এর চাইতেও আরও ভালো কিছু হয়তো করতে পারতাম: সাদ

  • রুদ্র হক, বৃষ্টি শেখ খাদিজা, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, ছবি: মেহেদী হাসান রানা

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, ছবি: মেহেদী হাসান রানা

নিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ দিয়েই সমালোচকদের নজর কেড়েছিলেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। দ্বিতীয় চলচ্চিত্রে নিজেকে ছাপিয়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রের আসরে বাংলাদেশকে পরিচিত করিয়েছেন অনন্য মর্যাদায়। কান থেকে অ্যাপসা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ কুড়িয়েছে প্রশংসা আর সম্মানের ফুলঝড়ি। চলচ্চিত্রটি দেশের পর্দায় মুক্তির আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন নিভৃতচারি এ নির্মাতা। বার্তা ২৪.কমের কিছু প্রশ্নের মুখোমুখিও হয়েছিলেন তিনি। 

কখন মনে হল, আপনি আসলে চলচ্চিত্রই  নির্মাণ করতে চান? 

ফিল্ম মেকিংয়ের চিন্তাটি কিভাবে যেন মাথা চলে আসে, এমন নয় যে ছোটবেলা থেকেই আমার ছবি নির্মাণের স্বপ্ন ছিল বা আমার বাসাতে সে রকম কোন আবহ ছিল। কিন্তু কীভাবে যেনো ফিল্ম মেকিংয়ে ঢুকে পড়লাম তা আমি নিজেও জানি না। অন্য কিছু হতে চেয়েছিলাম।

অন্য কিছুটা কী, জানতে পারি?
মিউজিশিয়ান হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।

বিজ্ঞাপন

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমাটি আপনার মাথায় কী করে এলো?
খুব সাধারণ মনে হলেও এটি কিন্তু খুব জটিল একটি প্রশ্ন। আমি জানি না কিভাবে এর বর্ণনা দেবো। মজার বিষয় হল- আমি আমার এই ছবিটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম ২০১৭ সালের শুরুতে। সেটি নিয়ে পাঁচ মাস কাজ করার পর, আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার এই সম্পর্কে কোন জানাশোনা নেই, চরিত্রটিও খুঁজি পাচ্ছিলাম না ঠিকঠাক। বিষয়টি যখন বুঝতে পারলাম তখন আমার মনে হয়েছে- এটা এখন করা উচিত হবে না। এরপর আসলে আমি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ নিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করি। যদিও ‘রেহানা’ নিয়ে আমি আরও আগে থেকেই চিন্তা করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, সে সময়- চরিত্রটা কোন দিকে যাচ্ছে। তাই আমি আমার প্রথম ছবির কাজ নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকি। পরে যখন আমি ‘রেহানা’কে ঠিকঠাক বুঝতে পারি তখন ‘রেহানা মরিয়মন নূর’ নিয়ে মনোযোগী হই।

