জাবিতে আন্দোলন দমাতে প্রশাসনের ‘প্রোপাগান্ডা’ তত্ত্ব!
দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তাদের আন্দোলনের সঙ্গে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশও। তবে তাদের দাবি, 'যৌক্তিক' আন্দোলন দমনে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রোপাগান্ডা’ তত্ত্বের কৌশল নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত (২২ অক্টোবর) রাতে সাদ শরীফ ও নুরুল আমিন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, তারা আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার ‘ষড়যন্ত্র’ করছিলেন। তবে আটক দুই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসলে কয়েকজন শিক্ষক তাদের মোটরসাইকেল থামিয়ে আটক করেন।
আটককৃত সাবেক দুই শিক্ষার্থীদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেছে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক তসলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আটককৃতদের শিবির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে সাদ শরীফ অন্য কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।’
এদিকে, আন্দোলনকারীদের দাবি, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিবির আখ্যা দিয়ে চলমান আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশেষ করে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে বিভিন্ন অডিও ও স্ক্রিনশট তৈরি করা হচ্ছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হলে আন্দোলনকারীদের শিবির আখ্যা দেওয়া হয়। তবে এই কৌশল শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
তারা আরও দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সদ্য সাবেক প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বিভাগের দুই ছাত্রের মাধ্যমে 'শিবির নাটক' সাজিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে 'যৌক্তিক' আন্দোলন বানচালের চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আন্দোলনকারীদেরকে মোকাবিলায় ‘অপকৌশল’ অবলম্বনের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমানোর এটা একটা পুরনো কৌশল। যৌক্তিক আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে প্রশাসনের হাতে যখন আর কোনো যুক্তি থাকে না, তখন অবধারিতভাবে রাষ্ট্রীয় প্রকল্পগুলো হাতে নেয়। অর্থাৎ তাকে জামায়াত শিবির এবং স্বাধীনতাবিরোধী বানানো হয়। কারণ এর আগে অনেকে এই তত্ত্ব ব্যবহার করে সফল হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সভা, সমাবেশ ও প্রতিবাদ জানানো দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এগুলো এমন নয় যে, কেউ গায়ের জোরে করছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নূন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আপনি আপনার মতো স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবেন। সেটাকে বন্ধ করার জন্য এ ধরনের অপপ্রচার ও বিভিন্ন অপকৌশল ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই চর্চাগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।’
আন্দোলনের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আন্দোলন দমাতে কাউকে শিবির বলা বা স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ দেওয়া ক্ষমতাসীনদের পুরনো অপকৌশল। আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতেই শিবির নাটক সাজানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্রকে শিবির বানানো হলো। সাবেক ছাত্রদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জনের যোগাযোগ থাকতেই পারে কিন্তু এর দ্বারা প্রমাণ হয় না, তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোট, বাম, আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সমন্বয়ে। কার কী পরিচয় কিংবা কে শিবির করে সেটা বের হলেই প্রমাণ হয়ে যায় না যে, ফারজানা ইসলাম দুর্নীতি করেননি।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘কেউ শিবিরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে তাদের আন্দোলনে রাখা হবে না। শিবিরের কোনো এজেন্ডা এই আন্দোলন থেকে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে পুলিশ বলবে।’