আবদুর রহমান আস সুমাইত

মানবসেবায় সর্বস্ব বিলানো এক কুয়েতি ধনকুবের

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আবদুর রহমান হামুদ আস সুমাইত, ছবি: সংগৃহীত

আবদুর রহমান হামুদ আস সুমাইত, ছবি: সংগৃহীত

‘দৃঢ়তা আর ইচ্ছা থাকলে যেকোনো মানুষের পক্ষে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব- ইনশাআল্লাহ। তবে শর্ত হলো, আশা ছাড়া যাবে না। প্রাচুর্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ফান্ড জোগাড়, প্রাসাদ নির্মাণ, পোশাক পরিচ্ছদ ও গাড়ি কেনার মধ্যে সত্যিকারের সুখ নেই, বরং অপরের হৃদয়ে আনন্দ সঞ্চারের মধ্যেই সুখ।’

নিজের ভেতরে এ শিক্ষা লালন ও বাস্তবায়ন করে মানবসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন কুয়েতের আলেম ও মুবাল্লিগ ডাক্তার আবদুর রহমান হামুদ আস সুমাইত।

বিজ্ঞাপন

মানবপ্রেমী এই অসাধারণ ব্যক্তি ১৫ হাজারের বেশি এতিম লালন-পালন করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০ হাজার বিশুদ্ধ পানির কূপ নির্মাণের পাশাপাশি চারটি ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। বহন করেছেন ৯৫ হাজার মুসলিম ছাত্রের পড়াশোনার খরচ। প্রতিষ্ঠা করেছেন ৮৪০টি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র। নতুন মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করেছেন ছয় মিলিয়ন কোরআন মাজিদের কপি।

আফ্রিকার ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, জিবুতি, কেনিয়া, মোজাম্বিক, মালাউই, জাম্বিয়া এবং অ্যাঙ্গোলাসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য অনেক দেশের তিনি খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন নিয়মিত। ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত এসব দেশের মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। লাভ করেছে চিকিৎসা সুবিধা।

১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া অসাধারণ এই মানব দরদি ব্যক্তি কুয়েত, ইরাক, ইংল্যান্ড ও কানাডায় শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা ও সার্জারিতে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেট ও পাকস্থলীর রোগ সম্পর্কে উচ্চতর জ্ঞানার্জন করেন।

ছাত্রজীবনেই তিনি বৃত্তির অর্থে বই-পত্র কিনে বিভিন্ন মসজিদে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষের মধ্যে বিতরণ করতেন।

আবদুর রহমান হামুদ আস সুমাইত আফ্রিকার মুসলিমদের সাহায্যে নিবেদিত কুয়েতভিত্তিক সংগঠন আল আওনুল মুবাশির প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেন। সংস্থাটি আফ্রিকার ছয় মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচার করেছে।

আব্দুর রহমান আস সুমাইত আস সাবাহ হাসপাতালে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি শল্যবিদ্যা, পেটের ক্যান্সার বিষয়ে বেশ লেখালেখি করেন।

১৯৭৬ সালে তিনি আমেরিকা ও কানাডার মুসলিম ডাক্তারদের নিয়ে একটি সংস্থা গঠন করেন। এমনিভাবে তিনি ১৯৮৪-৮৬ সালে মন্ট্রিলে মুসলিম ছাত্র সংস্থা, মালাবি মুসলিম সংস্থা ও কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি (১৯৮৬ সালে) প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবায় মূল্যবান গবেষণা করেছেন।

আফ্রিকান সমাজে তাবলিগি কাজের জন্য সেখানকার গোত্রগুলোর জীবন প্রণালী নিয়ে বই লিখেছেন। তিনি ১২৪টি হাসপাতাল, ৮৬০টি স্কুল, ২০৪টি ইসলামিক সেন্টার, ২১৪টি নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পাঁচ হাজার ৭০০টি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বোপরি আফ্রিকার ২৯টি দেশের ১১ মিলিয়ন বা এক কোটি ১০ লাখ মানুষ তার অনুপ্রেরণায় ইসলাম গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি আফ্রিকার মুসলিমদের জন্য Direct Aid নামে একটি ত্রাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আবদুর রহমান হামুদ আস সুমাইতের কাজের স্বীকৃতিতে প্রাপ্ত পুরস্কারের অন্যতম হলো- বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার। যার মূল্য সাত লাখ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল। ইসলামের এই মহান সেবক ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট ইন্তেকাল করেন।