আল্লাহ যাদেরকে নিজের বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ক্যালিগ্রাফি আল্লাহ, ছবি: সংগৃহীত

ক্যালিগ্রাফি আল্লাহ, ছবি: সংগৃহীত

দয়াময় আল্লাহতায়ালা সব মানুষের স্রষ্টা। কিন্তু সব মানুষের মর্যাদা আল্লাহর নিকট সমান নয়। আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয় সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য, যারা তার অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তার নির্দেশ মেনে চলে।

এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ -সূরা আল হুজরাত : ১৩

বিজ্ঞাপন

আল্লাহ মুমিনদেরকে তার সৃষ্টির মধ্যে সেরা বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি আখেরাতের অনন্ত জীবনে মুমিনদের পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দেওয়ার প্রতিশ্রুত যার মধ্যে নিহিত রয়েছে মানব জীবনের প্রকৃত সফলতা, সম্মান, মর্যাদা ও উত্তম রিজিক।

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট। তাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে।’ -সূরা বায়্যিনাহ : ৭-৮

বিজ্ঞাপন

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ।’ -সূরা বাকারা: ২৫

‘আর যারা তার নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। (বসবাসের জন্য রয়েছে) স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হলো যারা পরিশুদ্ধ হয় তাদের পুরষ্কার।’ -সূরা ত্ব-হা: ৭৫-৭৬

‘তারা (মুনাফিকরা) বলে, আমরা মদিনায় ফিরে গেলে সেখান থেকে শক্তিশালীরা অবশ্যই দুর্বলদেরকে বের করে দেবে। অথচ শক্তি-সম্মান তো আল্লাহরই, আর তার রাসূল ও মুমিনদের। কিন্তু মুনাফিকরা এটা জানে না।’ -সূরা আল মুনাফিকুন : ৮

‘সেদিন (হাশরের ময়দানে) তুমি মুমিন পুরুষদের ও মুমিন নারীদের দেখতে পাবে যে, তাদের সামনে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর (জ্যোতি) ছুটতে থাকবে। (বলা হবে) আজ তোমাদের সুসংবাদ হলো- জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত, তথায় তোমরা স্থায়ী হবে। এটাই হলো- মহাসাফল্য। -সূরা আল হাদিদ : ১২

বস্তুত আল্লাহতায়ালা মুমিনদের দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদাবান করেছেন। যারা ইহকালে ঈমান আনে এবং ঈমানের দাবি অনুসারে জীবন পরিচালনা করে তাদের জন্য পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাতের ব্যবস্থা রেখেছেন। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় পাত্র। আখেরাতে তাদের চিরশান্তির স্থান জান্নাত দান করবেন। তাই তো আল্লাহতায়ালা তার মুমিন বান্দাদেরকে নিজের বন্ধু বলে সম্বন্ধ করেছেন। এ থেকে মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর ভালোবাসার পরম অভিব্যক্তিই প্রকাশ পেয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না; যারা ঈমান আনে ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতে। আল্লাহর বাণীসমূহের কোনো পরিবর্তন নেই। এটিই মহাসফলতা। -সূরা ইউনূস : ৬২-৬৪

উল্লেখিত আয়াতগুলোতে ঈমানদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি, সফলতা, পুরষ্কার ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ প্রতেক মুমিনকে তার বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পাশাপাশি প্রকৃত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আল্লাহকে ভয় করা, সৎ কাজ করা ও আত্মশুদ্ধির তথা আমলের পরিশুদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা আবদুর রহমান ইবনু সাখর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল।’

মুমিনের মর্যাদা কাবাঘরের চেয়েও বেশি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কাবাঘর তাওয়াফ করছিলেন। তিনি (কাবাকে লক্ষ্য করে) বলেন, ওহে আল্লাহর ঘর! তুমি কতই পবিত্র এবং তোমার সুঘ্রাণ কতই না মনমাতানো! তুমি কতই না মর্যাদাবান, কত সম্মানের অধিকারী! নিশ্চয়ই সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণ! একজন মুমিন ব্যক্তি, তাদের মাল ও রক্ত আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও অধিক মর্যাদাবান। এ জন্য আমরা মুমিনদের ব্যাপারে সর্বদা সুধারণা পোষণ করি। -ইবনে মাজাহ : ৩৯৩২