জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আরও ছয়টি মরদেহের সন্ধান মিলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এর মধ্যে একজন নারী আর বাকিগুলো পুরুষ।
পুরুষ মরদেহগুলোর বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। আর অজ্ঞাতনামা নারীর বয়স ৩২।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল ঢামেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। ৫ জনের মৃত্যু আঘাতজনিত কারণে এবং একজনের মৃত্যু ওপর থেকে পড়ে হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষ সেলের সেল সম্পাদক হাসান ইনাম বলেন, "রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া অসনাক্তকৃত ৬টি মরদেহ আছে বলে জানতে পারি। আজ সকালে সেলের একটি টিম বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে শাহবাগ থানায় গমন করে। থানার ওসি খালিদ মনসুর ৬টি মরদেহ হিমাগারে আছে বলে নিশ্চিত করেন।"
তিনি বলেন, "বিশেষ টিম সেখানে গিয়ে সরেজমিনে মরদেহগুলো পরিদর্শন করে। ৫ জনের মৃত্যু আঘাতজনিত কারণে হয়েছে বলে জানা গেছে। একজনের মৃত্যুর কারণে উল্লেখ করা হয়েছে ওপর থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু। মরদেহগুলোর ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। পরিণত আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো নিশ্চিত করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
শাহবাগ থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মরদেহগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। অর্থাৎ আমরা ধরে নিচ্ছি তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ। তবে মরদেহগুলো কত তারিখে সেখানে আনা হয়েছে সে বিষয়ে এখনও তারা স্পষ্ট করেনি।"
উল্লিখিত বয়সের কেউ যদি মিসিং হয় তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিশেষ সেলের (01621324187) এই নাম্বারে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনের দাবিতে গণ অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি শুরু করবেন শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও অস্থায়ী আবাসন নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
গত বছরের নভেম্বরে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরসহ তিন দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরে বাধা নেই। এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে মন্ত্রণালয়। তবে দুই মাস পেরোলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন একেএম রাকিব বলেন, মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের পর আমরা আমাদের নতুন প্রশাসনে একটা যৌক্তিক সময় দিয়েছিলাম। কিন্ত এতোদিন পার হলেও আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি। পুনরায় তারা আবার চিঠি চালাচালির বিষয়টি দেখাচ্ছে। এজন্য আমরা অনশনের ঘোষণা করেছি। যতদিন না দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের চুক্তি হয়, আমরা আমরণ অনশনে থাকবো।
আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরের জন্য আমরা যখন সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম গত ১২ নভেম্বর। দুই মাস পার হলেও আমরা কোনো দৃশ্যমান অগ্রগ্রতি পাইনি। প্রশাসন ও সচিবালয় থেকে আমাদের কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি। এজন্য আমরা অনশনের মত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাতভর দোকানপাট খোলা থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ১২ টার মধ্যেই প্রক্টরিয়াল বডির নির্দেশে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফলে মাঝরাতে কোনো জরুরি প্রয়োজন মেটাতে শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয় পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজারের উপর। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এর আগে ১৪০তম প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাধারণ সভায় ছাত্র ও ছাত্রীদের হলে রাতে প্রবেশের সময় নির্ধারণ প্রসঙ্গে সান্ধ্য আইনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে ছাত্রদের রাত ১১টার মধ্যে হলে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না করে কেবল মৌখিক নির্দেশ দিয়ে রাত ১২টার মধ্যে দোকান বন্ধের বিষয়ে একাধিক প্রমাণ রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এমন কোনো নিয়ম থাকতে পারে না। