গত দুই দিন ধরে ভারতের গ্যাংটক, পেলিং এলাকা থেকে প্রচুর পর্যটক সমতলে নেমে গেছেন। তবে উত্তর সিকিম তথা লাচেন, লাচুং থেকে পর্যটকদের রবিবারও (৮ ) ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বলে সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এর কারণ, বৃষ্টিপাত এবং খারাপ আবহাওয়া।
এদিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শতাধিক উদ্ধারকারী শনিবার ভোরে আরও ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, এতে করে মৃতের সংখ্যা ৪৭ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়াও অন্তত ১৫০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অন্তত পাঁচটি হেলিকপ্টার মঙ্গনে মোতায়েন করা রয়েছে। তবে সেগুলো বৈরি আবহাওয়ার কারণে রবিবারও কাজে লাগানো যায়নি। সেনাবাহিনী এবং সিকিম সরকার পুরো বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়েছে ইকোনোমিক টাইমস।
সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে শনিবার বলা হয়েছে, পর্যটকেরা সেখানে সুরক্ষিত রয়েছেন। হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি ভবনগুলোতে খরচ ছাড়াই পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
তবে গত কয়েক দিনে তাঁদের উদ্ধারের তেমন কার্যকরী ব্যবস্থা না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। কারণ, রাস্তার যা পরিস্থিতি, তাতে ওই সব অংশে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, উত্তর সিকিমের লাচুং ও লাচেন এলাকায় দেড় হাজারের মতো পর্যটক আটক রয়েছেন এখনও। যদিও, বেসরকারি হিসাবে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংখ্যাটা আড়াই হাজারের কাছাকাছি।
প্রশাসন এবং ভ্রমণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, অন্তত ১,৫৭০টির মতো গাড়ি পর্যটকদের নিয়ে গত কয়েক দিনে সিকিম থেকে নেমেছে। সেই সব গাড়িতে শ্রমিক, পড়ুয়া, স্থানীয় কিছু মানুষও নেমেছেন। সব খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, পুরো সিকিমে আটকে থাকা পর্যটকের সংখ্যা প্রথমে যতটা মনে করা হচ্ছিল, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। সিকিমে এখনও চার হাজারের কাছাকাছি পর্যটক আটকে রয়েছেন বলে ওই সব সংস্থার দাবি।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সদস্যদের একটি দল রবিবার কালিম্পংয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখে এসেছে। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে তারাও।
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল এ দিন বলেন, ‘এখনও পর্যটকদের উদ্ধার করার কাজ সেভাবে শুরু করা যায়নি। সেটাই চিন্তার। তবে তারা নিরাপদেই রয়েছেন। আত্মীয়-পরিজনেরা যারাই ফোন করছেন, তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে সেটাই জানানো হয়েছে।’
অন্যদিকে, শিলিগুড়ি-সিকিম ‘লাইফলাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশ সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। চুংথাংয়ে এদিন সরকারি উদ্ধারকারী দলের কয়েক জন পৌঁছেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে মন্ত্রী সামডুপ লেপচাও রয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে আরও ৫২ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ১২৮ জন।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় তুর্কি গণমাধ্যম আনাদুলো এজেন্সি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও ১২৮ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
এ নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪২ হাজার ২২৭ জনে পৌঁছেছে। আরও অন্তত ৯৮ হাজার ৪৬৪ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
উত্তর ইসরায়েলে একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় ৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। লেবাননের ইরান–সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এ ড্রোন হামলা চালায়।
রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে ব্রিটিস সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা এলাকায় ইসরায়েলি সেনা ঘাঁটিতে এ হামলা চালানো হয়। আহতদের মধ্যে ৭ সেনার অবস্থা গুরুতর। এদিকে এ হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে হিজবুল্লাহ।
বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, তেল আবিব ও হাইফার মাঝামাঝি এলাকায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) গোলানি ব্রিগেডের একটি প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতে ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে।
দেশটির অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বলছে, হামলায় ৬১ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা বেশি গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমের প্রচার করা ফুটেজে দেখা গেছে, আহতদের হেলিকপ্টারসহ জরুরি যানবাহনে সাহায্য করা হচ্ছে।
আহতদের মধ্যে অনেককে নিকটবর্তী হাদেরার হিল্লেল ইয়াফে মেডিকেল সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে - অন্যদের তেল হাশোমার, হাইফা, আফুলা এবং নেতানিয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের হামলায় রোববার দখলদার ইসরায়েলের ২৫ সেনা আহত হয়েছেন। এসব সেনা উত্তর লেবাননে স্থল হামলা চালাতে গিয়েছিল। আহত ২৫ জনের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান নিউজ।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর লেবাননে স্থল হামলা শুরুর ঘোষণা দেয় আইডিএফ। এর আগে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অসংখ্য ট্যাংক ও সেনা নিয়ে আসে তারা। তবে লেবাননে স্থল হামলায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের গাজার মতো সহজে ঢুকে পড়বে এমনটা ভাবলেও লেবাননে পারেনি তারা।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার করতে জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রোববার (১৩ অক্টোবর) এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের উদ্দেশে হিব্রু ভাষায় দেওয়া ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ঘাঁটি ও সংঘাতময় এলাকা থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহারের সময় হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বারবার এটি বলে আসছে। কিন্তু একাধিকবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসীরা যাতে করে শান্তিরক্ষীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য এমনটি করা হচ্ছে।
ওই বক্তব্যে ইংরেজিতে নেতানিয়াহু বলেন, মহাসচিব, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ক্ষতিকর অবস্থা থেকে সরিয়ে নেন। এটি এখনই করতে হবে, অবিলম্বে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা জানিয়েছে, সম্প্রতি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাদের একাধিক ঘাঁটি, এমনকি নাকুরাতে সদর দফতরে হামলা করেছে। এতে কয়েকজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বন্দুক হামলায় আরও একজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।
নেতানিয়াহু আরও বলেছেন, শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার না করার আপনার (মহাসচিব) সিদ্ধান্তের ফলে তারা হিজবুল্লাহর হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে তাদের ও আমাদের সেনাদের জীবন রক্ষা করুন।
শান্তিরক্ষীদের আহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নেতানিয়াহু বলেন, এমন কিছু যাতে না ঘটে সেজন্য ইসরায়েল চেষ্টা করছে। কিন্তু সহজ ও একমাত্র উপায় হলো তাদেরকে বিপজ্জনক এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া।
গাজার অধিকৃত পশ্চিম তীরের হাম্মামের পাশেই তুলকারেম শরণার্থী শিবির। এলাকাটি ইসরায়েলি বাহিনীর বারবারের হামলায় পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। সেখানেই জীর্নশীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে অঞ্চলটির সাবেক পুলিশ অফিসার আকরাম নাসারের (৩৬) বাড়ি। হামলার শিকার হয় এই বাড়িটিও। এতে বাড়িটির সামনের অংশ পুরোপুরি ধসে যায়। সামনে কিছু না থাকায় রাস্তা থেকেই বাড়ির অবশিষ্ট অংশে আকরাম ও তার দুই সন্তান পাঁচ বছরের রহিম এবং চার বছরের বারাহকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তাদের বাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তাটিও ধ্বংসস্তূপ। ভাঙা পাইপ এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষে আবর্জনাযুক্ত এই রাস্তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
দূর থেকেই বাড়িটিতে শুধু অক্ষত অবস্থায় দুটি লাল প্লাস্টিকের চেয়ার, ধূসর রঙয়ের একটি আর্মচেয়ার, কেসিং ছাড়া একটি পুরানো মনিটর এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভিতরের দরজায় একটি কালো ফ্রেমের আয়না দেখা যায়। হামলায় মেঝের টাইলস ভেঙে গেছে, যত্রতত্র ধুলো-ময়লার স্তর দেখা যায়।
তবে অবশিষ্ট দেয়ালের দুটি টাইলস দেখে বাড়িটির পূর্বের অবস্থা কেমন ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়।
তুলকারেমের কোন ঘর কিংবা দোকানের দেয়াল, দরজা অথবা জানালা নেই। সবার মতোই নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন আকরাম। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে এক অদ্ভুত পরিবেশে বসবাস।
সেখানকার অনেক ভবনই এখন বসবাসের অযোগ্য। আকরামের মতো কিছু পরিবার তাদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা জানেন না পরবর্তী অভিযান তাদের জন্য কী নিয়ে আসবে?
কিছুক্ষণ পর আকরাম ও তার সন্তানদের পানি আনতে দুটি প্লাস্টিকের বালতি নিয়ে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়। ফেরার পর আকরাম কফি বানাতে ছোট্ট রান্নাঘরে যায় তখন পোড়ার গন্ধ বাতাসে ভেসে যায় এবং দেয়ালে জ্বলন্ত দাগ দেখা যায়।
দূর থেকে এসব দেখার পর ইচ্ছে হলো বাসায় প্রবেশের। ঢুকেই কাছ থেকে চোখে পড়ে বাড়িটির ক্ষত-বিক্ষত চেহারা আর তাদের বিমর্ষ চাহনী।
