষ জুমা ও মসজিদের জামাত আদায় সর্বসাধরণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মিসর, কুয়েত ও আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র একই অবস্থা। সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
এমতাবস্থায় সবাই সচেতন না হলে কেবল সরকারের পক্ষে করোনা বিপর্যয় থেকে জাতিকে সুরক্ষা দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ। দেশ ও জাতিকে সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি থেকে সচেতন করতে প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমরা এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছি এবং সামনে আরও কঠিনতম সময় আসতে পারে। এমতাবস্থায় ইসলামি শরিয়তের উদ্দেশ্য অনুযায়ী জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধর্ম, বুদ্ধি-বিবেক, সম্পদ ও বংশের সুরক্ষা দিতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অভিজ্ঞমহল কর্তৃক এ পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব (ভাইরাস ছড়ায় এ রকম বিষয়কে এড়িয়ে চলা) নিশ্চিতকরণ প্রাথমিক অত্যাবশ্যক করণীয় নির্ধারণ করার প্রেক্ষাপটে আমরা জাতিকে তা সর্বক্ষেত্রে অনুসরণের আহবান জানাই।
আমরা বিশ্বাস করি, এই সময় চলে যাবে এবং সুদিন আসবে। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কঠোরতার পর প্রশস্ততাও রয়েছে’ সূরা ইনশিরাহ: ৫)। মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের ধব্বনিতে আবার মসজিদের কাতারগুলো মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হবে- ইনশাআল্লাহ।
পরিস্থিতি বিবেচনায় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদা মাড়িয়ে মসজিদে না আসার অনুমতি দিয়েছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু অনিবার্যকারণে বাসগৃহ ও অবস্থানস্থলে নামাজ পড়ার তাগিদ দিতে সাময়িকভাবে আজানের দু’য়েকটি শব্দ পরিবর্তন করেছিলেন (বোখারি-৬৬৬; মুসলিম-৬৯৭)।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবান ইবন মালিক (রা.)-এর বাড়িতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানে নামাজ পড়ে এসেছেন, যাতে তিনি ওই স্থানে নামাজ পড়তে পারেন (বোখারি- ৪১৫)।
আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে হাদিস ও সিরাতের এসব ঘটনাবলি উপস্থাপনের জন্য প্রাজ্ঞ আলেম সমাজকে আহবান জানাই। জাতির এ দুর্যোগময় মুহূর্তে প্রাজ্ঞ আলেম সমাজ বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আলেম সমাজের বার্তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সর্বশেষ একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রীও এরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। আলেম সমাজ তাদের করণীয় নির্ধারণ করে জাতিকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। প্রত্যাশা করি, এর ফলে জনগণ জুমা, মসজিদে জামাত, ধর্মীয় কারণে জনসমাগমসহ হাঁট-বাজার, খেলার মাঠ, ভ্রমণকেন্দ্র ও রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি স্থানে সামাজিক দূরত্বকে নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা দেশবাসীকে ইসলামের শিক্ষা ও নৈতিকতা ধারণ করে পরিবার ও প্রতিবেশির প্রতি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমতের মাস রমজান সন্নিকটে। পরিস্থিতির কারণে কালোবাজারি ও মওজুদদারি বিষয়ে সংযমী হওয়া ও কাছের লোকদের সতর্ক করা। আমরা মনে করি, এ মহামারি থেকে একমাত্র আল্লাহতায়ালাই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। তাই আল্লাহর নিকট চোখের পানি ঝরিয়ে তওবা, ক্ষমা প্রার্থনা, ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনার আহবান করছি। সবাইকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত দোয়া পড়ার অনুরোধ করছি।