উনিশে পদার্পণ উপলক্ষে নকশীকাঁথা’র আয়োজন
উনিশ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এক শুভেচ্ছা বিনিময় ও গানের অনুষ্ঠান করেছে ‘নকশীকাঁথা’ ব্যান্ড। ২৬ জানুয়ারি রোববার বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তীতুল্য ব্যক্তিত্ব নকীব খানসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, বিভিন্ন পর্যায়ের সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও সংগীত-সংশ্লিষ্ট মানুষেরা। তারা নকশীকাঁথা ব্যান্ডকে শুভেচ্ছা জানান এবং ব্যান্ডটির দীর্ঘ পথচলা অব্যাহত রাখতে সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে ব্যান্ডের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ব্রিফিং করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নকশীকাঁথা ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকালিস্ট ও দলপ্রধান সাজেদ ফাতেমী। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের প্রথম দিক থেকেই ব্যান্ড গঠনের কাজ চলছিল। অবশেষে ২০০৭ এর ২৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নদী, বৃক্ষ, খেলার মাঠ ও পরিবেশ বাঁচানোসহ নানান সামাজিক সংকটের বিরুদ্ধে গানে গানে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করে আসছে নকশীকাঁথা। সব গানেরই মূলে রয়েছে লোকজ সুর। তিনি বলেন, ব্যান্ডের মৌলিক গানের প্রথম অ্যালবাম ‘নজর রাখিস’ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘নকশীকাঁথার গান’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। দুটো অ্যালবামে ১৩টিসহ এ পর্যন্ত নকশীকাঁথার প্রকাশিত মৌলিক গানের সংখ্যা ৫৭টি। মঞ্চ থেকে তিনি ব্যান্ডের সব সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন জে আর সুমন, বুুলবুল সাহা, ফয়সাল আদনান, মাহবুবুল আলম সোহেল, মনোজ কুমার মন্ডল ও পলাশ নন্দী। সদস্যরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
সাজেদ ফাতেমী বলেন, এ দেশে বিচিত্র ধরনের লোকগান আছে। গানগুলোর অধিকাংশই আজ বিলুপ্তির পথে। নকশীকাঁথা সেই বিলুপ্তপ্রায় ধারাগুলো থেকে কিছু কিছু ধারা ফিরিয়ে এনে আরও আকর্ষণীয়রূপে সেগুলো পরিবেশন করছে। লোকগানের সঙ্গে এদেশের মানুষের নাড়ির বন্ধন রচিত হয়েছে বহু আগেই। অধিকাংশ মানুষেরই প্রাণের এই গান নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। এই আগ্রহটুকুই হলো নকশীকাঁথার ভরসা। কারণ নকশীকাঁথার প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে রয়েছে অফুরান ভালোবাসা ও প্রাণশক্তি। সেই ভালোবাসা দেশের জন্য। বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে থাকা লোকগানের জন্য। সেই ভালোবাসার বিনি সূতো দিয়ে মনের গহীনে থাকা সুপ্ত বাসনাগুলোকে ক্রমশ বুনন করে চলেছে নকশীকাঁথা।
নকীব খান বলেন, ‘দেশের নানান সামাজিক সংকটকে এভাবে গানে গানে প্রকাশের ক্ষেত্রে নকশীকাঁথা দারুণ কাজ করছে। সংকটগুলোকে এভাবে লোকজ সুরের মধ্য দিয়ে তুলে আনার এই প্রয়াস আমাকে অভিভূত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেনেসাঁ ব্যান্ডের জন্মও কিন্তু এমনই এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। আমরা আমাদের অনেক গানে মানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলেছি। যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। শিশুদের একটি নির্মল সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়ার কথা বলেছি। তবে আমাদের গানগুলো তৈরির ক্ষেত্রে আমরা মেলোডিকে প্রাধান্য দিয়েছি। আর নকশীকাঁথার প্রধান ভিত্তি হলো লোকজ সুর। এটা সত্যিই অনবদ্য’।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবামের ‘নজর রাখিস’ শিরোনামে গানটির ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এরপর কেক কেটে নকশীকাঁথা ব্যান্ডকে শুভেচ্ছা জানান নকীব খান। শেষ পর্বে গান গেয়ে শোনান নকশীকাঁথার সদস্যরা। তাদের সঙ্গে গান করেন এ প্রজন্মের শিল্পী রোদসী। রেনেসাঁ ব্যান্ডের ছয়টি গান গেয়ে অনুষ্ঠানকে আরও রাঙিয়ে তোলেন নকীব খান। গানের ফাঁকে ফাঁকে গানগুলো তৈরির গল্প বলেন তিনি। চিরকালের চেনা এসব গান ও গানের গল্পগুলো দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে পুরোটা সময়। সেইসঙ্গে নকশীকাঁথাকে ঋদ্ধ করে গেলেন নকীব খান।