জাবিতে ভিসি-বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে নতুন সংগঠন!

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার | ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার | ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলন ‘ঠেকাতে’ নতুন ব্যানারে মাঠে নামছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একাধিক সূত্রে জানা যায় ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে উপাচার্যকে টিকিয়ে রাখতেই তারা মাঠে থাকবেন।

উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের’ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় নতুন সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ও পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কিত আলোচনা করা হয় বলে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক। এ ব্যানারে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদেরও যোগ করার পরিকল্পনার কথা জানান শিক্ষকরা।

বিজ্ঞাপন

উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারটি দাঁড় করাতে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন এবং মুখপাত্র হিসেবে রাখা হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহম্মদ আলমগীর কবীরকে। তাছাড়া এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপাচার্যের পক্ষে প্রচারণা চালাতে একটি পাবলিক গ্রুপ খোলা হয়েছে।

এদিকে সংগঠনটির পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিয়ে উপাচার্যের পক্ষে আন্দোলন করানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানাপন্থি গ্রুপকে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করেছে সংগঠনটি। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২টি সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষকদের ঘনিষ্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানোর পরিকল্পনার কথাও বলছে সূত্র।

বিজ্ঞাপন

এর আগে একনেকে পাস হওয়া ১৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পের শুরুতে ছয়টি হল নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যেখানে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডার ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে প্রকল্পের টাকা থেকে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে দুই কোটি টাকা ‘ঈদ সেলামি’ দেওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। যার সিংহভাগ পান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা। আর টাকা পাওয়ার জন্য ‘কৃতজ্ঞতা’ স্বরুপ উপাচার্যের প্রতি সমর্থন জানান জুয়েল রানা ও তার অনুসারীরা।

এদিকে উপাচার্যের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে মাঠে নামতে চান না অনেক উপাচার্যপন্থি শিক্ষকও। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে নানা মতভেদ। নতুন সংগঠনে ‘সদস্য’ হিসেবে মনোনীত হওয়া একজন জৈষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের ব্যক্তিগত পর্যায়ের দুর্নীতি কোন সংগঠন তার ভার বহন করতে পারে না। এটা নৈতিকতাবিরোধী। নতুন সংগঠনটি মূলত উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলি ঢাকার একটি আয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন সংগঠন খোলার বিষয়ে উপাচার্যের কাছের কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করেন। এ সময় কর্মচারীরা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের সাথে কথা বলতে আসলে আমরা (কর্মচারীরা) কিছু শর্ত জুড়ে দেই যে, আমরা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাব না। কিংবা কোন ব্যক্তির দুর্নীতির দায়ও নেব না। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের পক্ষে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যারয়ের উন্নয়ন হোক।

এ বিষয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারটির মুখপাত্র অধ্যাপক মোহম্মদ আলমগীর কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ সচল রাখতে নতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে আপাতত আমরা এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না। আগামীকালের সংবাদ সম্মেলনে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।

এদিকে উপচার্যপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে নতুন সংগঠন তৈরিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে বানচাল করা এবং উপচার্যের দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার উপায় হিসেবে দেখছেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা।

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, এই প্ল্যাটফর্মটা করার উদ্দেশ্য হলো তারা যে অন্যায় করছে সেগুলোকে ঢেকে দেওয়া। এরা সবাই উপাচর্যপন্থি এবং উপাচার্যপন্থি হওয়ার কারণেই তার দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারকে তারা সমর্থন দেবে, ফলে এটাকে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে দেখছি।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ন্যায়ের পক্ষে যেকোন ব্যানার কিংবা প্ল্যাটফরমকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তিগত কিংবা গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বৈরাচারী কায়দায় চালিত করতে সহায়তা করবে তা মানা কষ্টকর। আর উন্নয়ন বলতে যেন ব্যক্তিগত উন্নয়ন না বুঝে সর্বজনের উন্নয়ন বোঝানো হয়।