সিরিয়ায় পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা, নিহত ১৪
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর অতর্কিত হামলায় ১৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে অবস্থিত কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারে বন্দীদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আসাদ সরকারের এক সাবেক কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিন হামলাকারীও নিহত হয়েছেন। হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হয়।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) আলেপ্পো শহরের একটি আলাউইট মাজার ভাঙচুরের ভিডিও অনলাইনে প্রচারিত হওয়ার পরে বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভের সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ হোমস, লাতাকিয়া, জাবলেহ এবং টারতুসে সকাল ৮টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাত্র ১৫ দিন আগে সিরিয়ার ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে ঝোড়ো আক্রমণের মুখে স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের সরকারের পতন হয়। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিদ্রোহীরা প্রথম এ অভিযান শুরু করেছিলেন। এরপর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শহরে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল সংখ্যালঘু আলাউইট এবং শিয়া মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়ার রাজধানী দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট প্রাণ বাঁচাতে সিরিয়া ছেড়ে রাশিয়ায় চলে যান। তবে এখনও পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী এলাকার কিছু অংশ প্রাক্তন সরকারের অনুগত সেনা ও মিলিশিয়া বাহিনীর দখলে রয়েছে। রাজধানী দখল করলেও দেশের অধিকাংশ এলাকা এখনও বিদ্রোহীদের নাগালের বাইরে রয়েছে। সেখানে আসাদের অনুগত সেনাদলের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে।
আসাদের বাহিনী মূলত আলাভি শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে গঠিত, যারা নিজ সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ফলে রক্তাক্ত ও যুদ্ধপীড়িত সিরিয়ায় বিদ্রোহী সুন্নি ও কুর্দি পক্ষের পাশাপাশি আলাভি শিয়া সম্প্রদায়ও সশস্ত্র অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যদিও ক্ষমতা থেকে পালিয়ে যাওয়া শাসকদের ফের ক্ষমতায় ফিরে আসার রেকর্ড নেই বললেই চলে, তথাপি আসাদ পন্থীদের সংঘবদ্ধ তৎপরতার কারণে সিরিয়ায় আসাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় দীর্ঘ দিন শাসন করেছে আসাদ পরিবার। বাশারের পিতা হাফিজ় আল-আসাদ টানা ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন। বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ়, দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। ২০০০ সালে হাফিজ়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন বাশার। টানা ২৪ বছর শাসন করার পর গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় তার শাসনের পতন হয়।