এই চরিত্রটির সঙ্গে কি আপনার ব্যক্তিজীবনের কোন সংযোগ আছে?
আমার দুটি বড় বোন আছে। আমি তাদের ট্রান্সফরেমেশনটি কাছ থেকেই দেখেছি। তাদের লাইফের প্রতিটা জার্নি আমার কাছ থেকে দেখা। যা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সে অনুভূতি থেকেই আমি সবসময় কিছু না কিছু করতে চেয়েছিলাম। বলতে পারেন, সেখান থেকেই রেহানার জার্নিটা শুরু।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এ বাঁধনকে নেওয়ার কারণ কী?
আজমেরী হক বাঁধনের কথা- আমাকে সবার আগে বলেছিলেন আমাদের কাস্টিং ডিরেক্টর। আমি জানি না কীভাবে বোঝাবো। আমি যখন ওর সঙ্গে প্রথমবার দেখা করি, সেসময় ওর মধ্যে কিছু একটা আছে বলে আমার মনে হয়েছিল। আমি যখন ওর সঙ্গে ছবিটি নিয়ে আলোচনায় বসি তখন আমার এটি মনে হয়েছে, সে এই চরিত্রটির জন্য সেরা। তাছাড়া ছবিটির লুক টেস্টের সময় আমাদের কস্টিউম ডিজাইনারের তৈরি করা কস্টিউমে প্রথম যখন দেখি, তখন তাকে দারুণ মানিয়েছিলো তাতে। আমরা যেমনটি চেয়েছিলাম তেমনটিই তাকে লেগেছে। এছাড়াও শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম ও আমাদের পাত্তা দেবে কিনা কিন্তু ওর সঙ্গে কয়েকবার দেখা করার পর আমাদের সেই ভুলও ভেঙে গিয়েছিল।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ তৈরির পর কী কোন কিছুতে অতৃপ্তি রয়েছে?
আসলে বলে শেষ করা যাবে না সেসব অতৃপ্তির কথা। ছবিটি বানানোর পর মনে হয়েছে- এর চাইতেও আরও ভালো কিছু হয়তো করতে পারতাম। ধরে ধরে বললে, অনেক লম্বা লিস্ট হয়ে যাবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার কাজ নিয়ে অনেক গর্বিত। কেননা, আমি আমার জায়গা থেকে সেরাটাই উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। হয়তো আরেকটু ভালো হতে পারতো। কিন্তু এই আফসোসের শেষ আসলে হবে না। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে আমি হয়তো আরও ভালো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরণের চলচ্চিত্রে অর্থায়নের ক্ষেত্রে কোন চ্যালেঞ্জ দেখেন কিনা?
আমি যে ছবিটি বানাতে চাই ওই ছবিতে ফাইন্যান্স করার মতো সিচ্যুয়েশন টা হয়তো নেই, সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। আমার কাছে মনে হয় আমি আমার স্ক্রিপ্টটি নিয়ে কোন ফাইনান্সারের কাছে গিয়ে বললে তারা না করবে। তবু, আমাদের ছবি বানাতে হলে, আমাদের নিজেদের মতো একটা রাস্তা বের করতে হয়। আমার ক্ষেত্রে, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার এমন কয়েকজন মারাত্মক বন্ধু আছেন যারা সবসময় আমাকে সাহায্য করেছে। আমার ভাগ্য ভালো যে, আমি বন্ধুগুলোকে পেয়েছি। টিম মেম্বার থেকে শুরু করে সকলেই আমাকে সাহায্য করেছে। যার জন্য হয়তো আমি এই ছবিটি নির্মাণ করতে পেরেছি।


‘লাইফ ফ্রম ঢাকা’তে আমরা দেখেছি চলচ্চিত্রটি সাদা কালো-তে করা, এই ছবিটিতে নীল রঙের ব্যাবহারের আধিক্য। এর কারণটা কি?
প্রোডাকশন ডিজাইন নিয়ে আমার টিম মেম্বারদের সঙ্গে বারবার আলোচনায় করেছিলাম। আমি চাইছিলাম কিভাবে রেহানার ভেতরটা আমি উপস্থাপন করবো দর্শকের কাছে। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, কালারটি এমন একটা টোনে থাকলে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করতে পারবে। আর ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ চলচ্চিত্রটি সাদা-কালোয় করার কারণ হচ্ছে-আমি সত্যিকার অর্থে ঢাকাকে যেভাবে দেখি তা সাদা-কালো। আমি যখনই ঢাকাকে মনের চোখ দিয়ে অনুভব করেছি তা ছিলো, সাদা-কালো। তবে, পুরো সিনেমাই সাদা-কালোতে করার পেছনে বাজেট একটা বড় কারণ ছিলো।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’-চরিত্রটির কস্টিউম নিয়ে আপনার বিবেচনা কী? আমরা দেখেছি চরিত্রের মাথায় হিজাব পরা..
এটি আসলে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে করা। আমি আমার আপুদের দেখেছি তারা সবসময় স্কার্ফ পরতেন। তাই ওই অনুভূতিটা আমি ক্যামেরায় বন্দী করতে চেয়েছি। তবে কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক জায়গা থেকে হিসেব কষে নেয়া সিদ্ধান্ত আসলে এটি না।

জনসম্মুখে নিজের উপস্থিতি নিয়ে আপনার মাঝে কিছু অস্বস্তি আছে। প্রথম দুই চলচ্চিত্রেই উৎসব আর প্রাপ্তি মিলে দারুণ হৈচৈ পড়ে গেলো, কিছুটা চাপ অনুভব করছেন কিনা?
হ্যাঁ, একটু প্রেশার হয়ে গেছে। তবে, আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি কেউ যেন অন্যভাবে বিষয়টি না নেন। আমি আসলে একটু এমনই।

নতুন সিনেমা নিয়ে কী ভাবছেন?
এই মুহূর্তে আমি নতুন ক্যারেক্টার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি।