সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প-গুজব রয়েছে। এরশাদ তার জীবনী গ্রন্থ ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ এ তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
সব চেয়ে বড় মেয়ে মাহজাবিন (জেবিন)। দেশে লেখাপড়ার পর লন্ডনে গিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। বিয়ে করে বর্তমানে লন্ডনেই অবস্থান করছেন তিনি। মেয়ে সাবিতা ও ছেলে নিকো জলিকে নিয়ে জেবিনের ছোট্ট সংসার। তবে জেবিনের মায়ের নাম উল্লেখ করেননি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
আর এরশাদের ছেলেদের মধ্যে সবার বড় রাহগীর আল মাহি সাধ এরশাদ। জন্ম হয় ১৯৮৩ সালে।
সাধ প্রথমে আমেরিকান স্কুলে লেখাপড়া করেন। গ্রাজুয়েশন শেষে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ব্যবসা করছেন। ১৯৯০ সালে এরশাদের সঙ্গে জেবিন ও সাধকেও আটক করা হয়েছিল। আড়াই বছর পর হাজত থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তারা। গ্রন্থে আলম নামে আরেক পুত্রের নাম উল্লেখ করেছেন এরশাদ।
আলম সম্পর্কে বলেছেন, ‘সে আমার ঠিক ঔরসজাত সন্তান নয়, তবে তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।’
এরিক হচ্ছেন এরশাদের কনিষ্ঠ সন্তান। বিদিশার গর্ভে তার জন্ম হয়েছে ২০০১ সালের ১১ মার্চ। বিদিশা-এরশাদের বিচ্ছেদ হলে এরিক বিদিশার কাছেই বেড়ে ওঠেন।
এরিক সম্পর্কে জীবনী গ্রন্থে এরশাদ লিখেছেন, ‘স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীতকে বেছে নিয়েছেন জীবনের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে। আধুনিক, রবীন্দ্র, নজরুল সবই প্রিয়। মান্নাদের গান গাইতে খুব পছন্দ করে। মা ছাড়া একজন সন্তানকে মানুষ করে তোলা যে কী কষ্টের, তা আমি তাকে দিয়েই উপলব্ধি করেছি। দিনে-রাতে বেশিরভাগ সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ও আমার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ধর্ম-কর্মও ও মোটেই অবহেলা করে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।’
এরশাদ তার ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি জমি অনেক আগেই এতিমদের নামে লিখে দিয়েছেন। অবশিষ্ট সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে লিখে দিয়েছেন। যে ট্রাস্ট থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এরিকের ভরণপোষণ করা হবে। এরপর অবশিষ্ট অর্থ সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। এরিকের পরবর্তী প্রজন্মও একইভাবে সুবিধা ভোগ করবেন।
এ ট্রাস্টের নামে রয়েছে ১৫ কোটি টাকার এফডিআর, রংপুরের পদাগঞ্জে অবস্থিত পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজ, বারিধারার ফ্ল্যাট (প্রেসিডেন্ট পার্ক, যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন), গুলশানের ফ্ল্যাট, বনানী বিদ্যানিকেতনের বিপরীতে অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট, বনানী ইউআই শপিং কমপ্লেক্সের দু’টি দোকান, রংপুর শহরে ৬৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাসভবন (পল্লীনিবাস) ও নিজের নামে কেনা পাঁচটি গাড়ি।
জীবনীতে তিন ছেলে এক মেয়ে উল্লেখ করলেও তাদের কোনো শর্ত রাখা হয়নি ট্রাস্টে। এ বিষয়ে এরশাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ওই ছেলে মেয়েদের তিনি প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। আর সাধের মা রওশন এরশাদের রয়েছে অঢেল সম্পদ। যা তিনি উত্তরাধীকার সূত্রেই পাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় এরশাদের তুলনায় রওশনের সম্পদ বেশি দেখা গেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ২৬ জুন থেকেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার রোগ মুক্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।