সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয় যে কাজে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের কর্তব্য, ছবি: সংগৃহীত

অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের কর্তব্য, ছবি: সংগৃহীত

মানুষের প্রতি অযথা কোনো ধরনের খারাপ ধারণা করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের কর্তব্য। এমনকি সমাজে কারো ব্যাপারে খারাপ ধারণা ছড়িয়ে পড়লেও তার প্রতি যথাসম্ভব ভালো ধারণা পোষণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান পাপ।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকো। কেননা খারাপ ধারণা হচ্ছে বড় মিথ্যা। আর কারো বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করো না। একে অপরের পতন বা ধ্বংস সাধন করে নিজের কল্যাণ কামনা করো না। একে অপরের পশ্চাৎ অবলম্বন করো না। একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই-ভাই হয়ে যাও।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৬৬

বিজ্ঞাপন

মুমিনদের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা রাখা কর্তব্য। হজরত আয়েশা (রা.)-এর ওপর একবার অপবাদ আরোপ করা হয়, তখন এ বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা এ কথা শুনলে তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীরা নিজেদের বিষয়ে কেন ভালো ধারণা করলে না এবং বললে না- এটা সুস্পষ্ট অপবাদ।’ -সুরা নুর : ১২

এই আয়াতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, দ্বিন ও ঈমানের ভিত্তিতে সব মুমিন নর-নারী একান্তই আপনজন। কাজেই কোনো মুমিন নারী সম্পর্কে কোনো মন্দ প্রচারণা শুনলে আপনজন হিসেবে তাতে কর্ণপাত না করে তার প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। -তাফসিরে তাওজিহুল কুরআন

প্রকৃত মুমিন কখনো অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে না, বরং অন্যের মন্দ ধারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করে। কখনো কেউ মন্দ ধারণা করতে পারে, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে ব্যাখ্যা করে স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত। উম্মুল মুমিনিন হজরত সাফিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) ইতিকাফে ছিলেন। রাতে আমি তাকে দেখতে এসেছিলাম। এরপর তার সঙ্গে কথা বলে আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালাম। তিনিও আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন।

ওই সময় আনসারদের দুই ব্যক্তি আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। যখন তারা নবী কারিম (সা.)-কে দেখল, দ্রুত চলে গেল। নবী কারিম (সা.) তখন তাদের ডাক দিয়ে বললেন, দাঁড়াও, অসুবিধা নেই। সে আমার স্ত্রী সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই। তারা উভয়ে তখন বলল, সুবহানাল্লাহ হে আল্লাহর রাসুল! (আপনার সম্পর্কে আমরা কখনো ধারণা-অনুমান করতে পারি না।) তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শয়তান রক্তপ্রবাহের মতো মানুষের তরে বিচরণ করে। -সহিহ বোখারি : ২০২৫

প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের সুধারণামূলক মনোভাব থাকা আবশ্যক। কেননা অপরের ওপর ভালো ধারণা পোষণ করা পুণ্যে পরিণত হয়। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮০৩৬

পরিশেষে বলা যায়, সুধারণা পোষণ উন্নত চরিত্রের ভূষণ। অন্যের সম্পর্কে সুধারণার ফলে পারস্পরিক ভুল-বোঝাবুঝির অবসান সম্ভব। ফলে সমাজের দ্বন্দ্ব-কলহ নিঃশেষ হয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট হয়। দৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন।