ভয়াল ১২ নভেম্বর, মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ভোলা

  • মোকাম্মেল মিশু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ভোলা

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ভোলা

আজ মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন। এদিন বাংলাদেশের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস গোর্কি। এই ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপকূল। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি, ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন বহু মানুষ।

১২ নভেম্বরের রাতে প্রলয়ংকরী গোর্কির তাণ্ডবে ভোলার সদর উপজেলা ছাড়াও দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর ও চর কুকরি-মুকরিসহ গোটা উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেই প্রলয়ংকরী তাণ্ডবে ভোলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। পরিণত হয় মানুষ আর গবাদিপশুর মরদেহের স্তূপে। সত্তরের সেই যন্ত্রণাময় স্মৃতি নিয়ে এখনো দিন কাটছে ভোলাবাসীর।

বিজ্ঞাপন

৭০-এর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ জাতীয় নেতারা ভোলায় এসে পাক সরকারের অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতা দেখে হতবাক হয়ে যান। ভোলাবাসী মনে করে ঘূর্ণিঝড় গোর্কি মোকাবিলায় তৎকালীন সরকারের উদাসীনতা দেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাপকভাবে তরান্বিত করেছে। বর্তমানে দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণকে সত্তরের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন করা হলেও এখনো সংকেত দেখলে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন সত্তরের প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সেই ভয়াল রাতকে স্মরণ করে ভোলার লালমোহনের বাসিন্দা মো. নজির আহাম্মদ বলেন, ‘যারা সত্তরের বন্যা দেখেনি তারা এত কিছু অনুমান করতে পারবে না। সত্তরের কথা মনে পড়লে এখনো অনেক ভয় লাগে, আতঙ্কিত হয়ে যাই। সেদিনের বিভীষিকাময় দিনের কথা কোনোদিন ভুলতে পারব না। যেদিকে চোখ গেছে শুধু মানুষের লাশ আর লাশ দেখতে পেয়েছি। মানুষের লাশ কচুরিপানার মতো ভাসতে দেখেছি।’

আরেকজন আব্দুল কাদের বলেন, ‘সত্তর সালেতো এত প্রচার-প্রচারণা ছিল না। এখন তো সংকেত হলেই প্রচার আরম্ভ হইয়া যায়। এখন রেড ক্রিসেন্ট আছে, সিপিপি আছে। আরও অনেক সামাজিক সংগঠন আছে। একটু ঝড় বৃষ্টি হলে সেদিনের কথা মনে পড়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকি। সেদিন যেন আর না আসে ভোলাবাসীর জীবনে।’

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ভোলার প্রশাসনের সক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া অনেক সেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। তাই সত্তর সালের মতো এখন আর এত বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

দ্বীপজেলা ভোলার অর্ধ শতাধিক চরাঞ্চলের তিন লক্ষাধিক মানুষ চরম ঝুঁকিতে অবস্থান করছে। সেখানে নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। যেগুলো আছে সেগুলোর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিছু কিছু সাইক্লোন শেল্টার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মানুষ সেগুলোতে যেতে চায় না। তবে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক বনায়ন করা হয়েছে। যার ফলে যেকোনো দুর্যোগ আসলে এসব বনায়নের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কিছু কম হচ্ছে। এছাড়া এসব চরে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি জানান ভোলাবাসী।