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন নেই, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নেই শিক্ষার্থীদের জন্য, সেখানে রাত ১২টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এর ফলে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়টি নেতিবাচকভাবে ব্র্যান্ডিং হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক গ্রুপ ইবিয়ান-পরিবারে বাঁধন নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, প্রশাসন সুন্দর একটি নাটক শুরু করেছে। শীতকালীন বন্ধের সময় প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল যে, ছেলেদের হলের গেইট রাত ১১.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং মেয়ের হলের গেইট মাগরিব নামাজের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত খোলা থাকবে। পরবর্তীতে জনরোষের কারণে সিদ্ধান্তে বদল এনেছিল। আবার এখন নতুন নিয়ম তৈরি করেছে যে, ক্যাম্পাসের দোকানগুলো রাত ১২.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কিন্তু এই বিষয়ে এখনও প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। তার মানে পরোক্ষভাবে প্রশাসন আগের বাতিল নিয়মটি চালু করার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু সেটা কোনোদিনও সম্ভব নয়। সবাই তার নিজস্ব স্বাধীনতা অনুযায়ী চলবে। প্রশাসনকে রাত ১২.০০ টা পর্যন্ত দোকানগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত সময়ের বাতিল করার দাবি করছি।
সাইফুল ইসলাম নামের অন্য একজন লিখেন, নতুন নাটক আবার শুরু হলো! রাত ১২ টার পরে ক্যাম্পাসের দোকান বন্ধ করে দিলো। বলছি দাদা তাহলে ক্যান্টিন চালু রাখেন সারারাত, ঐ হ্যাডম তো নাই। রাত ১১ টায় হল বন্ধ করতে না পারায় কি এমন নাটক শুরু হলো? ৭:৩০-৮:০০ টার দিকে ভাত খাওয়ার পরে মঝরাতে যে ক্ষুধা লাগে এখন কী খাব?
উসামাহ বিন হাশেম নামের অন্য একজন বলেন, রাত ১২টার পর ক্যাম্পাসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ইবি। এরপর নোটিশ আসবে রাত ১২টার পর সব গেইট অফ। এভাবে আর কী কী পদক্ষেপ নিলে আমরা আন্তর্জাতিক মানে সহজে পৌঁছে যেতে পারি?
এ বিষয়ে কথা হয় একাধিক দোকানদারের সাথে। তারা জানান, আগে প্রক্টরিয়াল বডি কখনো রাতে দোকান বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিতো না। তবে এই ছুটির পর থেকে রাত ১২টা বাজার ১০ মিনিট আগেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতে নির্দেশ দেন তারা। দোকানিরা আরও বলেন, রাতে অনেকেই আসতো আগে। বসে চা-নাস্তা করে যে যখন ইচ্ছা যেতো। তবে এখন রাত ১২টার পর ছাত্রদের আর এই সুযোগ নেই।
দোকান বন্ধের নির্দেশ দেয়া কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ আশরাফ এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, এইটা মূলত ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য শীতকালীন সময়ে রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এটা মৌখিক নির্দেশ, শীতকালীন সময়ের জন্য। আমরা কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করি নি। তীব্র শীতের জন্যই এটা করা।
হলের সিট বণ্টনকে কেন্দ্র করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ইতিহাস ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে হাসপাতালে অহত করার অভিযোগ উঠেছে।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ সারাক্ষণের বেরোবি প্রতিনিধি ও বেরোবির ইয়ুথ জার্নালিস্টস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব আকতার সাকিব বিষয়টি মীমাংসা করতে গেলে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮ টায় প্রধান ফটকের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেরোবির বঙ্গবন্ধু হলে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল সুমনের সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী শুভর সঙ্গে সিট পুনঃবণ্টন নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে প্রথমে হলে বাগবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে বিষয়টি মীমাংসা করতে গিয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব গুরুতর আহত হন। তাকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষ লাঠি ও ইটপাটকেল একে অপরের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষ চালিয়ে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বডি ও ছাত্র উপদেষ্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
আহত সাংবাদিক সোহেব আকতার সাকিব বলেন, এই বিষয়টার মীমাংসা করতে গেলে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন ও হামলা করে। হামলাকারীরা হলেন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন বিভাগের সাইদ, সবুজ, শুভ, পলাশ, রানা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। জড়িতদের মধ্যে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।