গাজায় দুই শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ধ্বংস করেছে ইসরায়েল
ইসলাম
অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পরিচয় মুছে ফেলার পদ্ধতিগত কৌশল প্রদর্শন করছে দখলদার ইসরায়েল। এরই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যে ২০৬টি অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংস, ক্ষতিসাধন ও ভাংচুর করেছে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল থাওয়াবতেহ আনাদোলুকে জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী দ্বারা ধ্বংস, ভাংচুর, লুটপাট এবং চুরি থেকে ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোও রেহাই পায়নি। কিছু স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, অন্যগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এসব স্থাপনা ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার উদ্দেশ্য হলো, ফিলিস্তিনিদের পরিচয় মুছে ফেলা, এটা যুদ্ধের একটি কৌশলও বটে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক ধ্বংস হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গ্রেট ওমারি মসজিদ, জাবালিয়ায় বাইজেনটাইন চার্চ, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-খাদিরের মাজার এবং উত্তর-পশ্চিমে ব্লাখিয়া বাইজেনটাইন কবরস্থান।
বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে গ্রীক অর্থোডক্স সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চ, ৪০০ বছরের পুরোনো আল-সাক্কা হাউস এবং গাজার প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি সাইয়্যেদ আল হাশিম মসজিদ।
ইসরায়েল কর্তৃক ধ্বংস হওয়া প্রাচীন ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর কিছু কিছু ফিনিশিয়ান এবং রোমান যুগের, বেশ কিছু খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে খ্রিস্টাব্দ ১৪০০ সালের মধ্যকার, আর কিছু ৪০০ বছর আগে নির্মিত হয়।
গাজা একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শহর। যা মিসরীয় ফারাও, গ্রীক, রোমান এবং বাইজেনটাইন এবং তারপরে ইসলামি যুগে অটোম্যান শাসনসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্য এবং সভ্যতার শাসনের অধীনে এসেছিল।
থাওয়াবতেহ বলেন, ‘এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণ, তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ক্ষতি করা।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করতে, ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছা ভঙ্গ করতে এবং তার জনগণের জমি খালি করার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে দখলকে সুসংহত করতে এবং একটি নতুন বাস্তবতা আরোপ করতে চায়।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ইসরায়েল প্রায় ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যুদ্ধে আহত হয়েছেন ১ লাখের বেশি মানুষ।
গাজায় গণহত্যার দ্বিতীয় বছর ইসরায়েল ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক নিন্দা সম্মুখীন হয়েছে। তার পরও যুদ্ধে বন্ধ করেনি, উল্টো ইসরায়েল অনাহার কৌশল এবং মানবিক সহায়তা বিতরণে বাধা দিয়ে গাজার মানুষকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
গত মাসে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
তারুণ্যের শক্তিই একটি জাতির অগ্রগতির চালিকাশক্তি। তরুণেরা তাদের স্বপ্ন, উদ্যম, এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাজকে বদলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ইউটিইউ ইসলামিক সেমিনার-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, তরুণদের মধ্যে রয়েছে নতুন কিছু শেখার আকাঙ্ক্ষা, প্রচণ্ড কর্মস্পৃহা এবং নতুন ধারণা বাস্তবায়নের সাহস। শিক্ষা, প্রযুক্তি ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে তরুণেরা যেকোনো জাতির জন্য বিশাল সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। তাদের ঐক্য, ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা একটি সমাজকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, তারুণ্যের শক্তি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। তরুণদের দায়িত্ব শুধু নিজেদের উন্নতিই নয় বরং সমাজ, দেশ ও বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের অগ্রদূত হওয়া। তাদের উদ্যম ও কর্মস্পৃহা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। এ কারণে তারুণ্যের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
ড. খালিদ বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ২৩ বছরের নবুওয়তের জীবন মানবজাতির হেদায়েতের উৎস। তার জীবনাদর্শকে আমাদের মেনে চলতে হবে। উপদেষ্টা ইসলামের সৌন্দর্য নিজে ধারণ করা এবং অন্যদের মাঝে সেটা ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উন্নত চরিত্রের মানুষকে বাছাই করার আহ্বান জানান।
এ সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর মোকতার আহমদ প্রমুখ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
পবিত্র হজ ও উমরার পালনে বিশেষ কিছু পরিভাষা বা শর্তাবলি রয়েছে, যা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মাধ্যমে হজ ও উমরা করার পদ্ধতি সঠিকভাবে বুঝতে সহজ হয়। পরিভাষাগুলো হলো-
ইহরাম ইহরাম হলো হজ বা উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা। এ জন্য নির্ধারিত বিশেষ নিয়ম ও পোশাক ধারণ করা এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা।
ইহরামের মধ্য দিয়ে হজ ও উমরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ করা। হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যখন হজ বা উমরা কিংবা উভয়টি পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ওপর কিছু হালাল ও জায়েজ বস্তুও হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই এ প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়।
তালবিয়া তালবিয়া হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা হাজিরা হজ বা উমরার সময় ইহরাম বাঁধার পর থেকে মক্কায় প্রবেশের আগ পর্যন্ত বারবার পাঠ করেন। এটি হজ ও উমরার অন্যতম শিআর (বিশেষ নিদর্শন) এবং ইবাদতের অংশ।
দোয়াটি হচ্ছে, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা, অনুগ্রহ ও রাজত্ব একমাত্র আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।
মিকাত মিকাত হলো কাবাঘরের চারদিকে নির্দিষ্ট স্থান বা সীমানা, যা হজ ও উমরা পালনের জন্য পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করার পূর্বে ইহরাম বাঁধার স্থান হিসেবে নির্ধারিত।
এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা প্রত্যেক হাজি বা উমরা পালনকারীকে মেনে চলতে হয়। ইহরাম ছাড়া এই স্থান অতিক্রম করা জায়েজ নেই।
মিকাতের নাম ও অবস্থান জুল-হুলাইফা: মদিনা থেকে মক্কার পথে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মক্কা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিমি। এটি মদিনা থেকে আগতদের জন্য নির্ধারিত মিকাত। বর্তমানে এটি ‘আবিয়ার আলী’ নামে পরিচিত।
জুহফা: মক্কার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, যা মক্কা থেকে প্রায় ১৮৭ কিমি দূরে। (সিরিয়া, লেবানন, জর্দান) এবং মিসর থেকে আগতদের জন্য এটি মিকাত।
কারনুল মানাজিল: এটি তায়েফের নিকটবর্তী, মক্কা থেকে প্রায় ৭৫ কিমি দূরে। নাজদ ও পূর্বাঞ্চল থেকে আগতদের জন্য এটি মিকাত।
যাতু ইরক: মক্কার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত, যা মক্কা থেকে প্রায় ৯৪ কিমি দূরে। ইরাক এবং তার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য এটি নির্ধারিত মিকাত।
ইয়ালামলাম: মক্কার দক্ষিণে অবস্থিত, যা মক্কা থেকে প্রায় ৯২ কিমি দূরে। ইয়েমেন ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগতদের জন্য এটি মিকাত।
মসজিদে হারাম মসজিদে হারাম বায়তুল্লাহ শরিফের চারদিক থেকে যে বিশাল মসজিদ আছে তাই মসজিদে হারাম। ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান, যা সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর প্রথম কিবলা এবং ইসলামের তিনটি পবিত্র মসজিদের মধ্যে অন্যতম। এখানে কাবা শরিফ অবস্থিত, যা মুসলমানদের ইবাদতের কেন্দ্রে রয়েছে।
হিল হিল- যা মক্কা নগরীর আশপাশের সীমানা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি স্থান বা এলাকা, যা হারাম এলাকার বাইরে এবং মিকাতের ভেতরে সাধারণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
মাতাফ মাতাফ শব্দের অর্থ ‘তাওয়াফ করার স্থান।’ এটি কাবা শরিফের চারপাশে অবস্থিত সেই বিশেষ এলাকা, যেখানে হাজি ও উমরা পালনকারীরা কাবার চারপাশে ঘুরে তাওয়াফ করেন। খলিফা হজরত উমর (রা.) ও হজরত উসমান (রা.)-এর সময়ে মাতাফের জায়গা বড় করা হয়। বর্তমান সৌদি সরকার আধুনিক সময়ে মসজিদে হারামের সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে মাতাফকে বহুস্তরে রূপান্তর করেছে। এতে প্রতিদিন লাখো হাজি তাওয়াফ করতে পারেন।
তাওয়াফ তাওয়াফ শব্দের অর্থ ‘ঘুরে আসা’ বা ‘বৃত্তাকারভাবে প্রদক্ষিণ করা।’ ইসলামে তাওয়াফ বলতে কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে বোঝানো হয়। এটি হজ ও উমরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তাওয়াফ করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি গুনাহ মাফ হয় এবং একটি সওয়াব লেখা হয়।’ -জামে তিরমিজি : ৯৫৯
হাজরে আসওয়াদ হাজরে আসওয়াদ শব্দের অর্থ ‘কালো পাথর।’ এটি একটি পবিত্র পাথর, যা কাবা শরিফের পূর্ব কোণে স্থাপন করা আছে। মুসলিমদের জন্য এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। হাজরে আসওয়াদ তাওয়াফের শুরু এবং শেষের নির্দিষ্ট স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এই হাজরে আসওয়াদ বরাবর মসজিদে হারামের দেয়ালে সবুজ বাতি লাগানো আছে, যা দেখে সহজেই হাজরে আসওয়াদের জায়গাটি নির্ণয় করা যায়।
রুকনে ইয়ামানি রুকনে ইয়ামানি হলো কাবা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি পবিত্র স্থান। এটি কাবার চার কোণের একটি, যা ইয়েমেনের দিকে মুখ করে আছে বলে এর নাম রাখা হয়েছে রুকনে ইয়ামানি। এই কোণটি তাওয়াফ করার সময় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি ছাড়া আর কিছু স্পর্শ করতেন না। -সহিহ মুসলিম : ১২৬৭
রুকনে ইয়ামানি কাবা শরিফের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা তাওয়াফের সময় স্পর্শ করা সুন্নত।
হাতিম হাতিম হলো কাবা শরিফের উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালযুক্ত স্থান, যা প্রায় দেড় মিটার উঁচু, যা কাবার অংশ হিসেবে গণ্য হয়। এটি কাবার ভেতরের একটি অংশ হলেও বর্তমান কাঠামোর বাইরে অবস্থিত। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, হাতিম কাবার অংশ। -সহিহ বোখারি : ১৫৮৪
ইজতেবা ইজতেবা আরবি শব্দ, অর্থ ‘কাঁধ খোলা রাখা।’ হজ ও উমরার নিয়তে করা তাওয়াফের সময়ের একটি বিশেষ সুন্নত আমল। ইজতেবা পালনের মাধ্যমে পুরুষরা ইহরামের চাদর এমনভাবে পরিধান করেন, যাতে ডান কাঁধ প্রকাশিত থাকে এবং বাঁ কাঁধ ঢেকে রাখা হয়। এটি মূলত তাওয়াফের সময় পালন করা হয় এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি সুন্নত।
ইসতিলাম ইসতিলাম হজ ও উমরার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল, যা তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা, চুমু খাওয়া, বা দূর থেকে ইঙ্গিত করার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। আবার রুকনে ইয়ামানিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করাকেও ইসতিলাম বলে।
রমল রমল হলো তাওয়াফের সময় একটি বিশেষ ভঙ্গিতে প্রথম তিন চক্কর কাঁধ হেলিয়ে দ্রুতগতিতে হাঁটা। এটি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত। রমলের মাধ্যমে দৃঢ়তা ও শক্তি প্রদর্শন করা হয়। এটি সাধারণ হাঁটার চেয়ে একটু দ্রুত, তবে দৌড়ানোর মতো নয়।
মুলতাজাম মুলতাজাম অর্থ আলিঙ্গন বা জড়িয়ে ধরা। মুলতাজাম হলো, কাবা শরিফের সেই বিশেষ স্থান, যেখানে হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) এবং কাবা প্রাচীরের মধ্যে একটি স্থান। এই স্থান অত্যন্ত পবিত্র এবং এখানে দোয়া করা খুবই বরকতময়।
মিজাব মিজাব অর্থ নালা। কাবা শরিফের ওপর একটি বিশেষ মিজাব আছে, যা কাবার ছাদ থেকে পানি প্রবাহিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ‘মিজাব-ই-রাহমাত’ নামে পরিচিত।
মাকামে ইবরাহিম মাকামে ইবরাহিম হলো কাবা শরিফের পূর্ব দিকে তথা হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানির মাঝ বরাবর একটি পবিত্র স্থান, যেখানে নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পায়ের ছাপ (একটি পাথর) সংরক্ষিত আছে। স্থানটি ইসলামি ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। মাকামে ইবরাহিমের সামনে দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত।
সাফা-মারওয়া সাফা ও মারওয়া হলো দুটি পাহাড়, যা মসজিদে হারাম সংলগ্ন অবস্থিত। এ দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে হজ ও উমরাহ পালনের সময় সাঈ করা হয়। সাফা ও মারওয়া মধ্যে সাতবার সাঈ (দৌড়ানো) ওয়াজিব। বর্তমানে এ দুটি পাহাড় কাচ দিয়ে ঘেরা আছে।
দম দম হলো, হজ ও উমরার আমলে নির্দিষ্ট কোনো ভুল হলে বা ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে হারাম শরিফের সীমানায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দম দিতে হয়। আর তা একটি ছাগল, দুম্বা বা উট-গরুর সাত ভাগের একভাগ জাবাই করার মাধ্যমে দিয়ে থাকে।
আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি প্রতিনিধি কিশোর হাফেজ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। বিদেশের মাটিতে দেশে নাম উজ্জ্বলকারী ওই প্রতিযোগীর নাম হাফেজ তাওহীদুল ইসলাম। তিনি তানযীমুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসার ছাত্র।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় আলজেরিয়ার বেনি মেসাউসের ন্যাশনাল আর্মি ক্লাবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১২০ দেশের হাফেজে কোরআন অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন উত্তরার তানযীমুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসার ছাত্র হাফেজ তাওহীদুল ইসলাম। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বাছাই পরীক্ষায় শতাধিক হাফেজে কোরআনকে পেছনে ফেলে আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।
হাফেজ তাওহীদুল ইসলামের এমন সাফল্যে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন। সেই সঙ্গে হাফেজ তাওহীদের বাবা-মা, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিও কৃতজ্ঞতা এবং মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন তানযীমুল উম্মাহ পরিবার।
উল্লেখ্য, আলজেরিয়া প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেবৌনের পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঘানার প্রতিযোগী আব্দুল সামাদ আদম। আর তৃতীয় হয়েছেন লিবিয়ার মাহমুদ আবু ঘারারা।
আলজেরিয়া প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেবৌনের পৃষ্ঠপোষকতায় বেনি মেসাউসের ন্যাশনাল আর্মি ক্লাবে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান দেশটির ধর্ম বিষয়ক ও অনুদান মন্ত্রী ইউসেফ বেলমেহদির সভাপতিত্ব করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাসানৌনি। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং আলজেরিয়ায় স্বীকৃত কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তা উপস্থিত থাকাই উত্তম। তবে শরিয়তে পণ্য অনুপস্থিত রেখেও ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। পণ্য যদি অনুপস্থিত থাকে তখন সুস্পষ্টভাবে গুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার দ্বারা কিনতে হয়। এটা বাইয়ে সালামের (অগ্রিম কেনা) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আবার গুণাগুণ বর্ণনা করা ছাড়াও কেনা যেতে পারে। তখন পণ্য যে স্থানে রাখা হয়েছে তার দিকে ইঙ্গিত করা হবে কিংবা এমন সম্পর্ক উল্লেখ করা হবে, যার দ্বারা পণ্যটি অন্য বস্তু থেকে পৃথক হয়ে যাবে। তবে শাফেয়ি মাজহাব অনুসারে অনুপস্থিত পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয়। গুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনার মাধ্যমে যদি বিক্রি সম্পন্ন হয় এবং পণ্যটি দেখার পর বিবরণের সঙ্গে তা মিলে যায়, তবে ক্রয় করা আবশ্যক হবে।
আর মিল পাওয়া না গেলে বেশির ভাগ ইসলামি স্কলারের মতে ক্রয়চুক্তি ভঙ্গ করার সুযোগ থাকবে। যাকে ফিকহি পরিভাষায় খিয়ারুল খুলফ বলা হয়। হানাফি মাজহাব অনুসারে না দেখে কোনো পণ্য কিনলে ক্রেতা খিয়ারে রুয়াত বা দেখার ইচ্ছাধিকার (পণ্য দেখার পর প্রাপ্ত ইচ্ছাধিকার) লাভ করবে। অর্থাৎ ক্রেতা চুক্তি বহাল রাখা বা ভেঙে ফেলার ইচ্ছাধিকার পাবে।
যদি পণ্যের নমুনা বা মডেল দেখে তা ক্রয় করা হয় এবং পণ্যটির নমুনার বিপরীত না হয়, তবে ক্রেতা দেখার ইচ্ছাধিকার পাবে না। ক্যাটালগ ধরে বিক্রি করা অথবা নমুনা দেখিয়ে বিক্রি করা হলে এবং ক্যাটালগ ও নমুনার সঙ্গে তার মিল থাকলে বেচাকেনা বৈধ হবে। যেমন এক কেজি গম দেখিয়ে এক স্তূপ গম বিক্রি করা।
না দেখে পণ্য কেনার পর যদি তা ক্রেতা বা বিক্রেতার প্রত্যাশার চেয়ে পরিমাণে কম বা বেশি হয় এবং তা অনুমানের ওপর নির্ভর করে বিক্রি করা হয়, তবে বিক্রিতে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। আর যদি তা পরিমাপ করে বিক্রি করা হয়, তবে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম বা বেশি হলে তা বিক্রিতে প্রভাব ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে পণ্য বিভিন্ন অংশে ভাগ করলে তার কোনো ক্ষতি হয় কি না। পণ্যটি যদি এমন হয় যে তা বিভিন্ন অংশে ভাগ হলে ক্ষতি হবে না, তবে পণ্য বেশি হলে তা বিক্রেতা ফেরত পাবে এবং কম হলে পণ্য দ্বারা তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে অথবা মূল্য হ্রাস করা হবে। যেমন পাত্রে পরিমাপ করে গম বিক্রি করা। আর পণ্যটি যদি এমন হয় যে তা বিভিন্ন অংশে ভাগ করলে পণ্যের ক্ষতি হয়। তবে পরিমাণ বেশি বা কম হলে বিক্রয় চুক্তি ভঙ্গ করার অধিকার থাকবে।