ক্লান্ত-হতাশাগ্রস্ত

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বছর পেরিয়ে তিনে, সহসাই এ যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন সংকট আরও জটিল হওয়ায় ক্লান্ত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন ইউক্রেনের নাগরিকরা।

​ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরের একটি গ্রাম হ্লিবিভকা। সেখানকার বাসিন্দা হলেন ওলহা মানুখিনার। তিনি বলেন, দুই বছর আগে তার স্বামী ও ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে রাশিয়ার সেনারা। তাদের রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একটি কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমি জানি না আর তাদের সঙ্গে দেখা হবে কিনা। এমন হাজার হাজার বেসামরিক লোক ওই কারাগারে বন্দী বলে জানান তিনি। আমরা এখন ক্লান্ত ও হতাশাগ্রস্ত।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধ শুরুর দিকে ৮৫ শতাংশ ইউক্রেনের নাগরিক মনে করতো বিজয় তাদের হবে। তবে তাদের সে ধারণা ক্রমশ পাল্টাতে থাকে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউক্রেনের নাগরিক এখন বিশ্বাস করে যে যুদ্ধে বিজয় পেতে তাদের আরও কয়েক বছর লাগবে। জরিপে দেখা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মনে করে যে দেশ ভুল পথে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের সাবেক কর্মকর্তা ওলেক্সান্ডার মার্টিনেনকো বলেন, মস্কো তাদের অবস্থানে অনড় যে ইউক্রেন যথাযথ রাষ্ট্র নয় এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সামরিক অভিযান চলবে। আর ইউক্রেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা বজায় রাখতে এবং রাশিয়ান সৈন্যদের হটিয়ে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এখন প্রশ্ন হল আমরা পারব কিনা।

এদিকে, লড়াইয়ে টিকতে না পেরে পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইউক্রেন। সম্প্রতি আরও বেশ কয়েকটি শহর হাতছাড়া হয়েছে।

ইউক্রেনের নতুন সামরিক প্রধান ওলেকজান্দ্রার সিরস্কি বলেছেন, রাশিয়ার বাহিনী যাতে ঘিরে ফেলতে না পারে এবং সামরিক কর্মকর্তাদের জীবন রক্ষার জন্য আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী মর্যাদার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রাশিয়ার বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা কমে যাওয়ার অর্থ হল পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুই বছর ধরে ইউক্রেনের মিত্ররা প্রচুর পরিমাণ সামরিক, আর্থিক ও মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে – কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির হিসেবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৯২ বিলিয়ন ডলার এসেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে, আর ৭৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ট্যাঙ্ক, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দূর পাল্লার আর্টিলারি ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহায়তার পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে এবং ইউক্রেনকে আদতে কতদিন তাদের মিত্ররা সহায়তা চালিয়ে যেতে পারবে, সে নিয়ে আলোচনা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটা নতুন ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘরোয়া রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে কংগ্রেসে আটকে আছে। আর ইউক্রেনের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ভর করেছে যে যদি নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জিতে আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা থমকে যাবে।

এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফেব্রুয়ারিতে নানা আলোচনা ও হাঙ্গেরির সাথে দর কষাকষির পর ৫৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে। হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান, যিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ, তিনি প্রকাশ্যেই ইউক্রেনকে সহায়তার বিরোধীতা করেন।

অর্থ ও জনশক্তি নিয়ে রাশিয়ারও সমস্যা রয়েছে, তবে এটি আপেক্ষিক। স্থানীয় একটি প্রবাদ উদ্ধৃত করে ইউক্রেনের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘মোটা মানুষ সঙ্কুচিত হয়ে গেলে, পাতলা মানুষটি অদৃশ্য হয়ে যায়।’

ইউক্রেনের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মন্ত্রী মাইখাইলো ফেদোরভ বলেছেন, এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল আত্মনির্ভরতা। আমাদের শক্তি দেখানো ছাড়া উপায় নেই।