কথা হয় আকরামের সঙ্গে। তিনি জানান, "কফি একটি বিলাসি খাবার হলেও আমরা এখনও বাড়িতে এটি উপভোগ করতে পারি। কফি তৈরি করা সহজ, আমি এখনও এটি আমার ধ্বংসপ্রাপ্ত রান্নাঘরে প্রস্তুত করতে পারি। কিন্তু এর বেশি এখানে রান্না করা সম্ভব না হওয়ায় ভারী খাবার আমার মায়ের বাড়িতে খাই। ওই বাড়ি আমাদের বাড়ির বিপরীত গলিতে।"
তিন বছর আগে আকরাম ও তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে সন্তানদের দেখাশোনা তিনিই করছেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত এই বাড়িটি এখন আর তিনি ঠিক করতে চেষ্টা করেন না। কারণ তিনি জানেন খুব শিগগিরই আবার একটি অভিযানে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, "দখলদার বাহিনী একটি জিনিসও ভালো রাখেনি। এমনকি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় আইটেমগুলোও ধ্বংস করেছে। আমি এখন আর ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার কিংবা ভাঙা দেয়াল ঠিক করার চেষ্টা করি না। কারণ আমি জানি খুব শিগগিরই আরেকটি অভিযানে বাড়িটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
আকরাম যখন কথা বলছিল তখন তার ছেলে বড়াহ খেলার জন্য জামাকাপড় ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অন্যান্য জিনিসপত্রের স্তূপের মধ্যে কিছু খুঁজছে।
কিছুক্ষণ পর, সে একটি আনন্দিত চিৎকার দেয় এবং বলে আমি খেলার জন্য একটি খেলনা খুঁজে পেয়েছি।
আকরাম বলেন, “রহিম এবং বড়াহ তাদের বেশিরভাগ সময় খেলায় কাটাতেন। কিন্তু তাদের খেলা এখন বদলে গেছে। তারা তাদের বেশিরভাগ খেলনা এবং জিনিসপত্র হারিয়েছে। তাদের কাছে এখন আর রঙিন পেন্সিল বা আঁকার কোনো খাতা নেই।”
পাশেই দেয়ালে ঝুলানো খাঁচায় দুটি পাখি কিচিরমিচির শব্দ করছে। সেই দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন "তাদের কাছে এই পাখি দুটিই শুধু আছে। এছাড়া সবকিছুই হারিয়েছে তারা। এই পাখি দুটোই সবকিছু ধ্বংসের সাক্ষী।"
'আমাদের বাবাকে যেতে দাও!'
আকরামের বাড়িই শুধু ধ্বংস করেনি তারা। তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তার ওপর চালানো হয়েছে বর্বর নির্যাতন। সেই লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আকরাম বলেন-
"মার্চ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের পর থেকে বারবার হামলার কারণে এই ধ্বংসলীলা হয়েছে। সেদিন ইসরায়েলি সেনারা ক্যাম্পের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেই শব্দ কানে লাগছিল। কয়েকদিন আগে নুর শামস ক্যাম্পের মতো সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে সন্তানদের নিয়ে মায়ের বাড়িতে লুকিয়ে পড়ি। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নি। হঠাৎ মায়ের বাড়ির দরজা উড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সৈন্যরা ঢুকে পড়ে। তারা সবকিছু ভাঙতে শুরু করে। আমাকে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে, তারপর আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।"
তার এই ঘটনা জীবনের সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওই অবস্থায় আমাকে দেখার পর বাচ্চারা আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করছিল আর বলছিল 'আমাদের বাবাকে যেতে দাও!'। কিন্তু সৈন্যরা তাদের চিৎকার উপেক্ষা করে আমাকে নিয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে তারা আমার কাছে ছুটে আসতে চাইছিল কিন্তু তাদের দাদী তাদেরকে ধরে রাখেন।”
'পরের দিন পর্যন্ত আমি নিকটবর্তী মাঠে স্থাপিত একটি মেক-শিফ্ট ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক ছিলাম। কিন্তু মুক্তির পর আমি আর আমার বাসায় ফিরে যায়নি। কারণ তখন সৈন্যরা তুলকারেম ক্যাম্প ঘেরাও করে রেখেছিল এবং কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না।'
আকরাম বলেন, "এই অভিযানগুলো তার বাড়ির ধ্বংসের চেয়েও সন্তানদের জীবনে বেশি প্রভাব ফেলেছিল। পাঁচ মিনিট দূরে সুয়ালমা পাড়ায় পরিবারের কাছে থাকেন তার স্ত্রী। কিন্তু শিশুদের জন্য তাদের মায়ের সাথে দেখা করাও কঠিন। কারণ ওই বাড়িতেও সৈন্যরা হামলা চালিয়েছে। তাই সেখানে থাকাও তাদের পক্ষে নিরাপদ নয়।"
এই বাড়িতেই অবশিষ্ট জায়গার মধ্যেই তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করছেন। যখন তারা বাড়ির একপাশ থেকে অন্যপাশে যায় তখন দেয়ালগুলোর ফাঁক দিয়ে প্রতিবেশীদের দেখা যায় এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
বাকিটা জীবন এই বাড়িতে থেকেই পার করবেন বলে জানান আকরাম।
"আমাদের জীবন এখন আর স্বাভাবিক নেই। আজকাল বাড়িতে ঘুমানো, রাস্তায় ঘুমানোর থেকে খুব একটা আলাদা নয়। কারণ বাড়ির মূল অংশ ভেঙে পড়েছে এবং জানালাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যদি সেনাবাহিনী ফিরে আসে এবং আবার ধ্বংস করে বা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেয় তাও আমরা আমাদের বাড়িতেই থাকব। যদিও আমাদের এখন অর্ধেক জীবনের মতো অর্ধেক ঘরে থাকতে হয়। পুরো বাড়ি ভেঙে গেলেও আমরা এখানেই থাকব।"- কথাগুলো বলছিলেন হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আকরাম নাসার।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের হামলায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।