কোরআন শিখতে ক্যামেরুনের শিশুদের অভিনব লড়াই

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিদ্যালয় থেকে কোরআন শিখে বাড়ি ফিরছে ক্যামেরুনের শিশুরা, হাতে মারুলা কাঠের স্লেট, ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যালয় থেকে কোরআন শিখে বাড়ি ফিরছে ক্যামেরুনের শিশুরা, হাতে মারুলা কাঠের স্লেট, ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি যে দেশগুলোতে তার মধ্যে ক্যামেরুন অন্যতম। সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি কোরআন শিক্ষায়ও এ দেশের মুসলমানদের যথেষ্ট আগ্রহ।

দেশটির এক সাধারণ কিশোরী আসমা। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি এলাকায় পরিবাবের সঙ্গে তার বসবাস। সে এখন পবিত্র কোরআন হেফজ করছে।

বিজ্ঞাপন

ক্যামেরুনে আসমা ও তার সমবয়সী কিশোর-কিশোরীরা খুবই আকর্ষণীয় ও অভিনব পদ্ধতিতে কোরআনে কারিম হেফজ (মুখস্থ) করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে মারুলা কাঠের স্লেট বা তক্তা থাকে। আকৃতি ও মান অনুযায়ী এসব স্লেটের দাম নির্ধারিত হয়। শিক্ষার্থী পবিত্র কোরআনের যে সুরা বা অংশটি মুখস্থ করতে চায় তাকে স্লেটে সে অংশ ও সুরাটি লিখে দেওয়া হয় এবং স্লেট দেখে দেখে তাকে মুখস্থ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্লেটে লিখতে যে কালি ব্যবহৃত হয় তা পানি, লোবান (আগরবাতি তৈরির বিশেষ দ্রব্য) ও কাঠকয়লা দিয়ে তৈরি। লেখা হয় সাদা পালকের কাঠি দিয়ে।

হাতে লেখা সুরাটি যখন শিক্ষার্থীর মুখস্থ হয়ে যায়, তখন এটি শিক্ষককে শোনাতে হয়। পড়া শুনে শিক্ষক খুশি হলে স্লেটটি পানি দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে আবার নতুন সুরা ও অংশ লেখার অনুমতি পায় শিক্ষার্থী।

আসমা ও তার সঙ্গীরা সাধারণত এভাবেই পবিত্র কোরআনে কারিম হেফজ সম্পন্ন করে। স্লেট ধোওয়ায় যে পানি ব্যবহার করা হয়, ক্যামেরুনে সেই পানি খুব মূল্যবান। বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ করে বিভিন্ন কাজে বরকতস্বরূপ তা ব্যবহার করে ক্যামেরুনবাসী। বর্তমানে এখানে কোরআনের সাধারণ প্রতিলিপির ব্যবহার শুরু হলেও প্রাচীন এই পদ্ধতিটি এখনো অনেকে আঁকড়ে রেখেছে।

ক্যামেরুন মধ্য আফ্রিকার এটি দেশ। এর পশ্চিমে নাইজেরিয়া, উত্তর-পূর্বে চাদ প্রজাতন্ত্র, পূর্বে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও ইকুয়াটরিয়াল গিনি, গ্যাবন, দক্ষিণে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র। ক্যামেরুন দুই শতাধিক ভাষাভাষী গোষ্ঠীর বাসস্থান।

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দুটি ঔপনিবেশিক অঞ্চল একত্র হয়ে ১৯৬১ সালে ক্যামেরুন গঠিত হয়। এখনো শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ক্যামেরুন।

দেশটির পুরো নাম ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্র। রাজধানী ইয়াউন্দে। সরকারি ভাষা ফরাসি, ইংরেজি, বিভিন্ন ও জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা। প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী খ্রিস্টান, মুসলমান, আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম।

ইউরোপিয়ানদের মধ্যে সর্বপ্রথম পর্তুগিজরা ১৪৭২ খ্রিস্টাব্দে ক্যামেরুন আসে। এর আগে ক্যামেরুন সম্পর্কে খুব কমই জানা ছিল ইউরোপের মানুষের। দেশটি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ওই দিনটি তারা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। কফি, কোকো, তুলা, কলা ও তৈলবীজ উৎপাদনে ক্যামেরুন বিখ্যাত।

ঐতিহ্যবাহী স্লেট হাতে ক্যামেরুনের শিশুরা, ছবি: সংগৃহীত

ক্যামেরুন ১০টি প্রদেশে বিভক্ত। এটি একটি গরিব রাষ্ট্র। দেশের ৩০ শতাংশ অধিবাসীকে দৈনিক ১.২৫ ডলারের কম অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

ক্যামেরুনের আয়তন চার লাখ ৭৫ হাজার ৪৪২ বর্গকিলোমিটার বা এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৯ বর্গমাইল। প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ আয়তন বিবেচনায় ৫৬তম।

১৮০০ শতকে ক্যামেরুনে মুসলিম বণিক ও সুফি-ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটে। বর্তমানে ক্যামেরুনের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ সুফি মতবাদে বিশ্বাসী।

ক্যামেরুনে মুসলমানদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আল মুসলিম ডটনেটের তথ্য মতে, দেশটিতে মুসলিম সংখ্যা মোট অধিবাসীর ২৪ শতাংশ। সিআইএর দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, ক্যামেরুনে মুসলিম জনসংখ্যা মোট অধিবাসীর ২০.৯ শতাংশ।

তবে অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, ক্যামেরুনের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম। সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বরাজনীতিতে মুসলমানরা হাজার বছরের বেশি সময় অধিষ্ঠিত থাকলেও বিগত কয়েক শ বছর থেকে তারা পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রের জালে আটকে রয়েছে। এখন তারা পৃথিবীর অন্যতম নির্যাতিত ও বিভক্ত জাতি।

ক্যামেরুনের মুসলিম শিশুদের মধ্যে কোরআনচর্চার বেশ আগ্রহ দেখা যায়। দেশটির ক্যামেরুনিয়ান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার বিধান রয়েছে এবং সরকার সাধারণত এই অধিকারকে সম্মান করে।