শত বছরের ঐতিহ্য রাবানের জামাই বাবুর মাছের মেলা
নরসিংদীতে শত বছরের ঐতিহ্য রাবানের জামাই বাবুর মেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে বড় বড় মাছ নিয়ে যাওয়ায় এটি জামাই মেলা নামে প্রচলিত হয়েছে।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সনাতন ধর্মালম্বীদের জিনারদী ইউনিয়নের বরাবো, রাবান, কুরাইতলী সহ প্রায় ৯টি গ্রাম। এই এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের রাবান এলাকার কানাইলাল জিউর মন্দিরে প্রতি পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহে মাসব্যাপী রাধা কৃষ্ণের লীলা কীর্তন শুরু হয়। মাসব্যাপী কীর্তন শেষে রাধা কৃষ্ণের যুগলবন্দীর দিনে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
মেলা থেকে আশপাশের গ্রামের জামাইরা বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। এ কারণে মেলার সময় আশপাশের গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। এটা মাছের মেলা হলেও সম্প্রতি এটি জামাই মেলা নামে পরিচিত। কাক ডাকা ভোর থেকে দশটা পর্যন্ত চলে মাছ কেনা-বেচার ধুম। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ বিক্রেতা বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন মেলায়। এ নিয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও হয় বড় মাছ কেনা বেচার।
অপরদিকে স্থানীয় জামাই-শ্বশুরদের মধ্যেও বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা চলে। মেলায় নিজ এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তবৃন্দরা ছুটে আসেন মাছ কিনতে, আবার কেউ আসেন মাছ দেখতে। মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘা, আইড়, বোয়াল, রুই, কাতল, কালী বাউশ, সাহস, গলদা চিংড়ি ও রূপচাঁদাসহ হরেক রকম মাছ পাওয়া যায়। মেলায় বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ।
মাছ বিক্রেতারা নানা সুর ধরে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ উপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এটি এক সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা হলেও সময়ের সাথে সাথে এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়।
স্থানীয়দের মধ্যে মিল্টন রায়, শুরুতে মেলাটি ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠিত হতো । এখন এটি উৎসবে পরিণত হয়ে তিন দিন হয়। এটি এক সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা হলেও বর্তমানে এ মেলাটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। এখানে শুধু মাছ নয়, বস্ত্র, হস্ত, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজসপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যও পাওয়া যায়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রদিপ রায় জানান, মেলাকে ঘিরে আশপাশের মানুষ ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে বহু লোকের সমাগম ঘটে। যার ফলে এখানে সকল ধর্মের লোকজন নিজেদের ধর্মের ব্যবধান ভুলে গিয়ে এক মহা মিলন মেলায় পরিণত হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাজুড়ে এ মেলা স্থানীয়দের জন্য একটি উৎসবের আমেজ। একে অপরের বাড়িতে বেড়ানো আর খোঁজ-খবরের মধ্যে দিয়ে চলে কুশল বিনিময়। আর দেখা মেলে সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন।